বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে সংসদে সরব বিএনপি

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির দুই সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও রুমিন ফারহানা। তারা বলেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে হত্যার পর নাটক সাজানো হচ্ছে। আর সরকার সার্টিফিকেট দিচ্ছে।

এ বিষয়ে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করে হারুনুর রশীদ বলেন, সব মানুষ আইনের আশ্রয় লাভের সমান সুযোগ পাবেন কী না তা দেশের মানুষ জানতে চায়।

সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সংসদের বৈঠকে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে এসব কথা বলেন তারা। এর আগে সকাল ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

বিএনপির এমপিদের এমন অভিযোগের পর জাপার সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান ফ্লোর নিয়ে বলেন, কেউই দায় এড়াতে পারেন না। বিএনপি সরকারের আমলে অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

বিএনপি দলীয় এমপি হারুনুর রশীদ অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিষয়ে বলা হয়েছে; গত ১০/১২ বছরে তিন হাজারের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আজকে যারা স্বজন হারিয়েছে, গুম হয়েছে বা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে- তারা কী আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার পাবে না? সংবিধানের এই বিধানগুলো কী স্থগিত করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজের নির্বাচনী এলাকার তিনটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ তুলে ধরে হারুন বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর বলা হয় পুলিশের ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ! এটা কী সম্ভব? পুলিশের কাছে যে অস্ত্র থাকে তা মোকাবিলার জন্য সন্ত্রাসীদের কাছে যে অস্ত্র দরকার..... এখানে উদ্ধার দেখানো হয় হাতে তৈরি বাটল, পিস্তল।

তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উপর্যুপরি হত্যা করছে। আর নাটক বানাচ্ছে। সরকার এসব ঘটনার সার্টিফিকেট দিচ্ছে। এইসব ঘটনা ঘটেই চলেছে।

পুলিশের গুলিতে টেকনাফে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদের হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার তদন্ত চলছে। আদালতে বিচার হচ্ছে। কিন্তু আরো যে তিন হাজারের অধিক মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে; তাদের পরিবার কী আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ পাবে না? তাদের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়াবে না?

এর আগে হারুন বলেন, আমরা আজ মহাসঙ্কটে। একদিকে করোনা মহামারি অপরদিকে বন্যায় মানুষ বিপর্যস্ত। প্রবাস থেকে লাখ লাখ মানুষ নিঃস্ব হয়ে দেশে ফেরত আসছে। তারা বেকার হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতি চরম চাপের মধ্যে রয়েছে।

সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা ফ্লোর নিয়ে বলেন, বিদ্যমান হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণ' আইনে চমৎকার সব ধারা থাকা সত্ত্বেও দুঃখজনক হলেও সত্য এই আইনের আওতায় খুব বেশি মামলা হয়নি। কয়েকটি মামলা হলেও তার অগ্রগতি সম্পর্কে বেশি জানা যায়নি। একটি মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। দীর্ঘ সাত বছর হয়ে গেলো এই সময় অসংখ্য ব্যক্তি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর শিকার হয়েছেন। কিন্তু তার মামলাগুলো কী হলো? কেন পরিবার মামলা করার সাহস পায় না? কেন মামলা হয় না? হলেও সেগুলোর কী অবস্থা তার কিছুই জানা যায় না।

কক্সবাজারে সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অতিসম্প্রতি একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সবার দৃষ্টি কেড়েছে। দেশে প্রতিদিনই গড়ে একটির বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। বারবার বলা হচ্ছে এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর একটিও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

তিনি বলেন, টেকনাফের কুখ্যাত ওসি প্রদীপ ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম পেয়েছেন। এই পদক দেয়ার ক্ষেত্রে যে ছয়টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়, তার প্রত্যেকটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এসব ঘটনার পুরস্কার সরূপ কোন পুলিশ অফিসার যদি সর্বোচ্চ পদক পেয়ে থাকেন তাহলে সেটা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করবে এটাই স্বাভাবিক। আর কেবল পদক নয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পেছনে অর্থ লেনদেনের বিষয় জড়িত রয়েছে। পরিবার থেকে ধরে নিয়ে অর্থ দাবি করা হয়। অর্থ না পেলে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। অথচ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গুম বলে কিছু নেই। পুলিশের আইজি বলেন, ক্রসফায়ার বলে কিছু নেই। এগুলো এনজিওর দেয়া শব্দ। এনজিওগুলো বিদেশ থেকে পয়সা আনে সেই পয়সা হালাল করতে তাদের ক্রসফায়ারর মত শব্দ তৈরি করতে হয়।

বিএনপি দলীয় দুই এমপির এসব বক্তব্যের জবাবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে সবাই। এখানে ওসি প্রদীপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দায় কেউই এড়াতে পারেন না। ওসি প্রদীপের প্রথম পদোন্নতিটি বিএনপির আমলে হয়েছে। সেখান থেকেই শুরু হয়েছে। অপারেশন ক্লিনহার্ট বিএনপি সরকারের আমলে হয়েছিল। ওই ক্লিনহার্টের সময় অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। অনেকে সেই নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে আগেও। ময়মনসিংহ সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী ও অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছিল। জাতীয় পার্টি তখনো এর বিরুদ্ধে ছিলো। এখনো এর বিরুদ্ধে। তারা সমস্ত অমানবিকতার বিরুদ্ধে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //