ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার একটি বক্তব্য গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সেখানে তিনি নির্বাচন ও দলীয় এমপিদের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বক্তব্য নিয়ে বিবিসির সাথে আলাপকালে আবদুল কাদের মির্জা তার বক্তব্যের সপক্ষে অবস্থান তুলে ধরেছেন।

আবদুল কাদের মির্জা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার বিদায়ী মেয়র এবং সামনের সপ্তাহে ওই এলাকার মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যানারে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তিনি একটি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন-চারটা আসন বাদে আমাদের এমপিরা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।’

বিবিসির সাথে আলাপকালে তিনি বলছেন, নোয়াখালীর স্থানীয় রাজনীতি সম্পর্কে তিনি সেসব কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগ থেকে তার এই বক্তব্যকে স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধের ফসল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মেয়র প্রার্থী হিসাবে ইশতেহার ঘোষণার সময় দেয়া বক্তব্যে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন, যারা বলেন অমুক নেতা, তমুক নেতার নেতৃত্বে তারা বিএনপির দুর্গ ভেঙ্গেছে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন-চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা পালানোর দরজা খুঁজে পাবে না। এটাই হলো সত্য কথা।’

বিবিসির সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি নোয়াখালীর প্রসঙ্গে এই কথা বলেছি। আমি বলছি, সত্যিকার গণতান্ত্রিকভাবে যদি ভোট হয়, সেক্ষেত্রে নোয়াখালীতে দুই-চারজন এমপি ছাড়া বাকিরা পালানোর পথ পাবে না। দুই-একজন এমপির কারণে এখানে জনপ্রিয়তা নষ্ট হচ্ছে।’

‘আমার বক্তব্য হচ্ছে, যে গণতন্ত্র থেকে আজ মানুষ বঞ্চিত, যে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত, এটা পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি মনে-প্রাণে, জননেত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারবেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন।’

‘সেজন্য আমরা এই পৌরসভা থেকে শুরু করতে চাই যে, আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেবো- এটা নিশ্চিত করার জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়েছে।’

তাহলে এখন যে নির্বাচনগুলো হচ্ছে, সেগুলো কেমন হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন, জানতে চাইলে আবদুল কাদের মির্জা বলছেন, ‘আসলে আমাদের দেশে এখন যে নির্বাচনগুলো হচ্ছে, তার বেশিরভাগই অনিয়ম অতি উৎসাহীরা করছে। যেখানে যার অবস্থান আছে, দৈহিক বল আছে, যাদের সমর্থন আছে, তারাও জিতছে, কিন্তু দৈহিক বলটা অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োগ হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।’

‘আমার টার্গেট হচ্ছে একটাই। সেটা হচ্ছে তিন বছর পরে আমরা আবার নির্বাচনে অবতীর্ণ হবো। এখনো তিন বছর সময় আছে। যদি আমাদের লোকজনগুলো, যারা এই অনিয়মগুলো করতেছে, তাদেরকে এটা থেকে সরানো না যায়, যদি বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো না। এটা আমার ব্যক্তিগত কথা।’

তাহলে এখন যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, যে এমপিরা নির্বাচিত হয়েছেন, সেগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে হয়নি বলেই আপনার ধারণা? জানতে চাইলে তিনি বলছেন, ‘অধিকাংশই হয়নি। গতবারের নির্বাচনটা অতি উৎসাহীদের হাতে ছিল। শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাকে গাছটা দাও, তারা পাতা-টাতা সহ দিয়েছে।’

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অনেকে বিজয়ী হবেন, তবে দুর্নীতিবাজরা বিজয়ী হতে পারবেন না বলে তিনি মনে করেন।

নোয়াখালীতে টেন্ডারবাজি করা হচ্ছে, স্কুল পিয়ন, শিক্ষক, অফিসের পিয়নের চাকরি দিয়ে টাকা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হককে পুড়িয়ে মারার ঘটনাও তার অনুভূতিতে চরম আঘাত করেছে বলে তিনি বলেন। তার পরিবার এখনো ন্যায়বিচার পায়নি বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলছেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতা না হওয়ায় তার এসব বক্তব্য বিভিন্ন ফোরামে বলার সুযোগ পাননি। তিনি দলীয় সমাবেশে বলেছেন। তবে নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে এসব তুলে ধরবেন।

তার এই বক্তব্যের পেছনে কোনো ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নেই বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে দুইটি টিউমার শনাক্তের পর আমেরিকা থেকে চিকিৎসা করিয়ে জীবন নিয়ে ফেরার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সব সময় সত্যি কথা বলবেন। এ কারণেই তিনি এখন এসব কথা বলছেন।

এই বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন, জানতে চাইলে বলছেন, ‘দলের নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। আমি ফেয়ার ইলেকশনের কথা বলেছি। সেটা অনেকে পছন্দ করছে না। অনেক কাউন্সিলর তো ফেয়ার ইলেকশন চায় না।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //