‘কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পুরুষের তরবারি; প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষ্মী নারী।’-কাজী নজরুল ইসলাম।
নারী অদম্য শক্তির উৎস, এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে হয়। যুগে যুগে কালে কালে নারী তার পুরো শক্তি দিয়ে পুরুষের ঢাল হয়েছিল এবং আছে। তবে একটা সময় তাদের জীবন ছিল চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ। সময়ের পরিক্রমায় নারী একটু একটু করে এগিয়েছে। ছড়িয়েছে দ্যুতি। এখন তারা ঘর সামলানো থেকে শুরু করে দেশ শাসন পর্যন্ত করছে। জয় করছে পাহাড়-সমতল। রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন, গণমাধ্যম, শিক্ষা, সংস্কৃতি অঙ্গন, সাহিত্য, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য খাত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, ব্যাংক-বিমা এমনকি অনলাইন উদ্যোক্তা হিসেবেও সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছে নারী। একজন কর্মজীবী নারী সংসার-সন্তান সামলে সমানতালে কর্মক্ষেত্র সামলান। এর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে রাখেন পরিপাটি ও ফ্যাশনেবল। অর্থাৎ তিনি যেমন রাঁধেন, তেমনি চুলও বাঁধেন।
নারীর জন্য দিবস কেন: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন নিউইয়র্কের সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। ১৯১০ সালের ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। এরপর ১৯১৪ সাল থেকে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হয়। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের আগে থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
দিবসভিত্তিক সম্মান কতটা গুরুত্বপূর্ণ: উপস্থাপক ও গো-গার্লসের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া রিফাত জানান, নারীরা সমাজের উন্নয়ন ও পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারীর সম্মানে আলাদা দিবসের প্রয়োজন সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। নারী দিবসে অন্তত সামাজিক কিছু স্বীকৃতি নারীরা পান। তাই নারী দিবসকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। তবে শুধু এক দিনের জন্য নারীর প্রতি শ্রদ্ধা নয়, এটি নিয়মিত চর্চা করার দিকে আগাতে হবে। নারীদের সম্মানে সব স্তরের পুরুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
ফ্যাশনে-রুচিশীলতায়: নারী দিবসকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি মেতে ওঠে সৃজনশীলতায়। প্রতিবছর দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে আসে নিজস্ব চিন্তাধারা ও ভাবনার পোশাক। নারীরাও পছন্দের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, কুর্তা, টিউনিক বেছে নেন। এ বছর পোশাকের ব্র্যান্ড বিশ্বরঙ মেক্সিকান নারীবাদী চিত্রশিল্পী ফ্রিদা কাহলো ডি রিভেরার চিত্র কর্মকে স্থান দিয়েছে শাড়িতে। ফ্রিদা কাহলোর কাজে মেক্সিকোর সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বেশ গুরুত্ব পেয়েছে, যার কারণে তার চিত্রকর্ম কখনো কখনো অর্বাচীন শিল্প বা লোকশিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সামাজিক চেতনার ভাবনা থেকে বরাবরের মতো এবারও নারী দিবসের আয়োজন সাজিয়েছে কে-ক্র্যাফট। ফ্লোরাল, জ্যামিতিক ও মিক্সড মোটিফে তৈরি করা হয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ। এ ছাড়া রয়েছে ট্র্যাডিশনাল ও ফিউশনধর্মী প্যাটার্নে লং কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, টপস, টিউনিক ও কাফতান। পার্পেল, ল্যাভেন্ডার, কমলা, অফ হোয়াইট রঙের পোশাককে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পোশাকের ব্র্যান্ড রঙ বাংলাদেশও নিয়ে এসেছে নতুন পোশাক।
পোশাকে বেগুনি রং: বেগুনি রংকে আভিজাত্য, বিলাসিতা, শক্তি ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার রং হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া বেগুনি রং ধন, সৃজনশীলতা, প্রজ্ঞা, মর্যাদা, নিষ্ঠা, শান্তি, মহিমা, অহংকার, রহস্য, স্বাধীনতার অর্থও উপস্থাপন করে। কিন্তু এসব কারণে নারী দিবসের পোশাকে বেগুনি রংকে নির্বাচন করা হয়নি। বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত রং নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্যানটোন ২০১৮ সালে বেগুনিকে বর্ষসেরা রঙের খেতাব দেয়। এই বেগুনি চোখে দেখা বেগুনি রং নয়। এই বেগুনি হলো অতিবেগুনি রশ্মি। প্যানটোনের মতে, বেগুনি হলো মহাকাশের মতো অসীম এবং তা থেকে নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা। আর এ কারণেই প্যানটোনের ব্যাখ্যায় মুগ্ধ হয়ে বেগুনিকে নারী দিবসের রং হিসেবে বেছে নেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন কর্তৃপক্ষ।
নারীর প্রতি সম্মান শুধু একটি দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকুক। বরং সব পুরুষের উচিত ঘরে-বাইরে সব নারীকে সম্মান করা। কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপদ ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। পিছিয়ে পড়া এবং সব স্তরের নারীদের মধ্যে নারীর অধিকার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নে সহায়তা করা, নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এখন সময়ের দাবি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : বিজয়-লক্ষ্মী নারী আকলিমা আক্তার নারী দিবস
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh