ভাঙনের মুখে হেফাজত, আসছে নতুন নেতৃত্ব

নেতৃত্ব নিয়ে ভাঙনের মুখে পড়েছে কওমি প্ল্যাটফরমের আলোড়ন সৃষ্টিকারী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এই সংগঠনের আমির কে হবেন এবং কোন গ্রুপ থেকে হবেন তা নিয়ে চলছে দুই পক্ষের রেষারেষি। নেতৃত্বের জটিলতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থার। কোনো পক্ষ ছাড় দিতে রাজি নয়।

জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর কওমি অঙ্গনের কোন্দল-বিভক্তি বড় আকার ধারণ করছে। কওমি অঙ্গনের এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে সরাসরি বক্তব্য দিচ্ছে। 

দুই পক্ষের আলেমদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, হেফাজতের আমির ও কওমি অঙ্গনের সবচেয়ে বুজর্গ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মতো সর্বজন গ্রহণযোগ্য আলেম বর্তমানে বাংলাদেশে আর কেউ নেই। হেফাজতের এক গ্রুপ আল্লামা শফীর ছেলে বহিষ্কৃত মাওলানা আনাস মাদানির নেতৃত্বে শক্তি সঞ্চয় করছে। তার সঙ্গে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের (আমিনী) মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মইনুদ্দিন রুহি, মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে আবুল হাসানাত আমিনীসহ লালবাগ মাদ্রাসা, ফরিদাবাদ মাদ্রাসা, বড় কাটারা মাদ্রাসা, গহরডাঙ্গা মাদ্রাসাসহ একটি প্রভাবশালী অংশ, যারা কওমি অঙ্গনে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট বলে প্রচারিত। অন্য গ্রুপে রয়েছেন- হেফাজতের বর্তমান মহাসচিব শায়খুল হাদিস মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, সাবেক মন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা হাফেজ কারি আতাউল্লাহ হাফেজ্জি, মধুপুরের পির মাওলানা আবদুল হামিদ, মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদি, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকসহ কওমি ঘরানার অধিকাংশ আলেম-উলামা ও হেফাজতের নেতাকর্মী। 

হেফাজতে ইসলামের ২২৯ সদস্যবিশিষ্ট যে শুরা কমিটি আছে, তাদের বেশির ভাগই এদের সঙ্গে। এ দুই পক্ষের বাইরে রয়েছে হেফাজতের অপর একটি গ্রুপ, যারা দুই পক্ষের কাদা ছোড়াছুড়ি পছন্দ করে না।

মহাসচিব শায়খুল হাদিস জুনায়েদ বাবুনগরী দ্রুত কাউন্সিলের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের আমির নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর সেই কাউন্সিল বর্জন করবে বলে জানিয়েছে হাটহাজারী মাদ্রাসার বহিষ্কৃত শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষা পরিচালক আল্লামা শফীপুত্র আনাস মাদানি গ্রুপ। এই গ্রুপ চায় তাদের মধ্যে যারা প্রবীণ আলেম আছেন, তাদের মধ্য থেকে কাউকে আমির নির্বাচিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাদের পছন্দ হাটহাজারী মাদ্রাসার মুঈনে মুহতামিম (সহযোগী পরিচালক) মাওলানা শেখ আহমদ। 

গত জুন মাসে আল্লামা শফী তার উত্তরসূরি হিসেবে এই মাওলানা শেখ আহমদকে মনোনীত করে যান। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর কাছ থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের পদ কেড়ে নিয়ে সেখানে পদায়ন করা হয় শেখ আহমদকে। ১৬ জুন মজলিশে শুরার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর শেখ আহমদই মাদ্রাসার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। আনাস মাদানির ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত শেখ আহমদ হাটহাজারীর মহাপরিচালক হলে হেফাজতের আমির হবেন। কিন্তু ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সব ভণ্ডুল হয়ে গেছে। তবে আল্লামা শফীর মৃত্যুর পরদিন সন্ধ্যায় হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনায় তিন সদস্যের যে কমিটি করা হয়েছে, সেখানে শেখ আহমদ আছেন। 

এই গ্রুপের বিকল্প পছন্দের আমির ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদ্রাসা পরিচালক ও হাইয়াতুল উলয়ার কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আবদুল কুদ্দুস। তবে আবদুল কুদ্দুসকে নিয়ে নিজেদের গ্রুপের ভেতরেই পছন্দ-অপছন্দের দুই গ্রুপ আছে।

হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মইনুদ্দিন রুহী বলেন, আল্লামা শফী সাহেব তার উত্তরসূরি নির্বাচন করে গেছেন। সেটিই বাস্তবায়ন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘হেফাজত ইসলামের পরবর্তী আমির কে হবেন এটা আল্লাহতায়ালা জানেন।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //