তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে আ.লীগের ভাত নেই: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। ২০০৮ সালে সবাইকে বোকা বানিয়ে বিচার ব্যবস্থার উপর জোর দিয়ে খায়রুল হকের উপর জোর দিয়ে পার্লামেন্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করে দেন। কেন, আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে, নিরপেক্ষ সরকার থাকলে, নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। ত্রিশটি আসনও পেত না।

আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে মেহনতি মানুষের পদযাত্রায় জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পদযাত্রায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।

আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তারা বলে নির্বাচন আমাদের অধীনে হবে। আমরাই ভোট কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করব। আমরাই ভোট দেওয়াবো, আমাদের মত করে সকলকে ভোট দিতে হবে। নইলে চলে যেতে হবে। এমনকি আমাদের ভোটারদের এখনো বলে ভোট কাকে দিবা। যদি বিএনপিকে ভোট দিতে চাও তাহলে তোমার ভোট হয়ে গেছে। ভোট কেন্দ্রে যাইতেই দেয় না।

শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, আমাদের বলে তাদের অধীনে নাকি ভোট দিতে হবে। ২০২১ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে বলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে সবাই ভোট করতে পারবেন। সবাইকে বলেন ভোট করতে আমি কোন বাধা দেব না। আমরা ভাবলাম বোধ হয় শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। কি করা যাবে বলেন।  ভুতের মুখের রাম রাম। আগের রাতে ভোট হয়ে গেল। এখন আমার বলছে আমরা সুন্দর ভোট করব।  আমাদের অধীনেই ভোট হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে। আহারে কি আবদার। শিয়ালের কাছে বার বার কুমিরের বাচ্চা দেওয়া যাবে না। বার বারই খেয়ে ফেলবে। আমরা এবার আর খেতে দিবো না।

তিনি আরো বলেন, এবার মানুষ জেগে উঠেছে। এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি। কিভাবে তাদের বিশ্বাস করব। সুবর্ণচরে একজনকে শুধু ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অপরাধে নির্যাতন করা হয়েছে। এভাবে তারা অসংখ্য মা-বোনকে বেইজ্জত করেছে। আজকে শ্রমিক ভাইয়েরা বাজারে যেতে পারে না। বাজারে গেলে চাল কিনতে পারে না, ডাল কিনতে পারে না, মাংস কিনতে পারে না, সবজি কিনতে পারে না। ১০টাকা চাল দিবে বলেছে। এখন ৯০ টাকা। ঘরে ঘরে চাকরি দিবে বলেছে। কোনো চাকরি হয়নি। তাদের লোকদের কাছ থেকে তারা ২০-৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে চাকরি দিয়েছে।  

দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। এটা একটা লুটের রাজত্বে পরিণত করেছে।  ব্যাংকগুলো সব লুট করতে করতে খালি করে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আবার পাচারের টাকা দেশে নিয়ে আসার একটা বিধান করেছে। দেশে নিয়ে আসলে আবার আড়াই পার্সেন্ট ইনসেন্টটিভ পাবে। কি মজা, আমাদের পকেট থেকে টাকা কেটে রেখে ট্রাক্সের টাকা নিয়ে তারা আবার চোরদেরকে পুরষ্কার দিচ্ছে। এ সমস্যা শুধু বিএনপির নয়, এ সমস্যা শুধু খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নয়। এ সমস্যা সমগ্র জাতির। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজকে বিপন্ন। আমাদের আজকে ভোট দেওয়ার অধিকার নেই।


আওয়ামী লীগকে হুশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, আর কোনো সময় নেই, তাদের সময় শেষ। আমি পরিষ্কার ভাবে বলেছি। আবারো বলছি, ভালো ছেলের মত সুবোধ বালক-বালিকার মত পদত্যাগ করেন, সংসদ ভেঙে দেন। যদি ভালোই ভালোই শুনে পদত্যাগ করেন তা হলেতো ভালো। তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আট বছর কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন সংগ্রাম করেছেন। আমরা নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই ৩১ দফা দিয়ে আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।

পদযাত্রায় আরো বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম প্রমুখ।

এসময় নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ আজাদ, নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনজুরুল আজম সুমন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান, জেলা বিএনপির সদস্য মো.গোলাম মোমিত ফয়সাল, জেলা শ্রমিকদলের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিনসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষকদল, শ্রমিকদল, মৎসজীবীদল, তাঁতীদল ও জাসাসের উদ্যেগে এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। এ পদযাত্রায় বৃহত্তর নোয়াখালীর পাঁচটি জেলার নেতাকর্মী অংশ গ্রহণ করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //