শামীম রফিকের একগুচ্ছ সনেট

অপরূপ অন্ধকার

ভোরের জানালার কাচে বসেছে : শিশু সূর্যের আলো
তোমরা যেখানে যাবে ভাব, নিশ্চিন্তে চলে যেতে পার
আমাদের আর কোনো কথা নেই, যাওয়াটাই ভালো
এখানে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ হয়, বিচার দেখতে পার।
পতিতা নই, হয়েছি দয়িতা-ডালপালা দিয়ে কত
অথচ ওখানেই আঘাত, জেনে বুঝে এ সবটুকু   
আজকাল বসলে; ঘুমিয়ে নাকডাকা-কেবলা যত
বুঝেছে বলে ভাঙতে চায় উপমা আছে যতটুকু
কত যে কারুকাজ, কত যে খেলা-অলক্ষ্যে আছে চুপ
পিপীলিকা চলে গেলে-নিঃসঙ্গ পড়ে থাকি, এ দুপুরে
রাজকন্যা আসবে বলেই ছাদে জমেছে অন্ধকার অপরূপ
মানুষের সঙ্গে মিশে দেখি মেঘেরা ভাসছে পুকুরে।
খুলি হাল তুলি পাল-ভাসছে বলাকার দল, দলে
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি-শিশিরে শিউলি তলে।

সম্পর্কের আগুন

To each the boulders that have fallen to each
And some areloaves and some so nearly balls
                                                    -Robert Frost


চার দেয়ালের মাঝে সরু দুটি ঘর
পূর্ব-পশ্চিমে বাতাস-কারো পর নয়
ধুয়েছে সকলে যারা উড়িয়েছে-খড়
সারাবেলাই শালিকেরা কাতর হয়।

সমানে সমান-ভুল কেন কয় লোক
লোকেরা এমনই-হাসিতে ভরে রয়     
আয়োজন করি সবটুকু নিজে-শোক   
ঘামটুকু তুলে দিয়ে ভাবি সব-সয়।

সুযোগ নিতে লেগে গেল-উৎসাহী লোক
ফাঁদে দিই নির্বোধ পা-ফাঁদের কি দোষ?
আগুন পোড়ায় দিনরাত সব শোক
আতায় পাতায় লতায় কেবলি রোষ।
আগুন গাছে, আগুন ত্রাসে-সব ক্রোক
রক্ত আর আগুন ঘষে ঘষে বেহুঁস।

কুয়াশার নারী

সময় গিয়েছে চলে, সত্যিকার পাখি
সময় গিয়েছে চলে, অরণ্যেই ঘুরি
সময় গিয়েছে চলে, কবরই খুঁড়ি
সময় গিয়েছে চলে, পরিচয় রাখি।   
ভাবতেই পারি নাই, চোরাবালি দেখি
ভাবতেই পারি নাই. কুয়াশায় নারী
ভাবতেই পারি নাই, পুনরায় ফিরি
ভাবতেই পারি নাই, ফিরে আসে পাখি।
ফিরবার কথা ছিল, সন্ধ্যার আগেই
ফিরবার কথা ছিল, বিরোধী জোয়ারে
ফিরবার কথা ছিল, কোথায় দাঁড়াই   
এতদিন ভেবেছি যে, সান্ত¡না ত্যাগেই
এতদিন ভেবেছি যে, আসবে দুয়ারে
এতদিন ভেবেছি যে, নীল ক্লান্তি পাই।

ক্ষণস্থায়ী প্রেম


তারা কোথায়?
তারা কি হারিয়ে গেছে?
পায়ের তলে লিকলিকে ট্রামের লাইন-মাথার ওপরে
অসংখ্য জটিল তারের জাল শাসন করছে আমাকে।
                                          জীবনানন্দ দাশ


মানুষের অবিশ্বাস, প্রেম দেয় রূপ
প্রসঙ্গত জ্বলে ওঠে, আকাশের মেঘে
অভিজ্ঞতা হয়েছে যা, বট গাছে লেগে
এমনই ক্ষণস্থায়ী, প্রাথমিক ধূপ।
জীবনের অন্ধকার, ভেবে নিয়ে চুপ     
সকলের ভাবনায়, শিহরণ জাগে
বালুর ঝড়ের সঙ্গে, বুকে পাঞ্জা লাগে
ভাবনা অনেকবার, আরও আছে স্তূপ।

ভাবনায় ফেলে যারা, তাদেরকে চিনি
অকারণেই কাঁদায়, চাঁদ নিয়ে গায়ে   
তবুও কাঁদায় কেউ, এই হয় হায়
স্বপ্নের মুঠোয় তারা, যারা হয় ঋণী   
মৃত উপহাস নিয়ে, তবু যায় নায়ে
ওখানে চুম্বন দিয়ে, তারা কিছু পায়


মধ্যরাতের শীতল


রাতের নক্ষত্র, তুমি বলো দেখি কোন পথে যাব?
                                      জীবনানন্দ দাশ


বৃষ্টি এসেছে আগেই, পাথরের রাত
এই বারান্দায় নগ্ন, পূর্ণিমার চাঁদ
তোমরা ভেবেছো পথে, মগ্ন এই হাত
আমার চোখেও জল, বনমানুষের স্বাদ
তুমি কেন মধ্যরাতে, এই প্রেম চাও
মন চায় বিনিময়, মানুষের মতো
কত আর আসে মাছি, নিরাময় খাও
তুমি বড় অন্ধকার, হেঁটে যাও কত?
অনায়াশে হেঁটে যাও, এপ্রিলের শেষে
এরচেয়ে বড় নও, এই যত ঘর     
যতটা এসেছি হেঁটে, মানুষের বেশে
মানুষরা মানুষ না, সকলেই পর
এখন শীতল বৃষ্টি, প্রতিদিন হাসে
করোনা এসেছে মাঠে, এ সবুজ ঘাসে।


শামীম রফিক কবি এবং কবিতার অন্বেষণবাদী; প্রচারবৃত্তের বহির্বলয় থেকে বেশ দূরেই নিভৃতে লিখে চলেছেন, গবেষণা করেছেন সিকদার আমিনুল হকের কবিতার রূপ-বৈচিত্র্য বিষয়ে। তার কবিতার শক্তি বৈচিত্র্যময় শব্দের গাঁথুনিতে এবং সরল অনুষঙ্গে- রোমাঞ্চ, নান্দনিকতা, ছন্দময়তা, মানবতাবাদ, ক্ষুধা-মৃত্যুতাড়না এবং বিষণ্ণতা বিচিত্রভাবে চিত্রিত হয়। গত শতকের ৯-এর দশকের প্রতিভাদীপ্ত এই কবির জন্ম ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৩, ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার আছিম এলাকার কালাইর পাড় গ্রামে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘের আড়ালে রোদের কষ্ট (১৯৯৭)’ এবং প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘নীরাদের প্রেম (২০১১), প্রথম প্রবন্ধ-গ্রন্থ ‘জীবনানন্দের কাব্যে নারী অন্বেষণ (২০১২)’ এবং লিটল ম্যাগাজিন ‘অরণ্য (১৯৯৭)’।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //