ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের কথা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কী বললো তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই, আমাদের দরকার মানুষ কী বলে।

আজ শুক্রবার (৪ আগস্ট) নয়াপল্টনে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একজন জনপ্রিয় নেতা। যার নেতৃত্বে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন যৌক্তিক পর্যায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় এই ফ্যাসিস্ট সরকার তার বিরুদ্ধে একটি ফরমায়েশি রায় দিয়েছে। শুধু তারেক রহমান নয়, তার স্ত্রী এই দেশের সুনামধন্য ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে।

তিনি বলেন, ডা. জুবাইদা রহমান যিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, তিনি একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক। তার পারিবারিক সম্পত্তি কয়েক হাজার কোটি টাকা, তাকে কয়েক লাখ টাকার এফডিআরের জন্য সাজা দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি তো সেই পাকিস্তান আমলে.. সেই মামলায় তোমাদের নেতাকেও জেলে যেতে হয়েছিল।

নেতাকর্মীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশে আসায় বক্তব্যের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব তাদের উদ্দেশে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে আজ ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। ইনশাল্লাহ, দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলে দানবকে পরাজিত করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত কি বললো সেটা ভাবার আমাদের কোনো দরকার নেই। আমাদের দরকার এদেশের মানুষ। এ দেশের মানুষ সরকারকে বার্তা দিয়েছে। তাড়াতাড়ি বিদায় হও, আর সময় নেই। এদেরকে চলে যেতে হবে, চলে যেতেই হবে।

তিনি বলেন, বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে এই জনতা। কারাগারে পাঠিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আমাদের থামাতে পারবেন না।

বিএনপি মহাসচিব আক্ষেপ করে বলেন, এরা দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছে, আজ বিশবিদালয়ে উপাচার্য দুর্নীতি করে।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারে নিতম্ব থেকে চেয়ার সরানো সবচেয়ে কঠিন কাজ। তাই এদের নিতম্ব থেকে চেয়ার সরাতে হবে। এবার মুক্তির পণ নিয়ে এদেরকে হটাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। একটাই পথ, এই সরকারকে সরাতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সম্পূর্ণ জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে; বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন, প্রশাসন, এবং বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তারা আজ প্রমাণ করেছে..., তাদের কথার মধ্য দিয়েই ভয়ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন না করে ক্ষমতায় থাকতে চায় সরকার, চেয়ার ছাড়তে চায় না। এবার মরণপণ সংগ্রাম, মরণপণ যুদ্ধ করে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে এবার নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, খুবতো বলেছিলেন ডিসেম্বরে খেলতে চান। আসুন ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচনে আসুন দেখা যাক কি হয়, তখন খেলা হবে। আমাদের ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নাই, সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করেছে, তারা দেশের মানুষের শত্রু, স্বাধীনতার শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু। তাদের (সরকার) পদত্যাগের দাবিতে যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে, ভোটাধিকার পাবার জন্য দিনের পর দিন আন্দোলন করেছে, তিনি তারেক রহমান।

এর আগে, বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে আসে দলটির নেতাকর্মীরা। দুপুরে পর থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও, তা নেতাকর্মীদের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে রাস্তাটি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। নেতাকর্মীরা হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। বৃষ্টিতে ভিজে সমাবেশস্থলে অবস্থান করেন অনেক নেতাকর্মীরা। আড়াইটার দিকে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় সোয়া তিনটার দিকে। 

সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া সাদা পোশাকে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।