জাতীয় সরকারের প্রস্তাব ষড়যন্ত্র: আওয়ামী লীগ

সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত জাতীয় সরকারের দুইটি প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এসব প্রস্তাবকে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি বিএনপি সম্প্রতি জাতীয় সরকারের বক্তব্য দিয়ে আসছে। বিএনপির নেতারা বলছেন নির্বাচনে তারা বিজয়ী হলে জোট সঙ্গীদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। জোট সঙ্গী যে দলগুলো বিজয়ী হতে পারবে না তাদেরও জাতীয় সরকারের রাখা হবে।

তবে বিএনপির এই ধারণা বা প্রস্তাব নতুন কিছু নয় বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এ বক্তব্যের মধ্যে নতুন কোনো গুরুত্ব বহন করে না বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা মনে করছেন। এর মাধ্যমে বিএনপি নতুন করে জনগণকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান।

আবার নির্বাচনের আগেই একটি জাতীয় সরকারের প্রস্তাব এসেছে। সম্প্রতি এই প্রস্তাবটি দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দুই বছর মেয়াদী জাতীয় সরকার গঠন করে তার অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাব করেছেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এ ধরনের প্রস্তাবকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচিত সরকার, সংসদ বহাল থাকা সত্বেও তার এই প্রস্তাবের মধ্যে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারক নেতারা মনে করছেন। কারো দ্বারা উদ্ধুদ্ধ হয়ে তিনি এটা করতে পারেন বলেও তারা জানান।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের ওই নীতিনির্ধারকরা বলেন, বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনের যে কথা বলছে এর মধ্যে মানুষের আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই। জনগণকে লোভ দেখানো ছাড়া এর কোনো গুরুত্ব নেই। আর জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জাতীয় সরকার একটি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন ক্ষমতাসীনরা। তারা মনে করছেন, জাফরুল্লাহর এ প্রস্তাব অসাংবিধানিক এবং এর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই, জনগণের কাছে এর কোনো গুরুত্বও নেই। তাই এই সব প্রস্তাবকে আওয়ামী লীগ কোনো গুরুত্বও দিচ্ছে না এবং এসব নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনাও করছে না বলেও দলটির ওই নীতিনির্ধারক নেতারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, সেটা তাদের ব্যাপার। তারা নির্বাচিত হয়ে এলে জাতীয় সরকার করতে পারে। আওয়ামী লীগ প্রথমবারও তো দিলীপ বড়ুয়াকে (সংসদে নির্বাচিত ছিলেন না) মন্ত্রী করেছিল। এখন এর মধ্যে নতুন কি আছে! জাফরুল্লাহ চৌধুরীরর প্রস্তাব প্রসঙ্গে মতিয়া চৌধুরী বলেন, গত নির্বাচনের পর তিন বছর পার হয়ে গেছে। আবার নির্বাচন এগিয়ে আসছে- এখন অনেকেই অনেক কথা বলবে। উনি কারো দ্বারা উদ্ধুদ্ধ হয়ে এটা বলতে পারেন। তবে এসব নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবার কিছু নেই।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির জাতীয় সরকারের এ বক্তব্য মানুষকে মুলা দেখানো মাত্র। জিয়া যেভাবে লোভ দেখিয়ে, অস্ত্রের মুখে দলে লোক ভিড়িয়েছিল- সেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা থেকেই বিএনপি মানুষকে লোভ দেখাতে চাচ্ছে।  

জাফরুল্লাহ চৌধুরীরর প্রস্তাব প্রসঙ্গে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচিত সরকার আছে, সংসদ বহাল আছে, সে সংসদে বিএনপির সদস্যরাও আছে। সরকার বহিঃর্বিশ্বে বন্ধুহীন হয়নি। সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তারপরও পতিত একজন মানুষকে দিয়ে এ ধরনের প্রস্তাব ষড়যন্ত্রমূলক ছাড়া কিছুই নয়।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এ ধরনের যে প্রস্তাবগুলোর কথা বলা হচ্ছে এর কোনো রাজনৈতিক মূল্য, আইগত বৈধতা, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে আওয়ামী লীগ মনে করে না। এ সব বিষয় ভাবনার জায়গায় কোনো রেখাপাত করে না। এর কোনা সাংবিধানিক ভিত্তি নেই, বাংলাদেশে এখন এরকম কোনো পরিস্থিতি নেই। যে কোনোভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এ ধরনের বক্তব্য আসছে। জনগনের আছে এর কোনো গুরুত্ব নেই, তাই আওয়ামী লীগও এ নিয়ে ভাববার কিছু আছে বলে মনে করে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //