২ বছরের কম বয়সী শিশুর খাবারে চিনি মেশালে কী ক্ষতি

জন্মের পর প্রথম ২৪ মাস বা দুই বছরে শিশুরা খুব সীমিত পরিমাণে খাবার খায়। তাই তাদের খাদ্য যেন পুষ্টিগুণে ভরপুর হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার।

অনেক শিশু খাওয়া নিয়ে নানা সমস্যা করে। যা-ই বানিয়ে দিন না কেন, খেতে চাইবে না সে। অথচ মিষ্টি জাতীয় খাবার অনেক শিশুর পছন্দ হয়। তাই অবিভাবকরা অনেকেই ভাবেন একটু মিষ্টি দিলে ক্ষতি কী

কিন্তু ক্ষতি হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, দু’বছরের কম বয়সি শিশুদের খাদ্য তালিকায় কোনও রকম চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার রাখা একেবারই উচিত নয়। এই বয়সে বেশি চিনি খেলে পরবর্তী কালে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা ও টাইপ-টু ডায়াবিটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই বয়সি শিশুদের শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়ালে তা তাদের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

বাজারের প্যাকেটজাত সিরাপ ও ফলের রসে অতিরিক্ত শর্করা থাকে। থাকে কেক, পেস্ট্রি, চকলেট, বিস্কুটেও। এসব খাবার শিশুদের খাদ্যতালিকায় একেবারেই থাকা উচিত নয় বলে মনে করছেন পুষ্টিবিদরা।

বর্তমানে সারা বিশ্বে শিশুদের স্থূলতা, দাঁত ও চোখের সমস্যার কারণে শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়েছেন শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড চাইল্ড হেলথের গবেষকেরা এক রিপোর্টে বলেছেন, বাচ্চাদের খাবারে মিষ্টির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এবং মিষ্টি খাবারের প্রতি তাদের নির্ভরশীলতা তৈরির আগেই সবজি খাওয়ানো শুরু করা গেলে তা তাদের সুষম পুষ্টির যোগান দেবে।

মা-বাবাদের উচিত শিশুদের একটু তেতো খাবারও দেয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে শিশুরা দাঁত ক্ষয়, স্থূলতা বা মোটা হয়ে যাওয়া এবং অপুষ্টির হাত থেকে বেঁচে যাবে। সেই সঙ্গে স্থূলতা থেকে পরবর্তীতে ডায়াবেটিস হবার আশংকাও কমবে।

জন্মের পর প্রথম ২৪ মাসে শিশুদের সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পুষ্টি ও ক্যালোরি প্রয়োজন হয়। যদিও অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবারগুলো ক্যালরি সমৃদ্ধ, তবে তাতে পুষ্টির অভাব রয়েছে। এই বয়েসের শিশুরা খুব সীমিত পরিমাণে খাবার খায়। তাই তাদের খাদ্য যেন পুষ্টিগুণে ভরপুর হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার।

যে সব শিশুর প্রাথমিক বছরগুলোতে উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ানো হয়, তাদের অল্প বয়সে স্থূলতা, কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও দাঁতের ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা কী খাচ্ছে, তার উপরেই তাদের খাদ্যাভাস তৈরি হয়। তাই ছোট থেকেই মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে বড় বয়সে গিয়েও সেই খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়তে পারে।

তবে শিশুদের খাদ্যতালিকা থেকে মিষ্টি জীতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তারা কেক, চকলেট বা পেস্ট্রি খেতে চাইবেই। অভিবাবকদের তাতে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর নজরও রাখতে হবে এবং তাদের মিষ্টি খেতে অনুমতিও দিতে হবে। তবে ভারসাম্য বজায় রাখার দায়িত্ব আপনার।

শিশুর জন্য বাইরে থেকে কিছু খাওয়ার জিনিস কিনলে, তাতে চিনির মাত্রা কতখানি সেই বিষয় সতর্ক থাকুন। নিজে বাড়িতে শিশুর জন্য খাওয়ার বানালে তাতে চিনি না দেওয়ার চেষ্টা করুন।

গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানী আর চিকিৎসকদের ক্রমাগত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিনি বা শর্করা। তাদের কাছে এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে জনস্বাস্থ্যের এক নম্বর শত্রু।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ক্যান জাতীয় যেসব খাবার, সেসবে বাচ্চাদের অভ্যস্ত না করে বরং তাজা ফলমূল, মিষ্টি ছাড়া দুধ জাতীয় খাবারে বাচ্চাদের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

গবেষক দলের প্রধান প্রফেসর মেরি ফিউট্রেল বলেন, বাচ্চাদের দুধ ছাড়ানোর জন্য মা-বাবারা অনেক সময় মিষ্টি জাতীয় খাবারের অভ্যাস করান আর এই সময়েই মিষ্টি খাবারের আসক্তি হয় বাচ্চাদের।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দুই বছর বয়সী একটি শিশু দিনে যেসব খাবার খাবে তার পাঁচ শতাংশের বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার হওয়া উচিত নয়। যত বেশি সম্ভব তাজা ফল ও সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আর প্রচুর কায়িক শ্রম ও খেলাধুলার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //