আগা শহীদ আলীর কবিতা

আগা শহীদ আলী (১৯৪৯-২০০১) একজন কাশ্মীরি-আমেরিকান কবি। তার লেখালেখির মাধ্যম ছিল ইংরেজি। ১৯৭২ সালে ২৩ বছর বয়সে দিল্লিতে প্রকাশ হয় তার প্রথম কবিতার বই: Bone Sculpture (হাড়ের ভাস্কর্য)। তা ছাড়াও অনুবাদ করেছেন ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের কবিতা : The Rebel's Silhouette; Selected Poems. পেয়েছেন অসংখ্য ফেলোশিপ এবং পুশকার্ট পুরস্কার। শহীদ কাশ্মীর উপত্যকায় বেড়ে ওঠেন। পরবর্তীকালে ১৯৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। শহীদের বাবা আগা আশরাফ আলী ছিলেন একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং তার দাদি বেগম জাফর আলী ছিলেন কাশ্মীরের প্রথম নারী ম্যাট্রিকুলেট। শহীদ বার্ন হল স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরের বছর ১৯৮৫ সালে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএফএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষকতা করেন। শহীদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন শিয়া মুসলিম হয়ে কিন্তু তার লালন-পালন ছিল একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ। শহীদ আর তার ভাই ইকবাল উভয়েই একটি আইরিশ ক্যাথলিক প্যারোকিয়াল স্কুলে পড়াশোনা করেন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাড়িতে কোনো ধরনের সংকীর্ণতার ইঙ্গিত ছিল না।’ ২০০১ সালের ৮ ডিসেম্বর মস্তিষ্কের ক্যানসারে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ

শেষ জাফরান
জাফরান চাষের পাশেই আগ্রহে আসে ডাল হ্রদের ভাসমান উদ্যান যা টেনে নিয়ে যাওয়া যায় জায়গায় জায়গায়।

১.
আমি মরব শরতে
কাশ্মীরে
আর প্রতিটি শিরার অগোচরের রুটিন
প্রায় সংবাদ হবে
সেন্সর হবে রক্ত
জাফরান রঙের সূর্যের জন্য
আর বৃষ্টির সময়
বিক্রি হবে ব্লাকে
তারপর অদৃশ্যভাবে ধ্বংস হবে
জিরো ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে
গ্রিন্ডলেইস ব্যাংকের বেষ্টনীতে
পেরেক মেরে ট্যাবলয়েড টানাবে লোক
বালকের ছবির নিচের শিরোনামে খুঁজব
রক্তের কোনো চিহ্ন
এপ্রিলের বন্যার পরে
যারা ক্রমে ক্রমে নিহত হয়েছে
খাত-কাটা স্রোতজলে
ঝিলামের মতো প্রতিটি কণ্ঠস্বর
গলা থেকে ছিঁড়ে গেছে
ফিরে গেছে তাদের অ্যাকাউন্টে
পেয়ে গেছে নগদ টাকা
ব্যাংকের প্রতিচ্ছায়ায় সিলগালা
আমি খুলে দেবো তরঙ্গ
রচনা করব প্রতিটি শান্ত ভারসাম্য
চালকরা যা-ই প্রত্যাশা করুক
যে কোনো উপায়ে অর্থ প্রদানে প্রস্তুত
ম্যাপল সবুজ চোখ প্রতিজ্ঞা করবে
‘আমি তোমাকে যে কোনো জায়গায় নিয়ে যাব
এমনকি কারফিউ সময়েও’
আমাকে দাও ফুলের তোড়া
‘পুষ্পস্তবক অর্পণ নিষিদ্ধ!’


আমি মরব অক্টোবরের শেষের দিকে আর তা হয়ে যাবে খুব আগে : সে আমাকে নিয়ে যাবে পাম্পোরে যেখানে ফুল কুড়িয়ে ফিরে যাব আমি ট্যাক্সিতে। কত হাজার পুংকেশর? হাতের মুঠোয় পিষ্ট হয়ে টকটকে লাল। আমি চিৎকার করব : ‘জাফরান, আমার পারিশ্রমিক!’ সে ভাঙবে সীমা। প্রতিটি গুজব আমার করবে তাড়া। নিশাত থেকে নাসিম পর্যন্ত সব চায়ের দোকানে বারবার শুনব আমরা-----‘শহীদকে দেখেনি কেউ।’ সে শালিমার ঘাটে থামবে। আর আমরা সিঁড়ি বেয়ে নামব জলে। তীর থেকে দুই গজ দূরে সে বিচ্ছিন্ন করবে কিছু জমি। আমি তার শেষ সহযাত্রী। হঠাৎ তার বয়স বাড়বে। কণ্ঠ ভেঙে যাবে। তার দৃষ্টি সবুজ জল-----আমাকে ধোবে : ‘পাম্পোরের পোড়া ক্ষেতের এই সোনা আর ফলবে না-----আর ফলবে না।’ সিকিউরিটি জোনের বাইরে সে মুক্ত পৃথিবীকে সারিবদ্ধ করবে। ঢেউয়ের উপর জাফরান রঙের সূর্যাস্তে তাই আমার রক্তই খবর।

৩. 
হ্যাঁ, আমি স্মরণ করি সেদিন
যেদিন আমি মরব, আমি চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেই অরুণ

আকাশের অনেক আগেই, ছড়িয়ে পড়া বাতাস
তীব্র বেগে ছোটা রঙ আর পৃথিবীর এক টুকরো রক্তক্ষরণ

বেলাভূমি থেকে দূরে, যেদিন আমরা গিয়েছিলাম
সেদিন আমি মরব, পেরিয়ে প্রহরী আর তাকে

পৃথিবীর শেষ জাফরান রক্ষক, সারিবদ্ধ করে আমাকে
একটি দ্বীপের উপর একটি কবরের আকৃতি

দুই গজ উপরে সে আমাকে সারিবদ্ধ করল সূর্যাস্তের মধ্যে
সমস্ত ব্যথা পেরিয়ে, সবার মুখেই ছিল আমার মৃত্যুর খবর

শুধু সুমধুর সেই দুই লাইন
ছেঁড়া, তার উপর:

‘যদি পৃথিবীতে স্বর্গ থেকে থাকে
এটা তাই, এটা তাই, এটা তাই’

* পাম্পোর কাশ্মীরের ঝিলাম নদীর পূর্বে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক শহর। পাম্পোর পৃথিবীর কয়েকটি স্থানের মধ্যে একটি যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলা জাফরান জন্মে। এই শহর কাশ্মীরি ভাষায় পাম্পার বা পানপার নামে পরিচিত।

* নিশাত কাশ্মীরের শ্রীনগরের পূর্ব উপকণ্ঠের একটি শহর যা বাগানের জন্য বিখ্যাত। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের কেন্দ্রীয় রাজধানীর গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। এ শহর বিখ্যাত নিশাত বাগানগুলোর জন্য। পর্যটকদের জন্য এটি খুব জনপ্রিয় একটি স্থান। এটি শ্রীনগরের বিখ্যাত ডাল হ্রদের কাছে অবস্থিত বারোটি উঁচু সোপানের একটি বাগান। আর নাসিম বা নাসিম বাগ হলো এর ঠিক উত্তর-পশ্চিম দিকে নির্মিত একটি বাগান। বাগানটি কাশ্মীরের প্রাচীনতম মুঘল বাগানের একটি। মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে এটি গড়ে তোলেন। ১৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট শাহজাহান ১২০০টিরও বেশি চিনার গাছ রোপণ করেন। এটি কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা চিনার হেরিটেজ পার্ক হিসেবে বিকশিত হয়। বর্তমানে পার্কটিতে সাতশর মতো চিনার গাছ রয়েছে।

* শালিমার ঘাট ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের শ্রীনগর শহরে অবস্থিত। 


মধ্যরাতে নয়াদিল্লি থেকে কাশ্মীর দেখি
বর্তমানে আর সময়ের সাথে সাথে
সবুজ যেখানেই পরিহিত হয়
ভয়ানক এক সৌন্দর্যের জন্ম হয়
---ডব্লিউ বি ইয়েটস

দূরের পর্বত আয়নাতে
এমন অনুভূতির অভিপ্রায়ে
শুকনো সমভূমিতে একজনকে অবশ্যই
অঙ্গে জড়াতে হবে রত্নখচিত বরফ
কোনো কথা বের হয়ে আসতে না পারা শহর
তার কারফিউময় রাতে এতটাই দৃশ্যমান
যেন সবচেয়ে খারাপ অবস্থাই যথাযথ :

শূন্য সেতু থেকে
সার্চলাইটে তাড়া করা এক ছায়া
ছুটে বেড়ায় তার শরীর খুঁজতে
ক্যান্টনমেন্টের প্রান্তে
যেখানে গুপকার রোডের শেষ
সঙ্কুচিত হয় তা প্রায় শূন্যতায়
যে শূন্যতার বিরাজ জিজ্ঞাসাবাদ গেট দ্বারা
যাতে তা পিছলে যায়
অদেখা থেকে যায়
সেলের মধ্যে:
এক বন্দির পিঠে
ঝুলে থাকা জ্বলন্ত টায়ার গলে গলে পড়ছে
ল্যাংটো ছেলেটি চিৎকার করে বলছে
‘আমি কিছুই জানি না’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //