পিতৃত্বকালীন ছুটি কেন প্রয়োজন

কোলজুড়ে সন্তান এলে মা যেমন আনন্দে ভাসেন, তেমনি আনন্দ বাবারও হয়। একইভাবে সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে মায়ের যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি বাবার দায়িত্বও কোনো অংশে কম নয়। সন্তানধারণ থেকে শুরু করে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পর্যন্ত মায়েদের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে চাকরিজীবী নারীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়ে থাকেন। স্বভাবতই আলোচনায় চলে আসে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টি। উন্নত বিশ্বে 

পিতৃত্বকালীন ছুটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা হলেও বাংলাদেশে ধারণাটি এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালে মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করেছে। তবে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। অন্তত বাংলাদেশে দাপ্তরিকভাবে বিষয়টি ব্রাত্যই রয়ে গেছে। দেশে এর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অল্প কদিন ছুটি কাটানোর সুযোগ পায় পুরুষরা। কিন্তু দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন, মানসিক শান্তি ও সন্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন পিতৃত্বকালীন ছুটি...

পারিবারিক বন্ধন : নতুন মাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করার জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটি গুরুত্বপূর্ণ। বাড়িতে থাকলে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়া, কাজের চাপ কমানো এবং সন্তানের মাকে মানসিক সমর্থন দেওয়া সহজ হয়। সন্তানের জন্ম এবং এর সঙ্গে আসা নতুন দায়িত্ব দুজনকেই পালন করতে হবে। দুজনে ভাগাভাগি করে দায়িত্ব পালন করলে অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রেও সমতা বজায় থাকবে। সেই সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কও ভালো থাকবে।

লৈঙ্গিক সমতা : কোনো অফিস কোনো কর্মীকে পিতৃত্বকালীন ছুটি দিলে তা আরও অনেকের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে মনে করেন যে সন্তানের লালন-পালনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব কেবল মায়েরই। এই ভুল ধারণা ভেঙে দিতে পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রচলন জরুরি। পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটি এ ধরনের বৈষম্য দূর করতে সাহায্য করে। সন্তানের যত্ন এবং পরিবারের দায়িত্বে বাবারও সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

কর্মজীবনে প্রভাব : পিতৃত্বকালীন ছুটি কর্মজীবনে কোনো প্রভাব ফেলে না। কেননা পিতৃত্বকালীন ছুটি কাটানোর পর কাজে যোগ দিলে অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন বাবারা। কাজে নতুন করে উদ্যম ফিরে পান এবং সন্তানের কারণেই কাজের প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। 

মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা : সন্তান জন্মানোর পর থেকেই মায়েরা শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং মানসিকভাবে বিষণ্ণ থাকেন। এ সময় পরিবার থেকে তাকে মানসিকভাবে সহায়তা দেওয়া খুবই জরুরি। তাই মায়ের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মানিয়ে নেওয়া : পিতৃত্বকালীন ছুটির সময়টা নতুন বাবাকে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। এ সময় নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা হয়। সেটি হতে পারে মাঝ রাতে শিশুর কান্না থামানো কিংবা ন্যাপি বদলানো। এমন অনেক কাজই করতে হবে, যেগুলো একেবারেই নতুন। 

সন্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা : জন্মদানের পর মা সন্তানকে সময় দিতে পারেন। বেশিরভাগ বাবা সন্তানের সঙ্গে খুবই কম সময় কাটান। কিন্তু এ সময় একজন বাবা যদি সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান, তবে সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কটা বেশি দৃঢ় ও সহজ হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //