আলী আফজাল খানের একগুচ্ছ কবিতা

বায়ুথলির মূহুর্তরা ।। 

সেকেণ্ডের গন্ধ শুঁকি, তির তির ডায়াফ্রাম

অতন্দ্র বুলেট বাতাসে শ্বাসের স্রোত চালু করে অল্প দাঁড়ায়

চোখ বন্ধ করে টিক টক টিক টক

সেনানী মূহুর্তরা এগোয় অবশ্য সঙ্গমের দিকে

তার আগে বায়ুথলির মতো কয়েকটা জন্মান্তর কেটে গেছে

পাঞ্জার ভিতর শরীর এনজাইম, প্যান্থার গতির শ্বাস

কিছু মাছের আঁশের ওপর রামধনু আনন্দ পিত্তরস উগরানো নদীর

পায়রারা ডানায় ভীষণ ভিড়ের শব্দ করে সমর্থন জানিয়ে উড়ে গেল

এবার খুন,

ব্লেডের দুপাশ থেকে আঙুল কেটে এগিয়ে আসে শূন্য

নিপুন ব্যাকরণের বিষ চোখের মধ্যবর্তী কারুকাজের দিকে... 

 

 

কালো চিরে বাঁশিতে ফুঁকার।। 

 

অফ ফ্রস্ট- সাদা আরোহন, স্বাদ আরোহন

নাভিতে ঘুম, সময়ে আলোড়ন, সময়ে জাগরণ

হে ব্রহ্মাণ্ড, আলোর সিংহাসন

বাকছবি দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে তুঙ্গে

কিসের এই প্রবল খোঁজ?

স্বরের সতীর অবলোকন?

এজল আর সেজল মহুলের সরগরম

পুতুল ঘরে প্রলাপ, স্নায়ুরা ঘোর

অরূপসুতায় খেলছে কেমন দোদুলটি হয়ে স্বপ্নঘোর

বাহির কি? বাহিরে কি আছে? কি আছে তোমা থেকে পর?

ওই জ্যান্ত, ওই নড়ন, ওই ওম

শ্বাসের গরম

লাশ নাড়ানো লগি

বাক তো অবাক

তন্ত্রসুতোয় বাঁধা এই রূপস্রাবী এক দিগন্তঢলা সমুদ্দুর মন্থন

পারাপারে মেঘার্দ্র বুকের ওঠানামায় জন্মায় মায়াভরে যাপনের গল্পকাঁথা

শব্দের নিজস্ব ভাঙাগড়ায় বাতাস না পানি?

জলের ধারণ এক বায়ু সাধনা, ধ্বনি তো প্রসাদ পূজার

শীত পেরিয়ে রোদ যখন গমগম

চামড়ার ওপর আঁচ বাড়ে যত তত এক হু হু হাওয়া বয়

এমন আকুলিবিকুলি করে দেয় ভেতর, তাক রোদ

ভেতরে জন্মদাগ ধরে অথৈ হয়ে থাকে যে নীল গর্ভজল

চামড়ার মানুষ কেবল টের পায় সে হাওয়া

নরম বুকের মানুষ বুঝতে পারে তার মনকেমন

স্রোতালো আঁইঠাঁই যুগান্ত অঘোরী

দেহলী পুড়িয়ে ঊর্ধ্বগাঙে ছায়াকালো ঢাল মেলে ধরে আকাশ

অঙ্গছেড়ে ব্রাত্য অমল আলোর সংসারে

যেন মৃতদেহের পাশে রাখা ধূপ ধোঁয়া ছাড়ে দীর্ঘশ্বাসী

তীব্র ঠোঁটে এগিয়ে নিয়ে যায় শাঁখারঙ

রগড়েনিগড়ে যোগ অযোগ, বোধ ও নিরোধ

যখন পাহাড়ের অঙ্গভাঁজ থেকে ভাপশ্বাস তুলে উঠে আসতে থাকে শ্বেতাবয়ব মেঘ,

তখনও

ডানার পাখি জলের তীরপূর্ণী থেকে রিদম তুলে নিয়ে বিলকুল জ্বর গুণে পিছলবর্গের গাথাকাব্যে

”সে তো বায়ুর সাধনা..ষড়রিপু নিয়ন্ত্রণে জল লাগে গো, রসে থাকতে হয়"

স্নায়ুরা ঘোর অপেক্ষায় তিরতিরে পাতা সবের কাঁপন ঘেঁষে

বাতাস তার নিঙড়ানো টান রুয়ে দেয় ভেতরে,

আশ্চর্য ফুলগুলি

রাক্ষস থেকে ফুলকুমার, সব্বার অন্তরে!

ওষ্ঠে এক খানি চুপ শূণ্য ছুঁড়ে দিলে গোলাকার উত্তর আসে চৌখুপি যেখানে আমি নেই ভেবে উপুড় ধড়াস হেনে অঙ্গলাগি হাওয়া কেটে জমজম ছুটে গেল মস্তানি সাদারণ শরজমিন

-"মানুষ কি পরশপাথর?এত ছুটে ছুটে যায় অন্য মানুষের ছোঁয়াচে,সে কি তাদের চলাকে সোনা করবে বলে একটুখানি?"

খন তারা বলে "তুমি স্বাভাবিক নও" আমি এটা নিয়ে ভাবি, আমি চারপাশে তাকাই...

দীর্ঘশ্বাস আর আমি নিজেকে বলি, মন কম...

না হে,কোন চালচিত্র নাই সে লিঙ্গ নাই যোনি নাই... পট নাই অতীত বলার নাই নস্টালজিয়া এই আজ হইতে,খরচ করিবার প্রতুল শব্দও.. প্রত্যেক শব্দের নাকি থাকে,মাথার তাজ, তাকে যত্র তত্র বসিয়ে... 



চন্দ্রনাথ।।


চন্দ্রনাথের মতো কিছু আমি আমার জীবনে এর আগে দেখিনি!

প্রথম দৃশ্য থেকে অবাক শুরু,

এক একটা দৃশ্যে পাতলা স্তরের মতো এক একটা চেঞ্জ ধরার জন্য যে বা যারা অপেক্ষা করতে পারে এত দীর্ঘকাল,

তারা তো অমোঘ জানে কি সাধনা অতিপ্রাকৃতিকে,

প্রকৃতি যখন অতি থেকে অসীম হয়ে যায়...

তারা তো নিশ্চয় করে জানে স্বস্থ সাধনায়,সমস্ত দর্শনের শেকড় প্রকৃতির গায়ে একমাত্র সেখানেই উত্তর পরে বসে থাকে বহুধা...

কোন পোশাক নেই দৃশ্যগ্রহণে,কোন পোশাকি নেই ভাষায়,অদ্ভুত নিজস্ব উচ্চারণ!

যে জানে পবনের ধর্মকে,আর কেবল একটি উচ্চারণেই থমকে থেকে যায় শ্রোতার ওপর পরম ভরসায়,সে সাধক কী তীব্র সহজিয়া!

এ মানুষ থাকে কোথায়? এমন মানুষেরা?

কতখানি পড়ে ফেললে একখানি জায়গাকে,দিনে রাতে বরষাবাদলে অমন এক একখানি উঠে আসে হাতে,

আর কেবল আত্মবিশ্বাসের সাথে ভিন্ন পরনে এক প্রকৃতি!

কোন অনুসন্ধানের দিকে বাঁক নিয়েছে এই চন্দ্রনাথ??

আকাশের ঔরসজাত নক্ষত্রস্নায়ব মাটিজ সন্তানেরা নিজস্ব থতিয়ে চুপ, এসে এপারওপার কোমল ঠেলে গেল চোখের বাক চোখের অবাক…

,আর বৃষ্টি আমূল পড়ে ফেলল মাথা।

….শুরু হল সেতুবন্ধ।

তালের আঁকুড় খেয়ে ফেললে যেন সাঁওতালনীর পান্তাভাতে আকাশের ছায়া পড়েছে কিছু,

তেমন গান্ধারীগর্ভায়ু কৌরবজন্মেরা একত্রে শুরু হয় দিগবিদিক শুদ্ধসত্ত্ব, জন্মান্তরের পাপ ধুতে ধুতে….

তখন,

যখন পৃথিবীর যার সূর্যবর্ণা চিকনগায়ে

আর রাধা…আর কৃষ্ণ!

"শ্যাম অঙ্গে রাই অঙ্গ হেলিয়া লহঅঅ!"

সে লোমশ সবুজের পুরুষ পেঁচিয়ে ধরেন প্রকৃতির নগ্ন,আর চেয়েই থাকেন অপলক…

থমকটুকু ঘিরে …

যার প্রত্যেক ফোঁড়ে পিঠ দেয় চাঁদ,আঁধারিয়ানার এক এক পটচিত্র উজলউজাড় করে…

কালো চিরে বাঁশিতে ফুঁকার দেন মোহনিয়া,

আলোর সরু গাঙে মাথা তৎক্ষণাৎ ঝুঁকিয়ে নেয় দৃশ্যটির ঝুপালো গাছ…


"ধর্ম সেখানে পবন…"

বড়ো সহজ সাধনা নয় তার, প্রত্যেক থম প্রত্যেক থরে অগভীরটুকু উড়িয়ে দিয়ে নিখাদ আনন্দে মন্থন মেরে তুলে নেয় যেটুকু রূপ-রস-গন্ধ-শব্দ-স্পর্শ বহতা…

অজস্র উথালে গর্ভ করে আসে অবধারিত ব্রহ্মাণ্ডযোনিতে…

আর

বুকের শিরায় চমক গুঁজে অতর্কিত আছড়ে ওঠে প্রণবম…

দেজা ভ্যুঁ পাহাড়ী বাঁকে নড়ে উঠল যে,

যুগযুগান্তের দেরজু উজালা কেউ…

তার জীবজিহ্বায় উচ্চারিত হবে পুরুষ এবং প্রকৃতির মধ্যবর্তী আনহোনি যেন...

চন্দ্রনাথ সেই মধ্যবর্তীর চেতনপুরুষ,

কিম্বা সেই পথক্লান্তের রাইপ্রকৃতি..

অথবা,

জীবন্তজিহ্বাটুকুই!

  

একান্তে নিজের সিন্ধু

 

-"নিজের ভিতরে দেখো গো,ফল্গু চাইলে ফল্গু,সিন্ধু চাইলে সিন্ধু,চুপ করে বসে যমুনা হবে যদি ভাবো তাও পাবে রাঙাচরণ…ভিতরে দেখো…"

-"আমার 'নিজে' বাড়বে কেমন করে যদি আরো লোকের দেখা এসে না জোটে,বলা এসে না জমে শোনা এসে?"

-"নিজের ভেতরঘর নাইকুণ্ড পর্যন্ত এক ব্রহ্মাণ্ড বেড়ে যায় ডুব দিলে তেমন,আর ওপরে দেখোই না সুজ্যিচন্দ্রতারার ঘর,কতদূর দেখতে পারো তুমি…

-"নদীর জলে কানসোনা কতবার হারিয়েচ বলো দেখি ছোট্ট থেকে?"

 -"জানো কি অদ্ভুত একটা প্রশ্নেরও জবাব দিয়ে দিলে তুমি এর মধ্যে দিয়ে…

সেই ছোট্টবেলা থেকেই দেখেছি,

এমন নয় পড়াশুনো করা পাতলা

সারাক্ষণ টাকাগয়না করতে থাকা খরখরে ধুপুপিসি অবধি জানে তার আনচান!

খুব অবাক হতাম, কি করে! কেনই বা!

আজ উত্তর পেলাম জানো…

মাটির সিঁথেয় সিঁদূর পড়েছে চড়া করে। বিকেল ধূপ খেলে যায় তেলের চুলে বালিকা চেনে কেবল সেসব। ধুলোর সাইকেল ছোঁড়ে দেখে ধাপ ছেড়ে যায় জল আর জল ছেড়ে যায় স্রোত… আকাচা বাঁশ মুখে নয়াচর ঠেলে হিলে গেল স্লা!

 

প্রাপ্ত মনস্কদের জন্য ছবিতা।।

 

লহরে প্রহরে প্রলাপ স্বর, স্বর স্বপ্ন, স্বপ্ন ঘোর
শুধু অবয়ব, শুধু আদল
মোহিনী
সম্মোহনী
ছপছপ
কোনো নীরবতা নেই, এখন আর্তনাদ
অর্কিডের গন্ধে শ্রী ভেবে আগুনে ঝাঁপ

ওটা কেন তোমার গুজব- আমার স্মৃতি,
বালিশের নীচে চিঠি
ওহ, সেলাই মেশিন!
টাইট টাইট হৃদয়ের
তুমি কেতলি আওয়াজ
আর এই কাঁচি,
বৃষ্টি ভেজা
ড্রেস-আপ

চোয়ালে স্রোত কল্লোল লাঙলের ফলায়
সাইক্লোপস খেলি, আরো কাছাকাছি
এবং আমাদের চোখ আরো বড় হয়ে যায়
তারা একে অপরের দিকে এগিয়ে যায়
তারা ওভারল্যাপস এবং সাইক্লোপস
শ্বাস, শ্বাস, তাদের লড়াই
তাদের ঠোঁট, তাদের দাঁতে দাঁত
যেখানে ভারী বাতাস আসে এবং
একটি পুরানো পারফিউম এবং
একটি নীরবতা নিয়ে আসে

যখন দরজা খুলবে, তখন সব সময় একটা চিৎআনন্দের প্রখর মুহূর্ত আছে

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh