কুকুর ‘আত্মহত্যা’ করে যে সেতু থেকে

স্কটল্যান্ডের ডাম্বার্টনের কাছে ছোট্ট একটি সেতু। গ্রামের এক লোক তার পোষা কুকুরটি নিয়ে সেতুটি অতিক্রম করছিলেন। হঠাৎ কেমন অস্থির হয়ে উঠল পোষা প্রাণীটি। তারপর সেতুর ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ল নিচে। ওই লোক নিচে নেমে দেখলেন তার প্রিয় কুকুরটি মারা গেছে।  

স্কটল্যান্ডের মিল্টন গ্রামের ওভারটাউন ব্রিজে উঠলেই কেন যেন পাল্টে যায় কুকুরদের আচরণ। অনেক ক্ষেত্রেই মালিক কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাফিয়ে পড়ে নিচে। সত্যি কি এ সেতুতে উঠলে আত্মহত্যার প্রবণতা পেয়ে বসে কুকুরদের?

আশ্চর্য এ রহস্যের শুরু সেই ১৯৫০-এর দশক থেকে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর দেওয়া তথ্য ঠিক হলে সেখানে এ পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি কুকুরের মৃত্যু ঘটেছে এভাবে। আহত হয়েছে বা অল্পের জন্য বেঁচে ফিরেছে ৬০০ কুকুর।

ব্রিজটি নির্মিত হয়েছিল ১৮০০ সালের দিকে। নির্মাণের সময় স্থানটি ছিল শান্ত ও নীরব। তিনটি বড় খিলানের মাধ্যমে নির্মিত এই সেতুটির চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে।  

তবে কোনো একসময় সেই শান্ত স্থান পেরোনোর সময় অদ্ভুত আচরণ শুরু হয় কুকুরের। প্রাণীগুলো ব্রিজের কাছে পৌঁছালেই তাদের আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করে, কখনো আবার স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর লাফ দিয়ে পড়ে যায় গভীর খাদের নিচে। 

অনেকে ভাবতে শুরু করল, এখানে কি কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তি কাজ করছে? কুসংস্কারাচ্ছন্ন স্থানীয়রা দাবি করলেন, ব্রিজে হোয়াইট লেডি নামের সাদা পোশাকের এক ভূত এমন কা- ঘটাচ্ছে। কেউ কেউ আবার অন্য কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তির ঘাড়ে দোষ চাপালেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এর ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। 

কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এই ঘটনাগুলোর পেছনে মিঙ্কের গন্ধ ভূমিকা রাখছে। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো মিঙ্ক বেজিজাতীয় একটি ছোট প্রাণী, যার গন্ধ কুকুরদের আকৃষ্ট করে। 

১৯৫০-এর দশকে এই প্রাণীটিকে আবার এই এলাকায় বিচরণ করতে দেখা যায়। গবেষকদের মতো এ প্রাণীগুলোর গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে কুকুরগুলো ব্রিজের কিনারা থেকে হঠাৎ লাফিয়ে পড়ে। 

তবে কোনো কোনো গবেষক আরো একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, গাছপালার মধ্যে থাকা গভীর খাঁজটি কুকুরেরা ঠিকমতো দেখতে পায় না। উচ্চতা নিয়ে ভুল ধারণা পায় তারা। ভাবে সামান্য নিচেই সমতল মাটি রয়েছে, কিন্তু যখন লাফিয়ে পড়ে তখন বিপদটি বুঝতে পারলেও আর কিছু করার থাকে না।

ওভারটাউন ব্রিজের রহস্য আজও পুরোপুরি সমাধান হয়নি। কেউ কেউ এখনো বিশ্বাস করে, কোনো অশুভ শক্তির প্রভাবে এ ঘটনা ঘটছে। তবে বিজ্ঞানীরা তা মানতে নারাজ। রহস্যের প্রতি মাত্রারিক্ত কৌতূহল থাকলে কখনো ইউরোপ গেলে আশা করি রহস্যময় এ সেতুটি দেখে আসার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না!

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh