শৈলজানন্দ রায়ের গুচ্ছ কবিতা

শৈলজানন্দ রায়ের জন্ম খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার ঢাকী নদীর পাশঘেরা চুনকুড়ি গ্রামে। কবিতা, গল্প এবং সমালোচনায় সিদ্ধহস্ত কবি শৈলজানন্দ ছোট কাগজের প্রতিই মমতা বোধ করেন। কেননা, ভাষাশৈলীর নতুনত্ব এখানেই নিরীক্ষায় দেখানো সম্ভব। সম্পাদনা করছেন বরষা নামে সাহিত্যপত্র। ছবি আঁকা, বইপড়া এবং ভ্রমণ তার শখ। এখন একটি আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংস্থায় কাজ করেন।

ধরো, শূন্য
ধরলে অনেক কিছু-তো ধরাই যায়
যেমন এক্স ধরে কত কত অংকের...
পিতাপুত্রের, ডিমের, বাঁশের... সমাধান
তবে সব ধরা-ছোঁয়ার বিধান কিন্তু বৈধ নয়

‘শূন্য’ একটি অংক- শুধু এই সিদ্ধান্তটা 
বোঝাতে গিয়েই যাচ্ছেতাই অংক-কাণ্ড
কারণ ধর্তব্য যা-কিছু... জগতের নিবিড় সম্ভাবনা
এটা কিন্তু চূড়ান্তই রিয়াল এনালাইসিসের অন্তর্গত!

ধরো, আমাদের ছোট্ট একটা অবৈদ্যুতিক বাসা
সেই ভালোবাসায় পিঁড়ি পেতে চাঁদ নিমন্ত্রণ খাচ্ছে
ধরো, শূন্যের মধ্যে সমস্ত আশা-ভরসা,
জগৎ সংসার বিলীন হয়ে যাচ্ছে!
ধরো, এই-যে জীবনভর আঁকড়ে থাকা ঘর,
বুকের মধ্যে ভালোবাসার শুকনো পাতার মর্মর
সব তো মৃত্যুতে মচমচ ভেঙে মহাশূন্যে সমাধি পাচ্ছে!

ধরলে অনেক কিছু-তো ধরাই যায়
তবে জীবনের যা-কিছু জ্যোতির্ময়
শেষ পর্যন্ত মহাশূন্যে ছাড়া পেয়েই যায়!

কথামৃতম
একটা কথা বলবো- একথা কতবার বলেও তার বলা হয়নি
কারণ কথাটা ঠিক কথা নয়,
কখনো কখনো কথারা 
যেমন মরণ কিংবা ঝাঁক ঝাঁক অতিথি পাখি
ঠিক ওরকমই...
যেন সময় না হলে বলা হয়ে ওঠে না যাদুমন্ত্র
কথার কথাকে গুরুত্ব দেওয়া কি ঠিক?
অনুর্বর ছাত্র কিভাবে বোঝাবে কথার ষড়যন্ত্র!
তবে কথারা কিন্তু শুধুই শব্দ নয়, অন্তরও
আঙুলের কিংবা চোখের নিঃশব্দ কথাগুলোর কথাই ধরো 
এখানে কি শ্রবণ সমস্যা হয়?
শ্রেফ কথার পিঠে কথা গেঁথেই কি
শিল্প শিল্প কথকতা?- তা কিন্তু নয়
কথা না বললেও রূপকথা!
হয় না?
যেমন রাতের সঙ্গে জোনাকি, জ্যোছনা...
এভাবে শব্দহীন পাশাপাশি বসে থাকা

সবচেয়ে দুঃখের কথা হলো-
মেয়েটি ছেলেটিকে একটুও ভালোবাসে না।

প্রকৃতি
হয়তো বা সৃষ্টি হবে সে-সূত্রে বিনাশ
হয়তো বা ধ্বংস খুব কাছে ধরণীর
এই প্রেষ্য ঝড় কিন্তু ভয় তরণীর
নিশ্চিত ঝরবে বৃষ্টি সঘন আকাশ
আমার তো ঘর নিয়ে প্রশ্ন তার কাছে
যার জমি তার আছে কৃষি-চাষবাস
আমারও দায় আছে করি বসবাস
হয়তো বা চর নিয়ে সত্ত্ব কথা আছে

প্রকৃতি বিদ্বেষ যেন মানুষের শাপ
হয়তো বা কেউ ভুলে গেছে ব্রহ্ম বড়
আমি কিন্তু পুরোটা পার্থিব আমি নই
খোঁজো কার ঘরে পুণ্য কার ঘরে পাপ
মানুষ ভেবেছে জীব বাকি সব জড়
প্রকৃতির প্রাণ আছে কান পেতে রই।

অসম্পর্ক
মেঘের সঙ্গে বাতাসের সম্পর্ক ভালো নেই
প্রসঙ্গতই ঝড়টা উঠল... আবহাওয়া-বিতর্ক,
তবে রক্তের সম্পর্কের বাইরেও নিবিড় সম্পর্ক আছে
যেমন গাছে আর রোদে- খাদ্য-সম্পর্ক
এভাবে পৃথিবীর তাবৎ জীব ও জড়র মধ্যে 
যে প্রাকৃতিক বন্ধন তা-তো তুমুল সম্পর্ক-শৃঙ্খল
ভোরবেলার সঙ্গে সূর্যোদয়ের মনোরম সম্পর্ক
পাখিদের চরম উস্কানিতে তা আরো প্রবল
রাতের অন্ধকার সম্পর্ক ঢেকে ফেলে সমস্ত চরাচর
যেমন শ্রমিকের ঘামের সঙ্গে মালিকের সম্পর্ক বরাবর
পার্বতীপুর ট্রেন-স্টেশনে যে মেয়েটি চোখের জল ফেলেছিল
সেটা কোন সম্পর্কের দায়?
কিংবা পুরো অংক ক্লাশটা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার অপরাধে
যে বেত্রাঘাত... সেটা কোন সম্পর্কের সূত্রপাত?
ধরো, যদি সূর্যের সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়
কক্ষপথে ঘূর্ণনময় মহাবিশ্ব খসে পড়বে নিশ্চয়

সেই অর্থে ভাঙা গুঁড়ো গুঁড়ো আমার দুঃখিত সম্পর্কগুলো 
কোনোদিন আগের মতো জোড়া লাগবার নয়!

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //