ডিলান টমাসের দুটি কবিতা

ডিলান টমাস ১৯১৪ সালের অক্টোবরের ২৭ তারিখে ওয়েলসের সোয়ানসিতে জন্মগ্রহণ করেন। মা ফ্লোরেন্স হান্নাহ ও বাবা ডেভিড জন টমাস। সাহিত্যের শিক্ষক বাবা ডেভিড টমাস ছিলেন উচ্চশিক্ষিত ও সাহিত্যানুরাগী। প্রকৃতপক্ষে, ডিলান নামটি ওয়েলসের প্রাচীন গল্পের সংগ্রহ The Mabinogion-এর একটি চরিত্র Dylan ail Don-এর আদলে রাখা যার অর্থ সমুদ্র-সন্তান।

মাত্র ২০ বছর বয়সে প্রথম কবিতাগ্রন্থ এইটিন পোয়েমস প্রকাশিত হয়। কবিতা গ্রন্থটি প্রকাশের পর পরই কবিতার আলোড়িত বাগানে প্রমত্ত ঝড় তোলে।

ডিলান টমাস অল্পবয়সেই কবিতার দারুণ অনুরক্ত হয়েছিলেন মূলত তার বাবার সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগের কারণে। কেননা পড়তে শেখার বয়সের আগেই তার বাবা তাকে পড়ে শোনাতেন শেক্সপিয়ারের বইগুলো। পরবর্তী সময় জেরার্ড হপকিন্স, এডগার অ্যালান পো, ডব্লিউ বি ইয়েটসের কবিতা তাকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করেছিল। ক্ষ্যাপাটে ডিলান কৈশোরেই পড়ে ফেলেছিলেন ডিএইচ লরেন্সের প্রকৃতি সংক্রান্ত কবিতাগুলো। 

ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবর্তে তিনি নিজে নিজে পড়তে আগ্রহবোধ করতেন। যদিও তিনি ইংরেজি ভাষায় ব্যাপক পারঙ্গমতা অর্জন করেছিলেন, কিন্তু অন্য বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করায় তাকে ১৬ বছর বয়সে অবশ্য স্কুল ছাড়তে হয়েছিল।

ডিলান টমাসের ৩৯ বছরের জীবনটি ঘটনাবহুল। ১৯৩১ সালে স্কুল ছেড়ে দেওয়ার পর যোগ দিয়েছিলেন পত্রিকার চাকরিতে। কিন্তু পেশা হিসেবে লেখালেখিতে পুরোদস্তুর মনোনিবেশ করতে চাওয়ায় ১৯৩২ সালে পত্রিকার চাকরিও ছেড়ে দেন। এরপর লন্ডনে এসে পোয়েটস কর্নার বুক পুরস্কার অর্জন করেন এবং ১৯৩৭ সালে কেইটলিন ম্যাকনামারার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে জড়ান।  

এয়ারক্রাফট গানার হওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন তিনি, কিন্তু দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবে  চলচ্চিত্র ও বেতারের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার পর চিত্রনাট্য লেখা তথা চলচ্চিত্রের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে হয়েছিল অপার। এই সম্পৃক্ততা তার কবিতা বাগানে নতুন ফুল ফোটাতে দারুণ সহায়ক হয়েছিল।

ডিলান টমাসের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হলো: এইটিন পোয়েমস; ডেথস অ্যান্ড এন্ট্রান্সেস;  ইন কান্ট্রি স্লিপ, অ্যান্ড আদার পোয়েমস; টোয়েন্টি ফাইভ পোয়েমস; দি ম্যাপ অব লাভ; আ পোর্ট্রটে অব দি আর্টিস্ট এজ আ ইয়ং ডগ; অ্যাডভেঞ্চারস ইন দি স্কিন ট্রেড; আন্ডার মিল্ক উড।

শিল্প-সাহিত্যের কোনো ধরনের গ্রুপ, আন্দোলনে নিজেকে জড়াননি ডিলান টমাস। ৩৯ বছরের এক স্বল্পপ্রজ আয়ু নিয়ে পৃথিবীতে এসে নিবেদিত ছিলেন শুধু কবিতার প্রতি। কবিতায় মত্ত হওয়ায় জীবদ্দশায় ভীষণ উন্মাদ ও ধ্বংসাত্মক কবি হিসেবে আখ্যা পেতে হয়েছিল ডিলানকে।

মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত অবিশ্রান্ত লিখে যাওয়া ডিলানকে কবিতা দিয়েছিলও দুহাতে। তিনি ওয়েলস তথা বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম কবি হিসেবেই শুধু পরিগণিত হননি, ১৯৫০ সালে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেখানেও হয়ে উঠেছিলেন বহুলপঠিত, আলোচিত। ১৯৫৩ সালে অকাল মৃত্যুর পর ডিলান টমাসের নামটি যেন বিদ্যুতের গতিতে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। 

চন্দ্রমহলে কোনো সঙ

নিথর ঝর্নার স্রোত আমার অশ্রুজল
যেনবা জাদুর গোলাপে পাপড়ি ঝরে;
আর ভেসে আসে আমার কান্নাদল
অস্মৃত যত আকাশ, তুষারের চিড় থেকে।

 যদি স্পর্শ করি কখনো পৃথিবীটা,
মনে হয়, ভেঙে হয়ে যাবে খান খান;
এমনই করুণ-সুন্দর এ-পৃথিবী,
কোনো স্বপ্ন যেন শঙ্কিত ভীষণ।

অন্তিম সেই রাত্রিতে তুমি যেও না আনত

অন্তিম সেই রাত্রিতে তুমি যেও না আনত
জ্বলে যাক, উঠুক গর্জে শেষক্ষণে বার্ধক্য;
জ্বলো, নিভন্ত আলোর শঙ্কায় দারুণ জ্বলে ওঠো।

জ্ঞানীলোকই জানে দিনশেষে শুধু মৃত্যুই চূড়ান্ত,
কেননা তাদের কথায় নেই বজ্রের ঝলকান
অন্তিম সেই রাত্রিতে তুমি যেও না আনত।

সৎলোকই কাঁদে ভেঙ্গে শেষঢেউ ভীষণ শুভ্র
দুলতো তাদের কীর্তিগুলো যদি সাগরে শাশ্বত,
জ্বলো, নিভন্ত আলোর শঙ্কায় দারুণ জ্বলে ওঠো।

ক্ষ্যাপালোকই গায় উন্মত্ত গান থাপড়িয়ে সূর্য,
বড্ড দেরিতে সূর্যশোকে তারা হয়েছিল ম্লান,
অন্তিম সেই রাত্রিতে তুমি যেও না আনত।

সজ্জনলোকই দেখে মুমূর্ষুতায় অন্ধচোখের আলো
অন্ধচোখও হয় উৎফুল্ল জ্বলে উল্কার ঝলকান,
জ্বলো, নিভন্ত আলোর শঙ্কায় দারুণ জ্বলে ওঠো।

আর তুমি, মৃত্যুর দুয়ারে অটল, আমার পিতা,
অনুনয় করি সনির্বন্ধ, তোমার ক্রুদ্ধ কান্না মায়
আমাকে করো আশীর্বাদ, গালমন্দ।
অন্তিম সেই রাত্রিতে তুমি যেও না আনত।
জ্বলো, নিভন্ত আলোর শঙ্কায় দারুণ জ্বলে ওঠো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //