রাজধানীতে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি আ.লীগ-বিএনপির

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল যখন ঢাকায়, ঠিক তখনই সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার (১২ জুলাই) সমাবেশ করে এক দফার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। এই সমাবেশের প্রস্তুতির কাজও শুরু করেছে দলটি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নির্বাচনমুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে। বিএনপির এক দফা ঘোষণার দিনে ঢাকায় পাল্টা সমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের আগে দুই দলই নিজ নিজ অবস্থানের সমর্থনে রাজপথে শক্তি দেখানোর কৌশল নিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করতে পারে।

বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ ও নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল ঢাকায় এসেছে গত শনিবার। ইইউ প্রতিনিধিদলের এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। 

দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এক দফার আন্দোলনের কর্মসূচি মাঠে রেখে তারা ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে যাবেন। সে জন্য ওই বৈঠকের আগেই সমাবেশে বড় জমায়েত করে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ইইউ প্রতিনিধিদলকে বিএনপি প্রথমত একটি বার্তা দিতে চাইছে যে তারা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে এবং তাদের অবস্থান ও দাবির প্রতি মানুষের সমর্থন রয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণায় খুব স্বাভাবিক কারণেই ক্ষমতাসীনেরা ক্ষুব্ধ হবে। কিন্তু ইইউ দল যেহেতু ঢাকায় রয়েছে, তাই সমাবেশের জন্য সরকারের অনুমতি পাওয়া সহজ হবে। কোনো বাধা ছাড়াই নির্বিঘ্নে সমাবেশ করার সুযোগ নিতে চান তারা।

বিএনপি একদিকে যেমন সময়ের সুযোগ নিতে চাইছে, অন্যদিকে সরকারের ওপর মাঠের চাপ আর বাড়াতে চাইছে। কারণ, জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাস বাকি। ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথম দিক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে তিন মাস আগে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। এর আগে যে তিন মাস সময় আছে, তার মধ্যে আন্দোলন যদি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে সরকারের পক্ষে একতরফাভাবে এগোনোটা সহজ হবে বলে বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করেন।

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি সরকারের ওপর একধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের তৎপরতাও সরকারের জন্য সুখকর হচ্ছে না। বিদেশি চাপ আরো বাড়তে পারে বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদেরও অনেকে ধারণা করেন।

যদিও ভূরাজনীতির মেরুকরণে রাশিয়া, চীন ও ভারতের সমর্থন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে থাকবে বলেই ভাবছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তবে তারা এটিও মনে করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতিসহ দেশের নানামুখী স্বার্থের কারণে সরকারের পক্ষে উন্নয়ন সহযোগী পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ এড়ানো কঠিন।

একদফার সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি চূড়ান্তে কয়েকদিন ধরে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে বিএনপি। এ ব্যাপারে তাদের মতামত নেওয়া হয়। সোমবার গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপি, লেবার পার্টি ও ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা রূপরেখা নিয়ে মতৈক্য পৌঁছেছে তারা। বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ সবকিছু হরণ করে সরকার বিনাভোটে ক্ষমতায় বসে আছে। গণতন্ত্র উদ্ধারে আমাদের আন্দোলন। আগামী দিনের আন্দোলনে আমরা যৌথভাবে এগিয়ে যাব। এখানে সর্বস্তরের জনগণকে সমন্বিত করার উদ্দেশ্যে এই ‘ডাক’ আজকে এখান থেকে দিচ্ছি। সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ আন্দোলনে যোগ দিতে এবং তা সফলে সবার সহযোগিতা চাইব। এজন্য আমরা ওইদিন একটি যৌথ ঘোষণাও দেব।

এদিকে বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এক লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থক জড়ো করার টার্গেট রয়েছে। আওয়ামী লীগের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মহানগর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের অনুরোধ করা হয়েছে এই সমাবেশ সফল করার জন্য। তারা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে শান্তি সমাবেশে যোগ দেবেন। আমরা সোমবার সকালে দক্ষিণের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //