সাহারা খাতুনের বর্ণাঢ্য জীবন

বাংলাদেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন সফল রাজনৈতিক সংগঠকের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন। 

১৯৪৩ সালের ১ মার্চ ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ঢাকার কুর্মিটোলায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি।সাহারা খাতুনের বাবার নাম মরহুম আবদুল আজিজ ও মায়ের নাম তুরজান নেছা। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাইস্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ইস্ট-পাকিস্তান বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। সিটি নাইট কলেজে থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। 

তারপর জগন্নাথ কলেজে বিএ কোর্সে ভর্তি হন। পরে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী মাধ্যমে দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিএ (ডিগ্রি) অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হলেও তিনি কোর্স শেষ করেননি। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৬৭ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন সাহারা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ছাত্রদের মধ্যে একটি নির্বাচনে তিনি ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। সেটি ছিলো তার জীবনের প্রথম নির্বাচন। ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা যখন গঠিত হয়, তাতে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। 


১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দিনেও তিনি সরাসরি উপস্থিত ছিলেন।উপস্থিত ছিলেন ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ১৯৮১ সাল থেকে আইন পেশা শুরু করেন সাহারা খাতুন। প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী  আইনজীবী পরিষদ। 

তিনি ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসনে প্রথমবার অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে হেরে যান। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি হন। ২০০৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে দেয়া হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ঢাকা-১৮ আসন থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি জয়ী হন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি প্রথমে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক এবং একইসঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-আইন সম্পাদক, পরে আইন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।

 এছাড়া স্বাধীনতার পরেই সাহারা খাতুন মহিলা সমিতির সদস্য মনোনীত হন। তখন ড. নীলিমা ইব্রাহিম সভানেত্রী ও আইভি রহমান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, গাজীপুর আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়শনেরও আজীবন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিরও সদস্য। তিনি আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যশানাল অ্যালাইন্স অব ওমেন্সের ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (৭৮) থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বৃহস্পতিবার ব্যাংককের স্থানীয় সময় রাত ১২টা ২৬ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। দলটির দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, সাহারা আপার মরদেহ নিয়ে ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট ব্যাংকক সময় রাত ৯ টায় বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হবে। রাতেই সেটি ঢাকায় পৌঁছাবে। এরপর আগামীকাল শনিবার বনানী কবরস্থানে ওনার বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে।

এর আগে গত সোমবার থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে। জ্বর, অ্যালার্জিসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে অসুস্থ অবস্থায় গত ২ জুন সাহারা খাতুন ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। এখানে তার অবস্থার অবনতি হলে গত ১৯ জুন সকালে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।

এরপর অবস্থার উন্নতি হলে তাকে গত ২২ জুন দুপুরে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। পরে ২৬ জুন সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবারও তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।

অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //