শ্বদন্ত
রে চাঁদ, রে শ্বদন্ত, জ্বলন্ত এনামেল, রাত্রির
অভ্যুত্থানকারী, তুমি গড়িয়ে ছড়িয়ে পড়তে
দাও তোমার আলো নিরাবরণ ভূমি ও
জলাভূমির দিকে- সময় আসিয়া সময়
চলিয়া যায়- পাতায় পাতায় কথা বলা
বাতাস, হুহু বাতাস, আমাকে জড়িয়ে
ফ্যালো; আমার আত্মায় তোমার সুঘ্রাণ
ছড়িয়ে দাও
দীর্ঘমুখা দেবতা এসো, রক্তজমা কফ থেকে
দূরে অনির্ধারিত জন্মের বেদনায়; বিষ্ঠার
নামে যকৃত লালা তথা প্রতিভা থেকে
তোমার জন্ম- জ্বলন্ত এনামেল, রৌপ্যরং
তোমার আলো; আলোয় ধোয়া কফে
পিচ্ছিল আমার বেসিন শ্লেষ্মায় বীজাণুতে
ভরা সময়ের আগেই আমি সরিয়ে নেবো
তুমি শুধু গড়াও, গড়িয়ে গড়িয়ে যাও-
বাদবাকি কুয়াশামলিন কুহেলিকাময়- সবুজ
ফলের তৈলাক্ত ত্বকে নির্বিরাম তুমি শুধু
ঢেলে দাও নরম পারদ- ফলের ভিতরে
কীট, কূটচাল, ষড়যন্ত্র তাহার অধিক;
বাদবাকি স্মৃতি, দূরবগাহন
তবু অধিপতি, রাত্রির অধিপতি এসবের
নামে উহ্য থেকো
আগুনে পুড়ছে কাঠ, উপরে আকাশ-
আকাশ অনেক দূরে, তবু সে আকাশে
জলজ্যান্ত জ্বলতেই থাকো- তুমি গড়াও,
গড়িয়ে গড়িয়ে যাও রে চাঁদ রে শ্বদন্ত জ্বলন্ত
এনামেল...
প্রবেশদ্বার
হেমন্তের রাত ঝরাপাতার
অন্তহীন এক মহা-শ্মশান
এখানে সব পথই প্রবেশদ্বার
শূন্যে পেতে রাখা হাওয়া-সোপান
পূর্ণিমার চাঁদ ধড় বিনাই,
আকাশে ভাসে কাটা মুণ্ডু তার;
কোথাও কেউ নেই। কেউ কি নেই?
এখানে সব পথই প্রবেশদ্বার।
প্রবেশদ্বার বটে, ফেরার নয়,
শেষের শুরু হলো এইখানেই;
শুরুর প্রাকভাগে এইতো হয়
কোথাও কেউ নেই। কেউ কি নেই?
অনেকে আছে, তারা নামবিহীন
হেমন্তের শেষে অনন্তর
শীতের পাদদেশে ধুলামলিন
ঝরাপাতার নিচে তাদের ঘর
প্রবেশদ্বারহীন সেসব ঘর
আসলে ঘর নয়, গণকবর।
রাক্ষস
সবাই ছিল ঘুমে
খরদুপুরের দিকে
বসন্ত মরশুমে-
জন্মালো রাক্ষস
ফুলের গর্ভ থেকে
কুঞ্জে পাখি গায়
-নিজের জন্য ক্ষমা
ফুল ফোটেনি বনে
শরীর জাপটে ধরে
ফুটলো আদমবোমা
বনচড়ুইয়ের ডাকে
দুপুর ফেটে ফানা,
চারণভূমির ঘাসে
কাঁদছে আন্তিগোনে
ফুলের বা কী দোষ
জন্মালো রাক্ষস
আমার জন্ম হলো
ফুলের গর্ভ থেকে,
ফুল করে তা গোপন-
পাপড়ি দিয়ে ঢেকে।
সিরাতুল মুস্তাকিম
ও গো সংগ্রাম, তুমি কার?
কেনো তুমি হেঁটে হেঁটে
আসো না কো দুয়ারে আমার!
এখন তো মাঝরাত, দুনিয়া আন্ধার
এই নাকি মিলনের শ্রেষ্ঠ সময়?
তবে কেন ভয়?
ওদিকে যেও না ওরা ডান
ওদিকে যেও না ওরা বাম
মাঝপথে আসো তুমি,
সরু আল ধরে আসো ছেড়ে দিয়ে গ্রাম
সিরাতুল মুস্তাকিমে ও গো শ্রেণী সংগ্রাম
ফেলে দাও কোল থেকে দুধের সন্তান
না দোহানো গরুর মতন গোঙাতে গোঙাতে আসো,
জমে থাকা দুধের ব্যথায় ফাটুক ওলান
শহরে প্লাবন হোক, বান হোক বান
বিপ্লব দীর্ঘায়ু হোক,
সাবধানে দু’পা ফেলে মৃতের শহরে আসো
শীতাতপ শবাধার আমার মোকাম
লাশ পেটে বসে আছে- এ শহর, হিমঘর
শতাব্দীর ঝিকিমিকি স্যানাটোরিয়াম!
গান্স অ্যান্ড রোজেস
গান্স অ্যান্ড রোজেস গল্প-
জন্মান্ধ সেই বাদশা, রাজকন্যা,
সাইক্লোপস সে একচক্ষু এক দৈত্য
তার জন্য সন্ত্রস্ত, দৌড়াচ্ছে বন-মধ্যে
আজ সূর্য তেজ-গর্ভ আর জোছনা, ঝড়-বৃষ্টি, হেম-অভ্র
নির্বিঘ্নে একসঙ্গে জল-অগ্নি সব ঝরছে
আজ সূর্য ঝড়-বৃষ্টি, আজ জ্যোৎস্না
নির্লিপ্ত, কেউ কাউকে ডাক দিস্ না
দেখ্, দেখ্ রে-
উদ্ভিন্ন ফুল ছিন্ন,
উদ্বাস্তু সেই বাদশা শর-বিদ্ধ;
লালরক্ত উদ্গীর্ণ,
এই মৃত্যু তার বার্তা রাজ-দূর্গে পৌঁছায় না
রাজকন্যা সেও পঙ্গু
এক ঠ্যাং নাই, বন-মধ্যে দৌড়াচ্ছে বালখিল্য
হাঁট্ পঙ্গু, হাঁট্ ল্যাংড়া
হাড়-মজ্জা সব চূর্ণ তাও দৌড়া
উত্তুঙ্গ ঝড়-বৃষ্টি দেয় ঝাঁপটা
চমকাচ্ছে মেঘ বজ্র, কাল-বিজলি চমকাচ্ছে
-উদ্ভিন্ন ফুল ছিন্ন,
উদ্বাস্তু রাজকন্যা শরবিদ্ধ
লালরক্ত উদ্গীর্ণ
এই মৃত্যু তার বার্তা রাজদূর্গে পৌঁছায় না
একমাত্র-
চোখ-চালশে এক মিনসে
বানপ্রস্থ ত্যাগপূর্ব
পীরদরগায়
দেয় সিন্নি...
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : হিজল জোবায়ের কবিতা
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh