ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙার উপক্রম হচ্ছে: হেফাজত

হেফাজতের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব বলেছেন, হেফাজতের সরলতাকে দুর্বলতা ভাবলে ভুল হবে। আমরা অনেক ধৈর্য্যশীল, ধৈর্য্য আরো ধরব। তবে ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এই অবস্থা যদি সামনে আরো চলতে থাকে, তাহলে হেফাজতে রমজান মাসেই কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। ২০১০ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের হামলা, ভাঙচুর, বিশৃঙ্খলা ও জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ড চালায়নি। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম ইতিহাসে দেশব্যাপী সর্ববৃহৎ প্রোগ্রাম করেছে।

জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণ করে আলেম উলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের শহীদ করা হয়। এত কিছুর পরও হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত ধৈর্য ও শৃঙ্খলার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে।

জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনকে হেফাজতে ইসলাম ঘৃণা করে প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের কাছে দাবি ছিল মোদিকে যেন বাংলাদেশে আনা না হয়। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শৃঙ্খলার স্বার্থে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে সেদিন কোনো কর্মসূচি ছিল না। এমনকি কোনা ইসলামী দল সেদিন কর্মসূচি দেয়নি। কিন্তু যারা মোদির আগমনকে মেনে নিতে পারেনি তারা বাইতুল মোকাররমে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সে মিছিলকারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালায় আগে থেকে অবস্থানরত অস্ত্রসহ গুণ্ডাবাহিনী। তারাই সেদিনের তাণ্ডবের মূল হোতা। পরবর্তী ২৬, ২৭ ও ২৮ তারিখে বাংলাদেশে যা হয়েছে তার জন্য একমাত্র তারাই দায়ী। তারা কারা যারা আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদকে অপবিত্র করেছে?

জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, বাইতুল মোকাররমের আক্রমণের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে, তা সহ্য করতে না পেরে হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ধর্মপ্রাণ মুসলমান স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে। সেই মানুষগুলোর ওপর গুলি চালানো হয়েছে। তার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ধর্মীয় ও মানবিক কারণে পরবর্তীতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও হরতাল কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছে। হেফাজতের বিক্ষোভ ও হরতাল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে পালিত হয়েছে।

হাবীব বলেন, সেদিন সরকারের ছত্রছায়ায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ যারা বাইতুল মোকাররম, হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে তাণ্ডব চালিয়েছে তারাই বিভিন্ন জায়গায় আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আক্রমণ করে ১৯ জন শহীদ করেছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করেছে। এই তাণ্ডব তারাই ঘটিয়েছে, তারাই তাণ্ডবের মূল হোতা।

জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, এতকিছুর পরও হেফাজতে ইসলাম দেশব্যাপী দোয়া দিবস ও একটি বিক্ষোভ সমাবেশ ছাড়া কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করে নাই। কারণ রমজান মাস, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস, এবাদত বন্দেগির মাস। এই মাসে যেন মানুষের কোনো প্রকার অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কোনো কর্মসূচি দেয় নাই। কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ্য করছি এই সরলতাকে দুর্বলতা ভেবে, বিভিন্ন জায়গায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে প্রায় দুই শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জসহ সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পবিত্র রমজান মাসের কোনো তোয়াক্কা করছে না সরকার। ১৪ এপ্রিল ইফতারের আগ মুহূর্তে মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে তার বাসার সামনে থেকে নির্মমভাবে গ্রেফতার করেছে। তারাবীহের পর মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী সাহেবকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে।

তিনি বলেন, যে সমস্ত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে অনতি বিলম্বে মুক্তি দিন। অন্যথায় হেফাজত নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না। সর্বস্তরের মুসলিম জনতাকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //