‘আ.লীগকে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিল জিয়াউর রহমান’

বিএন‌পির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আগে আওয়ামী লীগ ছিলো না, ছিলো বাকশাল। সেই বাকশাল বিদায় করে এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছিলেন, রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিলেন। দেশে বহুদলীয় রাজনীতি কায়েম করেছিলেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। অথচ তার মুক্তির জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। চিকিৎসার অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে-কি আজব দেশ। 

শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) বিকে‌লে ৪টায় বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে বিএন‌পি চেয়ারপার্সন বেগম খা‌লেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 

তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে সেটা প্রমাণ হ‌য়ে যাবে। এজন্যই সরকার খা‌লেদা জিয়া‌কে বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে দিচ্ছেন না। 

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যখন গ্রেফতার ছিলেন তখন কার মুখ থেকে প্রথম আপনার মুক্তির দাবি উঠেছিল; স্মরণ করে দেখুন বারবার বেগম খালেদা জিয়া আপনার মুক্তির দাবি তুলেছিলেন। আর আজকে আপনি তাকে মুক্তি দিচ্ছেন না, আটকে রাখছেন। একটি অমানবিক প্রতিদান দিচ্ছেন আপনি। একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটু ভালো ব্যবহার আশা করে। কিন্তু আপনি কোন ভালো ব্যবহার করছেন না। এতেই বোঝা যায় আপনি একজন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। বৈধ প্রধানমন্ত্রী হলে এমন আচরণ করতেন না। 

মির্জা আব্বাস বলেন, এই ভূখণ্ড কাউকে ইজারা দেইনি। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীন মাটিতে যারা আমাদের কথা বলার অধিকার দিতে চান না, আমাদের চিকিৎসার অধিকার দিতে চান না- আপনারা কারা? কোথায় ছিলেন আপনারা? এই সরকার ফ্যাসিবাদের সরকার। এই সরকার চোখেও দেখে না, কানেও শোনে না। জনগণের আকাঙ্ক্ষা তারা বুঝতে চান না। জনগণের চাহিদা তারা দামও দেন না। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার জানে তারা কখনো বাংলার মাটিতে নির্বাচিত হতে পারবে না। অবৈধ, হায়েনা আর খুনি এই সরকার কখনোই জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। 

তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, যদি সাহস থাকে ভোটের মাঠে আসুন, পুলিশ প্রশাসন বাদ দেন। কিসের ভয় আপনাদের? এতই যদি জনসমর্থন থাকে তাহলে আপনাদের ভয় কিসের? একা কথা বলতে চাই, আপনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। আপনি পুলিশি জোর দিয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এদেশের জনগণ আপনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আপনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। 

বিশেষ অতিথি বিএন‌পির ভাইচ চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীর‌ উত্তম) বলেন, ২০১৮ সালে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় এসেছে শেখ হা‌সিনার সরকার। কিন্তু বেগম খা‌লেদা জিয়া জনগ‌ণের ভোটে তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর ওপর নিষ্ঠুর নির্দয় আচরণ করছে নি‌শিরা‌তের নির্বাচিত সরকার। সরকারি কর্মচারী, পু‌লিশ, র‍্যাব, আনসার বাহিনী ব্যবহার ক‌রে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিকল ক‌রে ফেলেছে। আজ তা‌দের দলের মধ্যেই  ষড়যন্ত্র শুরু হ‌য়ে গেছে। অপেক্ষা করুন, শীঘ্রই খা‌লেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন, তা‌রেক জিয়া দেশে ফি‌রে আসবেন। 

কেন্দ্রীয় বিএন‌পির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট ম‌জিবর রহমান স‌রওয়ার বলেন, তেলসহ সারাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সরকারের কিছু আসে যায় না। শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ার দাবি যখন জানালো তখন সরকারের টনক ন‌রে‌নি, কিন্তু যখন তারা সড়‌কে নামলো তখন তা‌দের দাবি মেনে নেয়া হ‌লো। এ হচ্ছে সরকার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে আজ উন্নয়নের দোহাই দেয়া হচ্ছে। কিন্তু  যে উন্নয়ন কর‌তে গি‌য়ে আমা‌দের না খেয়ে থাক‌তে হবে, যে উন্নয়ন মানুষ‌কে কষ্ট দেয় সে উন্নয়ন আমরা চাই না। 

তিনি বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনকারী ডি‌সি‌কে মাফ ক‌রে দেয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের সাজা মাফ হ‌য়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। কিন্তু তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খা‌লেদা জিয়া‌কে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যে‌তে দেয়া হচ্ছে না। কারণ তা‌রেক রহমান, খা‌লেদা জিয়া বাইরে থাকলে নি‌শিরা‌তের ভোট কর‌তে পারবে না সরকার। 

বক্তারা নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান রেখে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে দেশনেত্রী খা‌লেদা জিয়ার জন্য আমা‌দের মাঠে নাম‌তে হবে। সমন্বয়হীনতা ক‌রে আন্দোলনে জয়লাভ করা যাবে না। আমরা সবাই মিলে একসাথে আন্দোলন করে এই অবৈধ সরকারকে হঠাতে চাই। 

মহানগর বিএন‌পির আহবায়ক ম‌নিরুজ্জামান ফারু‌খের সভাপ‌তি‌ত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএন‌পির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিল‌কিস আক্তার জাহান শি‌রিণসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ সফল কর‌তে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে যোগদান ক‌রে। পাশাপাশি সমাবেশ ঘি‌রে অতিরিক্ত পু‌লিশ মোতায়েন, জল কামান রাখা ছিলো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //