মিসরীয়রা পরিবারের সবাই মিলে ইফতার করতে পছন্দ করেন। ইফতারের সময় জ্বালানো হয় রঙিন লন্ঠন। মাংস দিয়ে তৈরি রোকাক নামে একটা মচমচে ভাজা টোস্ট মিসরীয়দের ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ। এছাড়া মটরশুঁটি, টমেটো ও বাদাম দিয়ে তৈরি অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করা “ফুল মেদেমাস” নামের এক ধরনের খাবার ও বাদামি রুটি খেয়ে থাকেন তারা। মিসরীয়দের ইফতারে হাঁসসহ নানা ধরনের মাংসের পদ থাকে।
ইফতারে সৌদিরা অ্যারাবিক কফি পান করেন। খেজুর তাদের ইফতারের অনেকটা বাধ্যতামূলক উপাদান। ইফতারে সুপ, ভাজা অথবা বেক করা নানা রকম পুর ভরা পেস্ট্রি খেয়ে থাকেন তারা। আর সৌদির পূর্বাঞ্চলের লোকেরা ইফতারে সালুনা নামের একটি খাবার খান, যা মাংস ও সবজির স্টু দিয়ে তৈরি। ইফতারে সৌদিরা খেজুর ও ক্রিমজাতীয় খাবার খেয়ে নামাজ পড়তে যান। এরপর লেবন হালিব, যা আমাদের দেশের বিরিয়ানির মতো ও মিষ্টিজাতীয় খাবার হারিসা কোনাফা খেয়ে থাকেন।
ইফতারে ফাত্তুশ সালাদ নামে জনপ্রিয় একটি খাবার লেবাননে প্রথম পছন্দ। গাজর, টমেটোসহ সব রকমের মৌসুমি ফল দিয়ে খাবারটি তৈরি হয়। এর ওপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রুটির টুকরা।
জর্ডানের মুসলমানদের ইফতার শুরু হয় দধি, স্যুপ ও জুস দিয়ে। তাদের প্রিয় একটি খাবারের নাম মানসাফ। ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি খাবারটি পরিবেশন করা হয় অ্যারাবিক রুটি বা ভাত সহযোগে।
ইরাকে শুকনো অ্যাপ্রিকট ও তেঁতুল দিয়ে এক ধরনের শরবত বানানো হয়। ইফতারে সবার পছন্দ এই শরবত, যা দূর করে সারা দিনের তৃষ্ণা।
ইফতারে ইরানের ঘরে ঘরে তৈরি হয় জাফরানের ঘ্রাণযুক্ত এক ধরনের হালুয়া। আর নামাজ শেষে তারা খায় স্যান্ডউইচ, মিষ্টি চা, তাবরেজি চিজ। আশ রাসতেহ নামে একটি ঘন সবজির স্যুপও সেখানে ইফতারের সময় আগ্রহ নিয়ে খাওয়া হয়।
মালয়েশিয়ানরা খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করেন। বান্দুং ড্রিংক, আখের রস, সয়াবিন মিল্ক নামের রকমারি পানীয় থাকে। ভারী খাবারের মধ্যে থাকে চিকেন রাইস, নাসি লেমাক, লাকসা।
ইন্দোনেশিয়ার মানুষ ইফতারে ছোট সামুদ্রিক মাছ (আমাদের কাচকি মাছের মতো) ভেজে তা বাদাম দিয়ে পরিবেশন করেন। সঙ্গে বিন ও চিকেন দিয়ে করে বারবিকিউ। ফ্রাইড রাইস থাকে। শরবত আলাদা করে তেমন বানান না। বাজারে বিভিন্ন ড্রিংকস কিংবা ডাবের পানি থাকে।
মালদ্বীপের মুসলমানরা ইফতারে গারুধিয়া নামে একটি খাবার খেয়ে থাকেন। এটা একটা মাছের পদ, যা পরিবেশন করা হয় ভাত, লেবু, মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে। আরেকটি জনপ্রিয় খাবারের নাম কুলহি বোয়াকিবা। এটা একটা ঝাল ঝাল ফিশ কেক। আরেকটি খাবারের নাম থারিদ, যা বানানো হয় চাল ও গরু বা খাসির মাংস দিয়ে।
শ্রীলঙ্কার মুসলমানদের ইফতারে বিভিন্ন খাবারে নারকেলের দুধের ব্যবহার বেশি। এ ছাড়া আদিক নামে একটি রুটি তারা খেয়ে থাকেন।
ভারতে ঐতিহ্যবাহী হায়দরাবাদ শহরে ইফতার শুরু হয় সুস্বাদু হালিম দিয়ে। অপর দিকে কেরালা ও তামিলনাড়ুর মুসলমানরা ইফতার করেন নমবু কাঞ্জি নামে একধরনের খাবার দিয়ে। মাংস, সবজি ও পরিজ দিয়ে প্রস্তুত করতে হয় খাবারটি। সঠিক স্বাদ পেতে চুলায় দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখতে হয়। উত্তর ভারতে পথের খাবার খুবই জনপ্রিয়। ইফতারের সময় এসব দোকানে ভিড় লেগে যায়। নানা রকম খাবারের পাশাপাশি ফ্রুট সালাদ তো থাকেই। এ ছাড়া দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে ইফতারের শুরুতে থাকে খেজুর, তাজা ফল, ফলের রস। এরপর পাকোড়া, সামোসার মতো ভাজা আইটেম।