মোস্তাক আহমাদ দীনের গুচ্ছকবিতা

স্মৃতি

এই ভাসা পানসি নাওয়ে 
আঁকা-বাঁকা হয়ে পড়ে আছে চাঁদ 
গাদা গাদা মানুষের পায়ে

এই পারাপারে 
এই গাঢ় রাত্রিবেলা 
কারা কারা যেন সূর্যব্রত গায়

এই গীত-রমণীদের 
তুমি উল্টোভাবে এঁকে
চেপে ধরে রাখো স্থিরবুদ্ধ, গণেশ পাইন

ব্যতিক্রম

সব নদী ঘুরেফিরে সমুদ্রেই যায়-
তোমাকে লক্ষ্য করে এই বোধ
নির্বোধের রূপ নিলে ভালো হতো বেশ। 
ক্ষীণস্রোতা বলে আমার ব্যথার জলে নদী নয়, 
ভেসে যায় ডোবা ও পুষ্কর 

দুঃখে দুঃখে জানি ম্লান হবে সুখের সয়াল!

অকাল

মাঝেমধ্যে কথা উড়ে এসে
প্রতিকথাদের গোরচাপা দিয়ে
চলে যায় শুনি

কথা আসে, কথা ফিরে চলে যায়

আমি খুদকুঁড়ো, এই ধুলোকথারাশি
কিছুই দেখি না, কিছুই শুনি না
শুধু বুঝি, হাওয়ামাত্র অকালশ্রাবণ

দেখি না কিছুই, শুধু বুঝি,
এই যাতায়াতে
অশরীর মিশে আছো তুমি

সন্ধ্যামালতীর কথা

সন্ধ্যামালতীর কথা ওঠে আজ
এই অকারণ ভোরে
পাখি নেই, জঙ্গলে দারুণ বিস্ময়

বিপরীত যাতায়াতে এইখানে
অতি চুপে চুপে নারীরা প্রসব করে শিশু;
আর, সেই কল্পকথা দূর করে দিতে
তাহাদের বেকুফ স্বামীরা
সারি-সারি বসে থাকে দুপুরের রোদে

গোলাপ বাগানে

অযথা কর্কশ গোলাপ।
অন্তরঙ্গে জ্বলে-পুড়ে প্রকট-উজ্জ্বল।
নরম আলো থেকে যে-ফুলকি বেরিয়েছে আজ,
তাতে পাখি আর পতঙ্গ কাঁপে। নিখুঁত। করুণ।
সত্যি সত্যি মনে হয়, দারুণ অসহ্য আজও, সবকিছু
নির্বিরোধ : কোমল সুন্দর

গো-ধূলিতে, কুড়া নদীতীরে

নাও যদি একা-একা যায়
তবে কেন পাল তোলা তার?
গো-ধূলির রঙে কেন তবে
গুণ-টানা মাঝির উতার?

কারা গান গায়, কারা নাচে,
অকারণ ধূলি ওড়ে ওই,
আলভোলা কুড়া নদীতীরে
গো-ধূলি না ময়না টেকই? 

দেখি তারা-সেই নৃপাখিরা
ভরগাছে খুব মুখবাজ
দাঁতে আর ঠোঁটে তারা ক্রূর,
ঠোকরায়, ভারি রঙবাজ। 

যে-লোকেরা একা একা চলে,
ভাও পেলে দুপুরে উঙায়
রাতে তারা ছিট-পথে ঘোরে
আড়ে আড়ে ব্যস্ত বুঙায়।

তারা আজ গো-ধূলিতে বসা
নাওখানি পাল তুলে যায়
আমাকেও সাথি হতে ডাকে,
কুড়াতীরে অনেকেই চায়।

কুড়াতীরে একা বসা বটে
তবু আমি রাধার কানাই
বিশাখায় মাঝে-মাঝে থাকি,
তা না হলে রাধাগান গাই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //