শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই পটপরিবর্তন চায় বিএনপি

আগামী ২৪ ডিসেম্বর নিয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল তা কেটে গেছে। এদিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচি থাকায় এই বড় দুই দলের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ হতে পারে- এমন আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি এদিন তাদের দলীয় কর্মসূচি পালন করার বিষয়টি বিবেচনা করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজনীতির আকাশে যে কালো মেঘ দেখা দিয়েছিল- তা অনেকটাই কেটে গেছে।

২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন রয়েছে। এ সম্মেলনটি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হওয়ার কথা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিনই আবার কর্মসূচি ঘোষণা করে ক্ষমতাসীনদের প্রতিপক্ষ দল বিএনপি।

গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগের সমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে তা আদায়ে ঢাকাসহ অন্যান্য মহানগর ও জেলায় গণমিছিলের কর্মসূচি দেন দলটির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

এর পরই বিষয়টি আলোচনায় আসে। কেননা জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কারণে সারা দেশ থেকেই আওয়ামী লীগের ডেলিগেটরা রাজধানীতে সমবেত হবেন। এতে রাজধানীতে রাস্তাঘাটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চলাচল বেড়ে যাবে। আবার এদিনই ১০ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপিও। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে গণমিছিল করবে তারা।

একই দাবিতে বিএনপির সমমনা দলগুলোও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। রাজপথে থাকবে জামায়াতও। এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাদের আরও অভিমত- দুদলের অনড় অবস্থানে রাজনৈতিক উত্তাপ ইতোমধ্যে সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে যা আরও ভয়াবহ হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বিএনপির এই কর্মসূচি ঘোষণার এক দিন পর বলেছিলেন, দেশের বড় দুটি দল একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতি করে আসছে। এখন যে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল একটা দিয়াশলাই ছুড়ে দিয়ে দাবানল সৃষ্টি করতে পারে। এ সংকট থেকে উত্তরণে আমাদের রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদলের অনড় অবস্থানে রাজপথে সংঘাত হবে এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। দেশবাসীর প্রত্যাশা, তারা সংঘাত-সহিংসতার পথ পরিহার করবে। রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মকাণ্ড চালাবে।

এমতাবস্থায় বিএনপি আগামী ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল কর্মসূচির তারিখ ৩০ ডিসেম্বর পুনর্নির্ধারণ করেছে। তবে ঢাকার বাইরে অন্য মহানগর ও জেলার কর্মসূচি বহাল থাকবে কি-না তা নিয়েও চিন্তা করছে।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। তিনি বলেছেন, ওই দিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। দুই মাস আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। সেটি জানার পরও বিএনপি গণমিছিল কর্মসূচি দিয়ে দেশে গণ্ডগোল বাধানোর চেষ্টা করছে।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর বিএনপিকে গণমিছিল না করার অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা তাদের অনুরোধ করব, সারা দেশ থেকে আমাদের নেতাকর্মীরা ঢাকা আসবেন। আমরা সংঘাত চাই না। এ কারণে আপনাদের গণমিছিল বাইরে করেন।’

তবে তার আগেই সোমবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঢাকায় গণমিছিলের তারিখ পরিবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গণমিছিলের নতুন তারিখ ২৪ ডিসেম্বরের আগে কিংবা পরে যে কোনো সুবিধাজনক দিনে হতে পারে। তবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল করার ব্যাপারে চিন্তা করছে বিএনপি। এদিন ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। বিএনপি ও এর সঙ্গীদলগুলো এদিনটি ভোট ডাকাতির দিন হিসেবে পালন করে আসছে। তাই এমন একটি দিন থেকেই ১০ দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার কথা ভাবছে বিএনপি। তবে এখন এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আগামী ২৪ ডিসেম্বরের আমাদের গণমিছিলের কর্মসূচি রয়েছে। এই কর্মসূচির তারিখ রিশিডিউল করার চিন্তা করছি।’

বিএনপি স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের সব বিভাগীয় সমাবেশগুলো করেছি সপ্তাহের প্রতি শনিবার। এজন্য গণমিছিলের কর্মসূচিও ওই শনিবারেই দিয়েছি। কারণ শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তাই রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে গণভোগান্তি কম হয়। তিনি বলেন, এদিন যে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন রয়েছে, তা আমাদের স্মরণে ছিল না। তবে জানার পর ওই দিনের তারিখ আমরা পুনর্নির্ধারণের ব্যাপারে বিবেচনায় নিয়েছি।

এ ব্যাপারে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী জোট গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় কর্মসূচি হচ্ছে না- এটা নিশ্চিত। তবে ঢাকার বাইরে যুগপৎভাবে এ কর্মসূচি পালিত হবে, এখন পর্যন্ত এ রকমই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

রাজধানীতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর এই কর্মসূচি পালনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ হতে পারে বলে জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, এদিন একাদশ নির্বাচনের দিন। ২০১৮ সালের এদিনে ভোট ডাকাতি হয়েছিল। এটিকে স্মরণে রেখে আমাদের যুগপৎ আন্দোলনও এদিন থেকে শুরু হোক, এই চিন্তাভাবনাই চলছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গণমিছিলের তারিখ পুনর্নির্ধারণে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। 

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বিএনপির এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি নেপাল থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দিন বিএনপি কর্মসূচি দেওয়ায় ওই দুই দলের মধ্যে যে সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা ছিল তা আপাতত কেটে গেছে। যা আমাদের রাজনীতির জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আশা করছি ভবিষ্যতেও এইরকম সমঝোতার মাধ্যমে যে কোনো রকম অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে দুই দল সমর্থ হবে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //