ইভ্যালির টাকা কোথায় গেল? কোন নগদ মুলধন ছাড়া কিভাবে চলছে?

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে অগ্রিম যে পরিমাণ টাকা নিয়েছে তার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইভ্যালি মানুষের কাছ থেকে যে পরিমাণ টাকা নিয়েছে, তার মোট অঙ্ক প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে তাদের কাছে সেই টাকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করে। তদন্ত শেষে গ্রাহকদের ও সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে নেয়া টাকার খুব সামান্য অংশের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সেজন্যই প্রশ্ন উঠেছে, এই বিশাল দায় কীভাবে তারা শোধ করবে?’

ইভ্যালি এর মধ্যে যে পরিমাণ টাকা গ্রাহক ও ব্যবসায়িক পার্টনারদের কাছ থেকে নিয়েছে, তা ফেরৎ পাওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের ফান্ড কোথায় রেখেছে, অন্য কোনো উৎস আছে কিনা সেটা তদন্তের পর জানা যাবে। তবে এখন সেই পরিমাণ টাকার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।’

আসুন জেনে নেয়া যাক- ইভ্যালির টাকা কোথায় গেল? কোন নগদ মুলধন ছাড়া কিভাবে চলছে? চলুন কয়েকটি ছোট অংক করে আসি।

(১) পণ্য ক্রয় মূল্যঃ ১০০/-
ক্রয়ের উপর কমিশনঃ ২০/-
পণ্য বিক্রয় মূল্যঃ ৭০/-
পণ্য সরবরাহ খরচঃ ২/-
প্রতি ৭০/- মূল্যের বিপরীতে মোট খরচ হলো ৮২/-(১০০-২০+২)। ১২/- অতিরিক্ত খরচ দেনা হিসাবে রাখা আছে হয় ক্রেতাকে পণ্য দেওয়া বাকি আছে নয়তো বিক্রেতার কাছে দেনা আছে। কেও টাকা খেয়ে ফেলেনি।

(২) পণ ক্রয় মূল্যঃ ১০০/-
ক্রয়ের উপর কমিশনঃ ২০/-
পণ্য বিক্রয় মূল্যঃ ৭০/-
পণ্য সরবরাহ খরচঃ ২/-
সম্পদ ক্রয়ঃ ৫/-

এবার অংক নং (১) এর থেকে ৫/- টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে সম্পদ ক্রয়ে। সুতরাং এবার ১৭/- দেনা (১২+৫) আছে হয় ক্রেতার পণ্যতে নয়তো বিক্রেতার নিকট বাকি। এভাবে cumulatively দেনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেও নিজের পকেটে টাকা লুকিয়ে রাখেনি। 

এবার আসি মূল প্রশ্নের উত্তরে, এই দেনার শেষ কথায়? উত্তরঃ ইভ্যালির ব্র‍্যান্ড ভ্যালু।
১. ইভ্যালি ৮০ লক্ষ+রেজিস্টার্ড গ্রাহকের প্ল্যাটফর্ম। 
২. ২৫,০০০+ সেলার রেজিস্টার্ড এই প্ল্যাটফর্মেই।
৩. ই-ফুড, ই-খাতা, ই-জবস, ই-হেলথ সহ ৮টি আলাদা প্ল্যাটফর্ম ১ম অথবা ২য় অবস্থানে বাংলাদেশ এ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অবস্থান করছে।
৪. ফ্লাইট এক্সপার্টকে একুওয়ার করেছে ইভ্যালি।
এই ব্র‍্যান্ড ভ্যালু বাংলাদেশের গতানুগতিক আর্থিক বিবরণিতে দেখানো যায় না, যার জন্য সম্পদ অতিরিক্ত দেনা দেখায় ইভ্যালি এর আর্থিক বিবরণিতে। 

এবার, আপনারা যদি মনে করেন ফেসবুক অথবা আলিবাবার যে ভ্যালু স্টক মার্কেটে দেখাচ্ছে ঐ পরিমাণ অর্থ দিয়ে আপনি কোম্পানি কিনে নিতে পারবেন তাহলে আমার হাহা রিয়েক্ট দেওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই।

ইভ্যালির ব্র‍্যান্ড ভ্যালুর নিকট ৩-৪শত কোটি টাকা অতি নগন্য। এটাই ছিল পরিকল্পনা যে একটা সময় ৫১% শেয়ার রেখে বাকিটা বিক্রি করে এই দেনা শোধ করে বাংলাদেশ এর লিডিং ই-কমার্স হয়ে একটি পরিপূর্ণ অনলাইন ইকোসিস্টেম করবে ইভ্যালি। ভবিষ্যতে দেশের বাইরেও নিজেদের তুলে ধরবে।  আশা করি বুঝতে পেরেছেন ইভ্যালির উত্থান, ব্যবসায়িক মডেল, দেনা-পাওনা পরিশোধ পরিকল্পনা এবং মূল উদ্দেশ্য।

-সৈয়দ মেহেদী, ফেসবুক থেকে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //