ফকফকা এক চাঁদের রাতে বাড়িতে বউ ছিল না।
কে যেন পাঁচিল ডিঙিয়ে এসে দরজার কড়া নাড়ল
নাম ধরে ডাকতে থাকল আমাকে
বুকে থু-থু দিয়ে একটা মোটা লাঠি-হাতে দরজা খুললাম
আগন্তুকের চেহারা দেখতে পেলাম না। তবে
স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম অবিকল আমারই মতো গলা
সে জানাল, তারও নাম জুয়েল মাজহার
নামের মিল দেখে খুশি হয়ে উঠি
এরপর আমরা মেতে উঠি খোশগল্পে
আজ রাতে তারও নাকি ‘বউ বাপের বাড়ি গেছে’
সাম্রাজ্য-গুটিয়ে-নেবার-আগে
ব্রিটিশদের-টেনে-দেওয়া-ষড়যন্ত্রময়-সীমান্তরেখার মতো
একটা আয়না এসে আচমকা আমাদের মাঝখানে
নিরালম্ব হ’য়ে ঝুলতে থাকে
দেখতে পাই, আমাদের দু-জনের
একই রকম খোমা, গায়ের রং, উচ্চতা-ওজন
দু’জনেই ভড়কে গিয়ে বলে উঠি:
এমনটা হতেই পারে না
এসো তবে নগ্ন হই ; দেখি, আমাদের আর কত মিল
নগ্ন নাভির নিচে কুঁচকিতে একই রকম জন্মদাগ
অবিকল অণ্ড-শিশ্ন অবিকল তিল ও জড়ুল দেখে
আমাদের মনে হতে থাকে এসবই ষড়যন্ত্র
আমরা পরস্পরকে সন্দেহ করতে শুরু করি
মেজাজ হারিয়ে আমরা মেতে উঠি ঝগড়ায়
আয়নার ভেতর থেকে আর আয়নার বাইরে থেকে
সে আমাকে আর আমি তাকে শাসাতে থাকি
পরস্পরকে চেহারা-চোর, খোমা-চোর, শিশ্ন-চোর বলে
চিপা গল্লির ঘাউড়া কুত্তার মতো চিল্লাতে থাকি
ঝাড়তে থাকি নানা রকম কাঁচা খিস্তি
কিন্তু কোনো খিস্তিতেই আর আমাদের মন ভরে না
পুরুষালি খিস্তিকে মনে হতে থাকে অতিব্যবহৃত আর পানসে
আমরা তখন বাতাসে হাত বাড়িয়ে পেড়ে আনি
তৃপ্তি সান্ত্রার লেখা ‘মেয়েদের চোরাগোপ্তা স্ন্যাং’
অতি হর্ষে, অতিশয় আশ্চর্য পুলকে
আমাদের উভয়ের নগ্ন প্রত্যঙ্গ কেঁপে ওঠে
আমাদের অজান্তে তৃপ্তিদি আমাদের পেছনে এসে দাঁড়ান
তাঁর গলা খাঁকারি শুনে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাই আর
ভীষণ শরমিন্দা হয়ে পড়িমরি ছুটে পালাতে যাই
তখুনি ধাক্কা লেগে আয়নাটি ভেঙে চৌচির হয়ে যায়
টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে নানা দিকে
আমাদের আর দেখা হয় নি
সেই থেকে পরস্পরের কাছে আমরা মৃত
আয়নার ভাঙা টুকরোগুলোর ভেতরে, নামহীন অসংখ্য অদৃশ্য কবরে
আমরা দু’জন জুয়েল মাজহার চুপচাপ শুয়ে অছি
আমরা আর কোনোদিন খোশগল্পে, খিস্তিতে-ঝগড়ায় মেতে উঠবো না
বিষয় : জুয়েল মাজহার কবিতা সাহিত্য
© 2022 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh