হাজী সেলিমের এমপি পদ নিয়ে সংশয়

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। এতে হাজী সেলিমের এমপি পদে থাকা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই কিংবা ততোধিক বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না।

তবে হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজার ধারণা, সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাজী সেলিমের সংসদ সদস্য পদ ‘থাকবে’।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি মনে করি এটি তার (হাজী সেলিম) নৈতিক স্খলন। তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন স্পিকার। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রায়ের অনুলিপি পৌঁছে দেবে।

অন্যদিকে, সংসদ সচিব জাফর আহমেদ খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার মহোদয়। তবে তার আগে রায়ের কপিসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংসদ কর্তৃপক্ষের কাছে আসতে হবে। কোনো সদস্য দণ্ডিত হলে রায়ের কপি যেমন সংসদে আসতে হয়, তেমনি ওই সদস্য যদি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন, সেই নথিও আসতে হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে যদি রায় স্থগিত হয়, সেটাও সংসদ সচিবালয়কে জানাতে হয়।

দুদকের করা মামলায় মঙ্গলবার (৯ মার্চ) বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের স্ত্রী মৃত্যবরণ করায় তাকে অব্যাহতি (অ্যাবেট) দেন। তবে হাজী সেলিমের দুই ধারায় দেয়া ১৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশের মধ্যে এক ধারার (১০ বছর) দণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত। অপর ধারার দণ্ড (৩ বছর) থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ের এক বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।

এ রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এ অবস্থায় তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিচারিক আদালত যেদিন হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাবেন, সেদিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। আর আত্মসমর্পণ না করলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে বলা হয়েছে। আর যেসব সম্পত্তি নিয়ে এ সাজা দেয়া হয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিতে হবে।

গত ৩১ জানুয়ারি এ শুনানি শুরু হয়েছিল। এর আগে গত ১১ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতে থাকা যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেছিলেন উচ্চ আদালত। সে আদেশ অনুসারে নথি আসার পর আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।

২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন।

পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //