মারধর করলে শিশুদের ব্যক্তিত্বে যে প্রভাব পড়ে

মারধর করার প্রবণতা অনেক অভিভাবকদের মধ্যেই থাকে। শিশু দুষ্টুমি করলে সহ্য করতে না পেরে অনেকেই মারধর করেন। তবে বাবা মায়ের এই প্রবণতা শিশুদের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাবা- মায়ের সাথে ধীরে ধীরে দূরত্ব সৃষ্টি হয়, আক্ষেপ তৈরী হয়।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে,শিশুদের মারধর করলে তারা খুব ভিরু হয়ে যায়। অবচেতন মনে এই কষ্টের স্মৃতি বার বার ঘুরে ফিরে আসতে পারে। আবার কারোর ক্ষেত্রে জেদ বেড়ে যায়। বাবা-মায়েরা যদি শিশুকে আঘাত করেন, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে প্রতিশোধ প্রবণতা বাড়তে শুরু করে। বড় হয়ে সেও অন্যকে আঘাত করতে পারে।

এমনটা নয় যে শিশু সব সময় জেনে-বুঝেই আঘাত করে। কারও কারও ক্ষেত্রে বড় হওয়ার পরেও এমন মানসিকতা থেকে যেতে পারে। এ কারণে শিশুকে মারধর ধরলে তার যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে তা মনে রাখা দরকার।

শিশুদের মারধর করলে শিশুর মাঝে যে সব সমস্যা দেখা দেয়:

১. নিজের ছাড়া অন্য কারো প্রতি সহানুভূতি রাখতে না পারা ( lack of sympathy/empathy)।

২. অন্য মানুষের সাথে কোনো অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়া। তা সে বন্ধু হোক বা প্রেমী।

৩. নিজের নিরাপত্তা/সুবিধে অসুবিধে নিয়ে অতি সচেতনতা ও তাই নিয়ে সদা ব্যস্ততা।

৪. মানসিক অস্থিরতা, নিজেকে অপদার্থ মনে করা ইত্যাদিও রয়েছে তালিকায়।

শিশু বয়সে বেশি বকাঝকা মারধর করলে বাচ্চাটির মনে তার গভীর প্রভাব পড়ে। পরিবার যা কিনা শিশুটির ঠাঁই, সেখানকার বিরুদ্ধ পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে (adaptation) নেবার জন্য সে বাধ্য হয় নিজের চিন্তা ভাবনা ও আবেগের পথ পরিবর্তন ঘটাতে।

আধুনিক সাইকোলজি বলে, এইরকম adaptation এর ফলে পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার এর সমস্যা হতে পারে। এখানে ডিসঅর্ডার মানে কোনো অসুখ(disease) নয়। বরং বিশেষ অবস্থা (condition) যা স্বাভাবিকের থেকে বিচ্যুত। 

যে তিন ধরনের প্রধান পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো:-

১. নারসিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার বা NPD: এটি হলো এমন একটি ব্যাপক ও দীর্ঘকালস্থায়ী প্রবণতা যা মানুষে আচরণে বা চিন্তায় অপরের প্রশংসা পাওয়ার অত্যন্ত প্রবল চাহিদা এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতির তীব্র অভাব দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই বিশ্বাস করে যে তারা তাদের চারপাশের মানুষদের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

২. বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার বা BPD: যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল কাজকর্ম, সম্পর্ক এবং আত্মপরিচয় নিয়ে চিহ্নিত আবেগপ্রবণতা ও অস্থিরতার একটি ধরন। এটি উঠতি বয়সে ও পরিণত বয়সের প্রাথমিক দিকে উপস্থিত থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রসঙ্গ ও পরিস্থিতিতে ঘটে।

৩. সিজোয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার বা SPD: ব্যক্তিত্ব ব্যাধির শীতল, অলস, অন্যদের কাছে সংবেদনশীলভাবে দূরে দেখা এবং যথাযথভাবে তাদের অনুভূতিগুলি প্রকাশ করতে অসুবিধা সিজোয়েড পারসোনালিটির বৈশিষ্ট্য। এতে আক্রান্ত মানুষের ব্যক্তিগত আইডিসিক্রেনসি এবং ব্যাধির মধ্যে লাইন কখনও কখনও খুব ঝাপসা হয়;

ডিসঅর্ডার কোনো চিকিৎসায় সারে না (not treatable)। পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার এর মাত্রায় কম বেশি হয়। তবে কাউন্সেলিং করালে এর তীব্রতা কমতে পারে।

এটা ঠিক যে মা-বাবারাও সাধারণ মানুষ যারা দোষে গুণে ভরা এবং বিভিন্ন সমস্যার সাথে যুঝে তাদেরও হতাশা আসতে পারে। এটাও সত্যি যে এমন অবস্থায় অনেক বাড়িতে নিজের সন্তানেরাই বাবা-মায়েদের ফ্রাস্ট্রেশন এর বলি হয় যা কাম্য নয়।

একজন ভালো বাবা বা মা কখনো তাঁর বাচ্চাকে বকাঝকা বা মারধর করেন না। ধৈর্যের সাথে তার কথা শোনেন এবং যুক্তির দ্বারা বোঝান। এর জন্য অতি অবশ্যই বাবা মাকে বাচ্চাটির সমস্ত ব্যাপারে পূর্ণভাবে জড়িত থাকতে হবে। আর বাড়িতে স্বচ্ছন্দ পরিবেশ বহাল রাখতে হবে যাতে শিশু তার মনের ভাব প্রকাশ করতে কুণ্ঠা বোধ না করে।

সূত্র: সুস্বাস্থ্য

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //