নির্মূল কমিটি নিষিদ্ধ ও সম্পদের উৎস প্রকাশের দাবি

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে নিষিদ্ধ এবং তাদের অর্থের উৎস বের করে তা জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ নামে একটি সংগঠন। সরকার তার দায়িত্ব পালন না করলে জনগণ তার দায়িত্ব পালন করবে বলে সতর্ক করেছে সংগঠনটি।

ঢাকায় করতে না পেরে সারা দেশে ওলামা সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছে। কঠোর কোনো কর্মসূচিতে না গিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে পরিষদের নেতারা বলছেন, তারা সরকারের সাথে যুদ্ধ করতে চান না।

আজ বৃহস্পতিবার (২ জুন) রাজধানীর পল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ১৫টি দাবি তুলে ধরে এ কথা বলা হয়।

বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন যে ১১৬ ‘ধর্ম ব্যবসায়ীর’ তালিকা দিয়ে তাদের বিষয়ে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল, তাদের মধ্যে আছে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ।

এই তালিকার প্রতিবাদে আগামী রবিবার রাজধানীতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ওলামা সম্মেলনের ডাক দেয়া হয়। কিন্তু অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। এ কারণে এই সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।

গণকমিশনের বিরুদ্ধে সারা দেশে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে আইম্মা পরিষদের সভাপতি নুরুল হুদা ফয়েজী বলেন, ‘আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে দেশের সব মসজিদ ও গণসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা হবে।

‘এ লক্ষ্যে দেশের সব জেলা, মহানগর থানা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ওলামা সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। মতবিনিময় সভা করা হবে। এর পরও গণকমিশনের শ্বেতপত্র ও গণকমিশনের বিষয়ে সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করলে রাজধানী ঢাকায় ওলামা-মাশায়েখ ও সুধী সমাবেশ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা সরকারকে একটি বার্তা দিতে চাই। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা রাষ্ট্রের সংবিধান মেনেই কাজ করতে চাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা আইন ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের অধিকার রয়েছে সভা-সমাবেশ করার। সরকার যদি সংবিধান লংঘন করে সে দায়িত্ব সরকারের। সরকারের উচিত ছিল আমাদের মতপ্রকাশের সুযোগ দেয়া কিন্তু সেটা সরকার দেয়নি। আমরা হলেও একটা প্রোগ্রাম করতে পারলাম না, এটা দুঃখজনক বিষয়। তবে আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আন্দোলন করতে চাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই শ্বেতপত্রের পেছনে যারা আছেন তারা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি। সরকার যদি দেশকে ভালোবাসে তাহলে তাদের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করুক। তারা যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সেটা সরকার উন্মোচন করুক। সরকার যদি তাদের দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে জনগণ তাদের দায়িত্ব পালন করবে। সে ক্ষেত্রে ওলামা মশায়েখ জনগণকে সঠিক বার্তা দেবে।’

কর্মসূচি দিয়ে পিছু হটলেন কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের নাগরিক। দেশে সরকার আছে। তবে আমরা সরকারের সাথে যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা চাই প্রশাসন, সরকার এ বিষয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’

পরিষদের সহসভাপতি আ ফ ম খালিদ হোসেন, খালেদ সাইফুল্লাহ, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, যেসব মাদ্রাসার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাদের অধিকাংশের প্রতিনিধিরা ওলামা সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সামগ্রিকভাবে শ্বেতপত্রে যাদের দিকে অভিযোগের তির ছোড়া হয়েছিল, এমন সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এই সম্মেলন হতে যাচ্ছিল।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলো, তাদেরকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। তাদের সম্মেলন করতে দেয়া হচ্ছে না। এর চেয়ে নির্লজ্জ পক্ষপাত ও বিদ্বেষমূলক আচরণ আর কী হতে পারে?’

লিখিত বক্তব্যে দাবি তুলে ধরে বলা হয়

১.একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিকে জনতার কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে শ্বেতপত্র প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

২.এই শ্বেতপত্রের সঙ্গে জড়িত সবার রাজনৈতিক গোপন অভিলাষ প্রকাশ ও ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

৩. নির্মূল কমিটির অর্থের উৎস খুঁজে বের করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।

৪. গণকমিশনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

৫. ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।

৬.এই শ্বেতপত্রে মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের এই মিথ্যাচারের তদন্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

৭.গণকমিশন নিজ থেকে ক্ষমা চেয়ে শ্বেতপত্র প্রত্যাহার না করলে এই শ্বেতপত্র রাষ্ট্রকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

৮.এই শ্বেতপত্রে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সবকিছুর পেছনে দেশের ইসলামি রাজনৈতিকে, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, মাদ্রাসা শিক্ষা এবং আলেম-ওলামাদেরকে একতরফাভাবে দায়ী করা হয়েছে। অতএব স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তা একটি শক্তিশালী বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে তদন্ত করতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে এবং তদন্ত রিপোর্ট জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।

৯.যারা বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করে, দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে চায়, তাদের কার্যক্রমকে তদন্তের আওতায় এনে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১০. নাশকতার অভিযোগে অভিযুক্ত আলেমদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

১১.কারাবন্দি সকল আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

১২. সারা দেশে ওয়াজ মাহফিল সকল প্রশাসনিক বিধিনিষেধের আওতামুক্ত রাখতে হবে।

১৩.সারা দেশের আলেম ওলামা ও মাদরাসার বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

১৪. আল্লাহ, রাসূল (স.), ধর্মীয়-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে মানহানিকর শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধে আইন করতে হবে এবং তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

১৫. দুর্নীতিমুক্ত ও নৈতিকতা সমৃদ্ধ সুনাগরিক গড়ে তুলতে সারা দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম সন্তানদের জন্য নামাজ শিক্ষা, কুরআন শিক্ষা এবং রাসূল (স.)-এর জীবনী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //