শিশুকে শ্রদ্ধাবোধ শেখান

সোহেলী ও হিমেল প্রেম করে বিয়ে করেছেন। বিয়ের তিন বছরের মাথায় কোল আলো করে এসেছে ছোট্ট বাবলী। দু’জনেই চাকরি করেন। শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে বনিবনা হয় না তাই তারা আলাদা থাকেন। বিয়ের পর সেই প্রেম যে কোথায় পালালো। দাম্পত্যজীবনে সেই প্রেমের আর কোনো দেখা নেই। প্রায়ই খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে তুমুল ঝগড়া চলে দু’জনের। আর সেটা অসহায় চোখে প্রতিনিয়ত দেখে বাবলী। 

স্বামী-স্ত্রীর যে বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। এটা অবশ্যই দু’তরফা হতে হবে। একজন ভালো অভিভাবক হওয়ার পথে বাবা-মা দু’জনকেই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধসম্পন্ন একটি শক্ত জুটি হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে হবে। তবে হ্যাঁ, এখন সমাজ বাস্তবতার কারণে বা ব্যক্তিগত কারণে অনেকেই সিঙ্গেল পেরেন্টিংয়ে চলে আসছেন। সেই গল্পটা আর একদিন না হয় হবে।

কথা বলছিলাম পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে। অনেকেই সন্তানের সামনে বলেন তোমার মা অমুক অথবা সন্তানের সামনেই হয়তো শাশুড়ি সম্পর্কে বলছেন ‘বুড়ি আমার জীবন জ্বালিয়ে খেলো’ অথবা ‘উফ তোমার নানা একটা জিনিস!’ এই যে বিভিন্ন নেতিবাচক শব্দাবলি প্রতিনিয়ত আমরা ছুড়ে দিচ্ছি সন্তানের সামনে তখন সে কিন্তু সেটাই শিখবে। যখন বাবা অথবা মায়ের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত নেতিবাচক শব্দগুলো শুনে অভ্যস্ত হবে তখন সেই অশ্রদ্ধা ভরা শব্দাবলি তার শিশুমনকে ক্ষতবিক্ষত করবে। সে তখন নিজের প্রতি এবং অন্যের প্রতিও অশ্রদ্ধা নিয়ে বড় হবে।

আর একটি বিষয় হলো সন্তানকে বাধ্য করা তার মতের বিরুদ্ধে কিছু করা। তার সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা না করা, মূল্যায়ন না করা। কেন নীল রঙ পরবে? লালটাই তোমাকে মানায় তাই এই রঙের জামাটাই তোমায় পরতে হবে। এই জুতাটাই পরবে স্যান্ডেল নয়। এটা কেন খাও, এটা খাবে যেটা আমি বলবো। আমরা অভিভাবকরা প্রায়ই ভুলে যাই যে আমাদের ঔরসে বেড়ে উঠলেও সে আলাদা চিন্তাবুদ্ধির স্বতন্ত্র মানুষ। তার সেই স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হওয়াটা জরুরি। নচেৎ আপনার চাপিয়ে দেয়া মতের বোঝার আড়ালে তার সবুজ  শৈশবের কোমলতা হারিয়ে সে একটি বিবর্ণ হলদেটে ঘাসেই পরিণত হবে। যা হয়তো আপনারও কাম্য নয়।

এর ফলে সে আত্মবিশ্বাসহীন, পরনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে। বড় হয়েও তার ভেতর ঘাটতি হবে জীবন দক্ষতার। সে সহজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না নিজের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে। সন্তানকে পরিবারের অন্যান্য যে সদস্য বা সম্পর্কগুলো আছে সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখানো জরুরি।

হয়তো সেই বয়োবৃদ্ধ মানুষটি আপনাকে যন্ত্রণা করেন বা পছন্দ করেন না। কিন্তু সেই আঁচটা যেন আপনার সন্তানের গায়ে না আসে সেটা খেয়াল রাখুন। ভেবে নিন না, ওই বয়স্ক মানুষটাও আপনার আর একটা সন্তান। দেখবেন আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর কারণেই পরিস্থিতিটাও আপনার অনুকূলে চলে এসেছে। আর যার সুফল পাবে আপনারই সন্তান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //