বিদেশি দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনে বিএনপির চিঠি

বাংলাদেশে অবস্থাররত বিভিন্ন দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। চিঠিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনা থেকে শুরু করে চলমান হরতাল-অবরোধে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, বিস্ফোরণ এবং গুপ্তহত্যার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

বিএনপির একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার (২০ নভেম্বর) পাঠানো চিঠিতে এসব ঘটনার জন্য সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করে আন্তর্জাতিক তদন্তও দাবি করেছে দলটি। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, সারাদেশে ‘অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা’র ঘটনা ক্ষমতাসীনরাই ঘটাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজুড়ে ভীতির রাজত্ব কায়েমের অশুভ উদ্দেশ্যে প্রতিদিন নৈরাজ্যে লিপ্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতকারী কর্মীরা। তারা গণপরিবহনে অব্যাহতভাবে অগ্নিসংযোগ করছে আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। জ্বালাও-পোঁড়াও করে অপরাধীরা খুব সহজে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েছে। অথচ প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে অধিকাংশ ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে বা বড় পুলিশ চেকপোস্টের কাছাকাছি ঘটছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনা প্রতিরোধে কিংবা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইচ্ছাকৃত নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে, দেশজুড়ে চলমান নাশকতায় ক্ষমতাসীন অপশক্তি জড়িত। প্রকৃতপক্ষে আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ও তাদের আজ্ঞাবাহী পুলিশ সদস্যরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে চালক বা তাদের সহকারীদের বক্তব্যে স্পষ্ট, কীভাবে পুলিশ বা ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা তাদের বাসে আগুন দেয়ার জন্য দায়ী।

উদাহরণ হিসেবে চিঠিতে গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের চাতরি চৌমহনী বাজারে পুলিশ বক্সের কাছে, ৩১ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে, বাংলামোটর মোড়ে, ২৮ অক্টোবর কাকরাইলের কাছে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা এবং ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে একটি ট্রাকে আগুন দেয়ার ঘটনায় ফেনীর স্থানীয় যুবলীগ নেতা নুরুল উদ্দিন টিপুকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার ও ১৪ নভেম্বর নাটোরের তাশরীক জামান রিফাত নামে আওয়ামী লীগের কর্মীকে মুখোশসহ গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেয়ার ঘটনা তুলে ধরা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের সর্বত্র পুলিশ-র‍্যাবের শত শত পেট্রোল টিম এবং বিজেবির শত শত প্লাটুন অস্ত্রসজ্জিত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি পুলিশের সশস্ত্র পূর্ণাঙ্গ সুসংহত টহল রয়েছে।বাংলাদেশ যেন এক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও বিরোধী দলের সদস্য কোনো প্রকার সহিংসতা বা অগ্নিসংযোগের কাজে লিপ্ত হবে এই দাবি সর্বত্রই হাস্যকর। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল উপস্থিতির উদ্দেশ্য হয়তো আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তারা যেন নিশ্চিন্তে যানবাহনে আগুন দিতে পারে, জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপট তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের এসব কর্মকাণ্ড বারবার প্রমাণিত হয়েছে, বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এসেছে, সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে…রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বাসে আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতকারী নেতাকর্মীরা কীভাবে অগ্নিসংযোগে লিপ্ত হয়। ২০১৪ সালে ছাত্রলীগের ৩ জন সদস্যকে বাসে অগ্নিসংযোগের সময় হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের ২ সদস্য ককটেল ও পেট্রলবোমাসহ আটক হয়েছিল, ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় পেট্রোল বোমাসহ গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পর বাধ্য হয়ে পুলিশ ২ জন যুবলীগ কর্মীকে ছেড়ে দিয়েছিল।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালে বিরোধীদলের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ তার নিজস্ব বিহঙ্গ পরিবহনে পেট্রোল দিয়ে আগুন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যম মারফত জানা যায়। সেখানে আগুনে ১১ জনের মৃত্যুও হয়েছিল। ২০০৬ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগ ট্রেন এবং বাসে আগুন দিয়ে, পরিবহণ শ্রমিকদের উপর হামলা করে মানুষ হত্যা করেছিল। শেরাটনের সামনে গান পাউডার মেরে বাসে আগুন দেয়াসহ এমন অজস্র দৃষ্টান্ত আছে, যেখানে আওয়ামী লীগ তাদের বিদ্বেষপূর্ণ-বিভাজিত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সহিংসতাকে ব্যবহার করেছ। মানুষ হত্যা করে, জনগণের সহায়-সম্বল ধ্বংস করে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেই দায় বিরোধী দলের উপর চাপিয়ে, মিথ্যা মামলায় ভিন্ন দল ও মতের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাবার যে বীভৎস রাজনীতি, তা আওয়ামী লীগ লালন করে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //