পাল্টে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি

সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে বেশকিছু পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে। অনেকে ক্ষেত্রে বলা যায় বড় দুই দলের রাজনীতি ‘ওলটপালট’হয়ে গেছে।  ইতোমধ্যে প্রধান দুই রাজনৈতিক বহিষ্কার করা, জেলা, মহানগর কমিটি ভেঙ্গে দেওয়াসহ বেশিকছিু কার্যক্রমের মাধ্যমে তা দৃশ্যমান হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বড় ধরনের আভাসও পাওয়া গেছে দল দুটির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে।

দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় জেলা কমিটির আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকার ও মহানগর কমিটির সদস্য সচিব এ টি এম কামালকে দল থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি বেশকিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে দলটির হাইকমান্ড থেকে। অন্যদিকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগকে নতুন করে সাজানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের ভেঙে দেয়া মহানগর কমিটি ব্যাপক পরিবর্তন হবে বলেও ধারনা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছ থেকে তেমনটাই আভাস পাওয়া গেছে।

এদিকে নির্বাচন-উত্তর পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে দুই দলের স্থানীয় রাজনীতিতে। এই ধারাবাহিকতায় জেলা, মহানগর, উপজেলা/থানা, ওয়ার্ড বিএনপিসহ দল ও অঙ্গ সংগঠনের সর্বস্তরের কমিটি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। তার আগেই সব ইউনিট কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নাসিরউদ্দিনকে। 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিটি নির্বাচন পরিচালনায় সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির কোন নেতা নির্বাচনে কী ভূমিকা রেখেছেন তার একটি খসড়া প্রতিবেদন নেত্রীর কাছে দিবেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সময় সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন এজেন্সির তথ্যও থাকছে এতে। 

জানা যায়, নির্বাচনের সময় জেলা ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার আচরণে ক্ষুব্ধও হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব তৈরির জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আগামী সভায় প্রস্তাব তুলবেন বলেও জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকেও ঢেলে সাজানো হবে। এর অংশ হিসেবে দলের জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগও পুনর্গঠন করা হবে। দলের আগামী কার্যনির্বাহী সংসদে উত্থাপন করা হবে।

ডা. আইভীর নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত না থাকা, নিষ্ক্রিয় থাকার পাশাপাশি কেউ কেউ বিপক্ষের হয়ে কাজ করেছেন এমন অভিযোগের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি ভেঙে দিয়েছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন ডা. আইভীর নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জে নতুন করে সংগঠন সাজাবে কৃষক লীগও। সিটি করপোরেশনের ভোটের আগে ভেঙে দেয়া হয় মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। তবে যুবলীগ নেতারা নির্বাচনের শুরু থেকেই মেয়র প্রার্থী আইভীর পক্ষে মাঠে থাকায় তাদের কমিটি বহাল থাকছে বলেও জানা গেছে।

এদিকে বিএনপি থেকে তৈমুর আলম খন্দকারকে দল থেকে বহিষ্কারের পর মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাতেই নাসিরউদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকে বহিষ্কারের পরপরই এই পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর খান সেন্টুকে। মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ জানান, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে দল ও অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতি যথেষ্ট সক্রিয় হতে যাচ্ছে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই তার ফলাফল দৃশ্যমান হবে ইনশা আল্লাহ। তিনি জানান, ১০টি উপজেলা/থানা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ ছিলো। সেগুলো গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সদর ও বন্দর থানা বিএনপির কমিটি গঠিত হচ্ছে সহসাই। মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে ১৬টি কমিটি গঠিত হয়েছে। বাকিগুলোও কিছু দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।   

যদিও নাসিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী থাকলে তাদের দল থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর বলেন, আমি জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী। দল আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি একজন সমর্থক ও কর্মী হিসেবে রাজনীতি করে যাব। আমি দলের কর্মী-সমর্থক হিসেবে কাজ করে যাব। 

তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালের নির্বাচনে বিএনপি আমাকে নির্বাচন থেকে বসিয়ে দিল। আর কুমিল্লার সাক্কুকে নির্বাচন করতে না করল। তার পরও সে করল। আর এখন দল নির্বাচনে যাবে না, তারপরও আমাকে বহিষ্কার করা হলো। এটাই যদি দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতি হয়ে থাকে, তাহলে এটাই মেনে নিতে হবে। দল আমার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি সে ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদ করব না। কারণ, আমি তো দল পরিবর্তন করব না।

তবে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকার পরেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান নারায়ণগঞ্জে বড় ধরনের পরিবর্তনের চিন্তা ভাবনা রয়েছে বলে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নিশ্চিত করেছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //