ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল ইসলাম নুরকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এনে ঢাবি এলাকায় ড. কামাল হোসেন ও আসিফ নজরুলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় প্রায় পাঁচশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এই ঘোষণা দেন।
সনজিত বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চলবেনা। সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলতে পারবে না। রাজনীতি করতে চাইলে আমাদেরকে মোকাবেলা করে রাজনীতি করতে হবে। যারা তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে তাদেরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। পাগল কামাল এবং তথাকথিত শিক্ষক আসিফ নজরুল, সাংবাদিক সহ মানসিক বিকারগস্ত সবাইকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর নিজেকে ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচানোর জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিকল্পনামাফিক ধর্ষণ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা সনজিতের।
তিনি বলেন, যখনই বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করেন তখনই ধর্ষণের মেগা সিরিয়াল বাস্তবায়ন করে একদল লোক। যেখানে একটি ধর্ষণের বিচার হবে সেখানে পরপর এতগুলো ধর্ষণ কিভাবে হয়? আমার ধারণা নুরুল হক নুর নিজেকে বাঁচানোর জন্য পরিকল্পনামাফিক বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে দায়ী করতে চাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ, নিপীড়ন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনকারীদের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের এবং সিলেট এমসি কলেজ, খাগড়াছড়ি ও সাভারে ধর্ষণের সাথে জড়িত সকলের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে আলাদা ট্রাইবুনাল গঠন করার দাবি উত্থাপন করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, খাগড়াছড়ি ও সাভারে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন ছাত্রলীগ।
অন্যথায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রয়োজনে আমরণ অনশন করবেন এবং পুরো ঢাকা অচল করে দিবেন বলেও উল্লেখ করেন সনজিত চন্দ্র দাস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের ছাত্রী বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে এনে মামলা করেন। ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকেও অভিযুক্ত করেন এবং আরো ৪ জনকে মামলার এজহারে আসামি হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে নুরুল হক নুর এই ঘটনা অস্বীকার করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাকর্মীরা দেশের পুরো ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন বলে উল্লেখ করেন এবং দেশে কোনো জায়গায় ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটলে একযোগে এর প্রতিবাদ করবে বলে জানান।
সনজিত বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলার ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া অন্য যেকোন নারী যদি নির্যাতনের শিকার হয়, নির্যাতনকারী সে যে রাজনীতি করুক না কেন আমরা তা সাথে সাথেই প্রতিহত করব।
নুরুল হক নুরকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আপনাকে যে মেয়েটি ভোট দিয়েছে তার পাশেই আপনি দাড়াননি। আপনি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আপনার বিরুদ্ধে আমার কোনো ষড়যন্ত্র নাই। আমার সৌভাগ্য হত যদি আমি বাদী হয়ে মামলা করতে পারতাম৷
তিনি আরো বলেন, এমসি কলেজে যারা ধর্ষণ করেছে তারা কোন দলের সেটা বিবেচ্য বিষয় নই। আমরাই প্রথম এমসি কলেজের ধর্ষণের সাথে জড়িত অপরাধীদের বিচার চেয়েছি। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ধর্ষিতা বোনের বিচার চেয়েছি এবং খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের শিকার বোনের বিচার চেয়েছি। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী শাসনতন্ত্র নামে কিছু সংগঠন, শিবির এবং জঙ্গি ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে। আমি ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং তার সহযোগীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। এদের যেখানেই পাবেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিহত করবেন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয় আমার বোনকে বিচারের জন্য কান্না করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হচ্ছে। আজ তিনি তার সংগঠনের ভাইদের মাধ্যমে ধর্ষিত হয়েছে। এই ন্যাক্কার জনক ঘটনা ইতাহাসে বিরল। আজ তারাই ধর্ষণ করেছে আবার তারাই বিক্ষোভ মিছিল করছে। কতবড় স্পর্ধা তাদের? বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তা কখনোই হতে দেবে না।
তিনি সাবেক ভিপি নুরকে নাট্যকার বলেও উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, ভিপি নুর যিনি নাটক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে বেইমানি করছেন। এই নাটকবাজ ভিপি নুর যিনি নাটক করে ভিপি হয়েছেন । আজ তার মুখোশ উম্মোচিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি হিসেবে সাবেক যত ভিপি রয়েছেন তাদের মর্যাদাহানী করেছে। গুজব বাহিনীর গুজবের মাধ্যমে তিনি ভিপি পদটি ভাগিয়ে নিলেন।
তিনি আরো বলেন, আজ দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ এবং শিক্ষক সমাজ সিলেটের এমসি কলেজের ধর্ষণের কোনো কিছু না করে তারা বারবার ছাত্রলীগকে দোষারোপ করছে। তাদেরকে বলি এতে ছাত্রলীগের কিছু যায় আসে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিয়ে যাদের এত চুলকানি, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি এই ধর্ষকের তো কোনো দল থাকবে না। তারা এই পৃথিবীতে কলঙ্কিত। এই ধর্ষক নিকৃষ্ঠ কুলাঙ্গার প্রাণীরা যে দলেরই হোক না কেন তাদেরকে কঠোর বিচার করতে হবে। যত ধরণের ধর্ষক, যৌন নিপিড়নকারী আছে আমরা তাদেরকে বয়কট করবো। তাদেরকে যেখানেই পাবেন সেখানেই গণধোলাই দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিবেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh