নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনৈতিক সমঝোতার আজই শেষ দিন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেবার শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর)। ক্ষমতাসীন দল যখন জোর কদমে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন মনোনয়নপত্র জমা দেবার শেষ দিনে আজ হরতাল কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।

নির্বাচন কমিশন আজ মনোনয়নপত্র জমা দেবার সময় বৃদ্ধি না করলে বিএনপি নির্বাচনের বাইরে থাকবে। অনেকের মনে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে– বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে কিংবা বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য আজই কি শেষ দিন?

একাধিক নির্বাচন কমিশনার এরই মধ্যে বলেছেন যে- বিএনপি নির্বাচনে আসলে তফসিল পিছিয়ে দেবার বিষয়টি চিন্তা করা হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দলটির সিনিয়র নেতাদের অনেকেই কারাগারে। নির্বাচনের জন্য যে ধরণের প্রস্তুতি দরকার সেটি বিএনপির মধ্যে দৃশ্যমান নয়।

অতীতের নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সাধারণত ৪৫ দিন পর্যাপ্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবার তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের তারিখ পর্যন্ত আরো এক সপ্তাহ বেশি সময় রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদপূর্তির আগে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা আছে।

সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের তারিখ আরো দু-সপ্তাহ পিছিয়ে দিলে সংবিধানের কোন বরখেলাপ হবে না বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, নির্বাচন কমিশন চাইলে তফসিল ডিসেম্বরের ১২ তারিখ পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে পারে। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে মনোনয়নপত্র জমা দেবার সময় বাড়িয়ে কোন লাভ হবে কি না?

তিনি বলেন, বিএনপির অর্ধেকের বেশি নেতা-কর্মী কারাগারে। তাহলে কার সাথে সংলাপ হবে? তাহলে সমঝোতা করার জন্য আজই কি শেষ দিন? শাহদীন মালিক মনে করেন, বাস্তবতার নিরিখে সেটাই মনে হচ্ছে।

রাজনৈতিক সমঝোতার সময় যখন দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, তখন কূটনৈতিক তৎপরতাও থেমে নেই। ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এবং ইউরোপের আরো সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা বুধবার নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করেছেন।

বৈঠক শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বেশ পরিষ্কার করেই বলেছেন, তারা গণতান্ত্রিক, বিশ্বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করেন।

অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কারণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন আইনত এবং সাংবিধানিকভাবে বাধ্য।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখনো পর্যন্ত তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল পেছানো হবে কি না সেটি নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। কারণ, তারা নির্বাচনের তফসিল পেছানোর জন্য আন্দোলন করছেন না। তারা মনে করেন, নির্বাচনের তফসিল পেছালেই ‘রাজনৈতিক অচলাবস্থা’ দূর হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, তাদের দল আন্দোলন করছে এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যে, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্যে, মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যে এবং সর্বোপরি এদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে। এসব কিছু পরিবর্তন আনবার জন্যে যে প্রক্রিয়া অপরিহার্য তা হলো একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের জন্যে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন। কেবল মনোনয়ন জমা দেয়ার তারিখ পরিবর্তন করলেই তা অর্জিত হয়ে যাবে না।

এদিকে, বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময়সীমা আছে। সে সময়সীমা অতিক্রম করে তফসিল পরিবর্তন তারা কখনো সমর্থন করবেন না। এই সময়সীমাকে অতিক্রম করবে, এমন কোন পদক্ষেপ , এমন কোন পরিবর্তন আমরা কখনো সমর্থন করবো না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //