রিজার্ভে স্বস্তি ফিরবে, প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর

রিজার্ভে স্বস্তি ফিরে আসার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সংসদে জানিয়েছেন, সরকার অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত এবং প্রবাস আয় উৎসাহিত করার মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছে। যার ফলে আগামীতে রিজার্ভে স্বস্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।

আজ বুধবার (২১ জুন) জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, '২০১৭–১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। মূল্যস্ফীতির চাপ এবং কোভিড পরবর্তীকালে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০২১–২০২২ অর্থবছরে আমদানি বেড়ে যায়। এতে দেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর কিছুটা চাপ তৈরি হয়।'

'এ চাপ মোকাবিলা করতে গিয়ে পরে রিজার্ভ কমতে শুরু করে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার শুরু করলে রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার হার আরও বৃদ্ধি পায়,' বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী জানান, সর্বশেষ গত ৩১ মে'র হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভের সাহায্যে ৪ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য নুর উদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগ খাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, তা এখন সর্বমহলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত।'

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে যোগাযোগ খাতে বিভিন্ন প্রকল্প ও আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সেতু বিভাগ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ঢাকা শহরে ২৫৮ কিলোমিটার সাবওয়ে নির্মাণ, ঢাকা শহরে ৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ইনার এলিভেটেড সার্কুলার রোড নির্মাণ, ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর সড়কে মেঘনা নদীর উপর প্রায় ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

এছাড়া, বরিশাল-ভোলা সড়কে তেঁতুলিয়া ও কালাবদর নদীর উপর ১০ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, বরিশাল জেলায় রহমতপুর-বাবুগঞ্জ-মুলাদি-হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ সড়কে আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর ১ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার বাকেরগঞ্জ-বাউফল সড়কে কারখানা নদীর উপর ১ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে মেঘনা নদীর উপর ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু বা টানেল নির্মাণ, পটুয়াখালী জেলায় লেবুখালী-দুমকী-বগা-দশমিনা-গলাচিপা-আমড়াগাছি সড়কে গলাচিপা নদীর উপর ১ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, পটুয়াখালী জেলায় পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা সড়কে পায়রা নদীর উপর ২ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, বরগুনা জেলার বরগুনা-পাথরঘাটা সড়কে বিষখালী নদীর উপর ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, মতলব উত্তর-গজারিয়া সড়কে মেঘনা নদীর উপর ১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ এবং গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়কে মেঘনা নদীর উপর ২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কথাও জানান তিনি।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'পতিত জমিতে চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করায় ইতোমধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে।'

কৃষিখাতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি ও ফলসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ২২টি কৃষি পণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে আছে। 

তিনি বলেন, বর্তমান সংকট মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সরকার সচেষ্ট আছে।

তিনি আরো জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। মূল্যস্ফীতির চাপ এবং কভিড পরবর্তীকালীন চাহিদা বৃদ্ধিজনিত কারণে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। এ চাপ মোকাবিলা করতে গিয়ে পরবর্তীতে তা কমতে শুরু করে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার শুরু করলে রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার হার আরো বৃদ্ধি পায়।

সর্বশেষ গত ৩১ মের হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। যার সাহায্যে চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, পতিত জমি চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে ইতিমধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। কৃষি খাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি ও ফলসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া ২২টি কৃষি পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে। করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় দেশের কৃষি খাত অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান সংকট মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য নুর উদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগ খাতে বিভিন্ন প্রকল্প ও আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগ খাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, তা এখন সর্বমহলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সেতুবিভাগ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েছে।

এদিকে খালেদা খানমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৮৮.৬০ শতাংশ। তবে এ হার আরো বাড়াতে কার্যক্রম চলছে। এ কার্যক্রমে ১০ লাখ শিশু-কিশোর বিদ্যালয়বহির্ভূত রয়েছে। ইতিমধ্যে এই কার্যক্রমে এক লাখ শিশু-কিশোরকে মৌলিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯ লাখ শিশু-কিশোরকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনার কাজ চলছে। তিনি আরো জানান, আউট অব স্কুল চিলড্রেন কার্যক্রম (২০১৮-২০২৩): চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) এর আওতায় ৮-১৪ বছর বয়সী ১০ লাখ বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশু কিশোরকে মৌলিক শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ লাখ শিশুকে মৌলিক শিক্ষা শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ৯ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।

একই প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হার ৪৭.২০ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১৪.১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৮.৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশুদের ভর্তির হার ৮৭.২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৭.৫৯ শতাংশ হয়েছে।

তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপ্তির হার ৫২.৮০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৫.৫০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও সচ্ছলতা বেড়েছে এবং স্বাক্ষরতার হার ৫৩.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫.৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির মাধ্যমে গত দুই অর্থবছরে এবং ২০২২-২৩ অর্থ-বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এক কোটি ৫৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৯ জন দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বাবদ ৫ হাজার ১৫১ কোটি ৭৯ লাখ ১৩ হাজার ৮২০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বেড়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //