আওয়ামী লীগের ভোটের ‘ট্রাম্পকার্ড’ মেগা প্রকল্প

চলতি মেয়াদের শেষ সময়ে এসে একের পর এক মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেলসহ চট্টগ্রামের ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চট্টগ্রাম সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৪ নভেম্বর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন তিনি। ৯ নভেম্বর খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পসহ একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করতে খুলনা যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের মাঠে এসব প্রকল্প আওয়ামী লীগের ট্রাম্পকার্ড হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আওয়ামী লীগ নেতারাও বলছেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু উন্নয়ন করেছে তাই আওয়ামী লীগ অবশ্যই এসব প্রকল্পের কথা জনগণের কাছে বলবে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর দশ মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করে। পরে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে এগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম প্রকল্প পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্পসমূহের মধ্যে একটি পদ্মা সেতু। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ায় উন্নয়ন সহযোগীরাও এবার বাংলাদেশকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে শুরু করেছে। সরকারের নেওয়া বাকি ৯ মেগা প্রকল্পে সরকারের পাশাপাশি বিদেশি সহযোগীরা অর্থায়ন করছে। 

এই ৯ প্রকল্প হলো- খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প,  কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প, আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃদেশীয় রেল সংযোগ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল। 

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরসূচিতে উদ্বোধনী তালিকায় আছে- বঙ্গবন্ধু টানেল, চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স, জেলা পরিষদ টাওয়ার, রাঙ্গুনিয়া ও আনোয়ারা জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, রাউজানে শেখ কামাল কমপ্লেক্স, আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনিতে নয়টি বহুতল আবাসিক ভবন, বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও শিকলবাহা খালের ওপর পিসি গার্ডার ব্রিজ।

এর মধ্যে টানেলের কাজ প্রায় শতভাগ শেষ। টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে চীনের চায়না কমিউনিকেশনস, কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসিএল) লিমিটেড। 

এদিকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন তালিকায় আছে- চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর, বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সড়ক ও সিমেন্স হোস্টেল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ।

এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আর নাবিকদের জন্য করা সিমেন্স হোস্টেল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ১৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বাস্তবায়ন করা বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে আছে ডিসি পার্ক, হাজার বছরের নৌকা জাদুঘর, ১৯১টি ইউনিয়নে খেলার মাঠ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস, পর্যটক বাস, রিভার ক্রুজ ও ফুল ডে ট্যুর সংবলিত পর্যটন সেবা, বার্ডস পার্ক ও চিড়িয়াখানার আধুনিকীকরণ।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রামে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলসহ মোট ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাতটি প্রকল্প রয়েছে। অনেকগুলোর কাজই প্রায় শেষ হয়েছে। যেগুলো হয়নি সেগুলো আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //