চঞ্চল আশরাফের দুইটি কবিতা

মন্থরতায়, কেঁপে

তুমি হবে আমার সাদা ছড়ি?
রাস্তা যখন ছড়ায় কালো নুড়ি
ঝরলো পাতা মন্থরতায় কেঁপে
হাঁটছি ভোরে দুই পা মেপে মেপে
কাছের ছবি ঝাপসা হলো দূরে...
যাচ্ছি না-কি মেঘের অন্তঃপুরে!
কিংবা আমার দৃষ্টিজুড়ে হাওয়া
ব্যথার ভারে জল গড়িয়ে যাওয়া
হঠাৎ এসে ঝাঁপিয়ে-পড়া আলো
উধাও করে পথের যত ধুলো-
কোথায় যাবো? স্থবিরতার কাছে?
বললে তুমি ‘সাদা ছড়ি আছে;
কিনে দেবো কাশবনের থেকে-
ওটাই আমি, আর যেও না বেঁকে!’
চলছি আমি রাস্তা মেপে মেপে...
তোমার দিকে

হে পরিত্যাজ্য দৃশ্যের স্মৃতিভার

(এ বছরের ৩ এপ্রিল। সাপ্তাহিক ‘এই সময়’র বৈশাখ সংখ্যার জন্য একটা গল্প নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমার অনেক বাজে স্বভাবের একটি হলো, গল্প লিখতে বসলে কবিতা বা অন্য কিছু লিখতে ইচ্ছা করে। ওই ৩ তারিখ রাতে তাই ঘটেছিল। কিন্তু ‘হে পরিত্যাজ্য দৃশ্যের স্মৃতিভার’ থেকে কবিতাটি আর এগোয় নি। আমি গল্পে ফিরে গিয়েছিলাম। যতদূর পারা যায়, লিখতে না-পারা সেই কবিতাটি আজ এগিয়ে নিলাম।)

যখন অন্ধ হয়ে যাবো আমি, বালির ভাস্কর্য হয়ে তোমার শরীর দুপুরের গনগনে রোদের তলায় দাঁড়িয়ে থাকবে, যতক্ষণ না ঢেউ এসে নিশ্চিহ্ন করে দেয়; জোয়ারের পর সেখানে উঠবে জেগে মৃতের প্রাসাদ, নক্ষত্রখচিত অন্ধকারে আমি তার চারপাশে ঘুরতে থাকবো হে পরিত্যাজ্য দৃশ্যের স্মৃতিভার, কে ওখানে থাকে, সামনে ফলের থালা, তলোয়ার, কত্থকের রহস্যমদির মুদ্রা নিয়ে? যখন অন্ধ হয়ে যাবো, কেউ এসে ধরবে আমাকে, তার হাতের বিবাহরেখা আমার দৃষ্টিসক্ষম ত্বকে মিশে যাবে; প্রজাপতিদের উড়ন্ত পাখায় ভর করে দেখবো  কেমন করে বেজে ওঠে রঙের সিম্ফনি, অরণ্যের দিকে পড়িমরি ছুটে যায় মৃত  প্রেমিকের দল; আর যারা শুয়েছিল বিনিদ্র কান্নার ভিতরে, অশ্রু শুকিয়ে গেলে তারা সেই সমুদ্রের পারে বালির ভাস্কর্য হয়ে থাকবে দাঁড়িয়ে, যতক্ষণ না ঢেউ এসে নিশ্চিহ্ন করে দেয় যখন অন্ধ হয়ে যাবো, কাঁদবে না কেউ, শুধু ধরবে আমাকে; বিশেষত তুমি, তোমার বিবাহরেখা আমার দৃষ্টিসক্ষম ত্বকে মিশে  গেলে দেখো, অজস্র শাদা ছড়ি পথে পথে ছড়িয়ে পড়েছে

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //