ভুল করিনি, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব : মেয়র জাহাঙ্গীর

আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য সদ্য বহিষ্কৃত গাজীপুর সিটি করপোরেশন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ‘আমি কোনো ভুল করিনি, তবুও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা মাথা পেতে নেব।’ 

তিনি বলেন, ‘আমার অস্তিত্বে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু। আমার অভিভাবক হিসেবে তিনি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বা দেবেন তা আমি মেনে নেব। তিনি যদি বিনা কারণে আমাকে ফাঁসির দঁড়িতে ঝুলতে বলেন তাতেও আমি রাজি আছি। এতেও আমার দ্বিমত নেই।’ 

জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করার পর আজ শনিবার (২০ নভেম্বর) সকালে ছয়দানা এলাকায় তার নিজ বাড়িতে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন।

এসময় মেয়র তার আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরে পাওয়ার আকুতি জানান।

তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, অপরাধ করিনি। আমি এ সাধারণ সম্পাদক পদ চাই না, বাকি জীবন আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য ও সমর্থক হয়ে থাকতে চাই।’ 

এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে এখানে একটি হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

আমার বক্তব্য নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র অভিযোগ করে বলেন, ছাত্ররাজনীতি করার সময় থেকে একটি প্রতিপক্ষ নানাভাবে তার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার ঘরের ভেতরে বসে তিন ঘণ্টার আলাপচারিতাকে খণ্ড খণ্ড করে জোড়া দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।  আমার বিষয়ে নেত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আংশিক তথ‌্য দেওয়া হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ তথ‌্য দেওয়া হয়নি। আমি আওয়ামী লীগের কাছে সময় চেয়েছিলাম আমার কথা বলার জন‌্য। আমি যদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কথাগুলো বলতে পারতাম তাহলে তিনি সঠিক বিষয়টা জানতে পারতেন।  

তিনি বলেন, মেয়র হিসেবে আমি আমার নিজের কাজটা করেছি। আমাকে বহিষ্কার করে আমার এবং আমার পরিবারের অস্তিত্বে মাঝে আঘাত দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টা আমি মানসিকভাবে মেনে নিতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করি, আমার ভুল হতে পারে। ভুলের জন‌্য ক্ষমা চাই।  

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানসহ কয়েকজন কাউন্সিলর ছিলেন। তবে জেলা বা মহানগর আওয়ামী লীগের বড় কোনো নেতাকে সেখানে দেখা যায়নি।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনের কথা শুনে আজ সকাল থেকেই তার বাসার সামনে তার অনুসারী শত শত কর্মী উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভায় জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

গত সেপ্টেম্বর মাসে গোপনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি। তীব্র সমালোচনার মুখে পরে এক ভিডিও বার্তায় মেয়র জাহাঙ্গীর দাবি করেন, ফেসবুকের ভিডিওটি সুপার এডিট করে প্রচার করে তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। গাজীপুরের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ নিয়ে গাজীপুরে মেয়র সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়।

এরপর গত ৩ অক্টোবর মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আওয়ামী লীগ। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে তাকে এর জবাব দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম।

জাহাঙ্গীর আলম স্কুল থেকে কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জেলার ছাত্রলীগ ও পরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও স্থান পান। এরপর গাজীপুরের সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হন। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ২০১৮ সালে মেয়র হন তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //