শরিকদের পাত্তা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছোট দলগুলো বেশ অসহায়। বিশেষ করে নির্বাচনী মাঠে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিএনপি তার সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এবার নির্বাচনে তাদের ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের কোনো ধরনের পাত্তা দিচ্ছে না আসন বণ্টন এবং নির্বাচন নিয়ে আলোচনায়। ফলে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে একটা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে তারা এখনো আশায় বুক বেঁধে মনোনয়নপত্র দাখিল করবে। যেহেতু জোটের নির্দেশেই ইসিতে জোটবদ্ধ নির্বাচনের কথা জানিয়েছেন তারা। দু-একটি আসন পাওয়ার জন্য তারা নিজেদের মার্কাকেও বিসর্জন দেয়, জোটের প্রধান দলের মার্কা বা প্রতীকে ভর করে আসন পেতে। কিন্তু এবার সে আশাও গুড়েবালি। 

শরিকদের কেউ কেউ বলছে, আগে তফসিল ঘোষণার পূর্বেই জোটের শরিকদের সঙ্গে প্রধান দল বসত। সেখানে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হতো। এবার প্রধান দলের সে ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই। তারা জোটের শরিকদের আমলে নিচ্ছে না। এর ফলে জোটের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

এদিকে জোটের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে না দেওয়া দুটি আসনের মধ্যে ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর একটি এবং অপরটিতে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) এ কে এম সেলিম ওসমান বর্তমান সংসদ সদস্য। অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিও (এরশাদ) অপেক্ষায় থেকে তাদের মতো করে তিনশ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ক্ষোভ জানিয়েছে ওয়ার্কার্স পাটিসহ বাকিরা। বর্তমান একাদশ সংসদে দেওয়া জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারার ৩১টি আসনেও নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি-জেপি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গণফোরাম জোটটি ত্যাগ করে। এ ছাড়া ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) ও নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নেতৃত্বাধীন তরিকত ফেডারেশন জোটে যোগ দেয়।

এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ২৮ নভেম্বর বলেছেন, আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে। জোটের ভিত্তিতেই নির্বাচনে অংশ নেবে। ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়। এ সময়ের মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের বিষয়ে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ নিয়ে হতাশ বা বিভ্রান্তির কিছু নেই। ১৪ দলীয় জোটে যারা আছে তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।

জোটের শরিক দলের কেউ কেউ বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যখন বলেন- শরিক সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আমাদের এখনো হয়নি। আমরা এখনো ঠিক করিনি শরিকদের আসলে আমাদের প্রয়োজন আছে কিনা- তখন তাদের সঙ্গে যেচে আমি বা আমরা কথা বলতে যাব না। আমরা নিজেদের মতো করে মনোনয়নপত্র তুলেছি। 

এদিকে, এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, জোটের সঙ্গী তাদের (আওয়ামী লীগ) লাগবে। আজ, কাল বা পরশু হোক লাগবে। জনগণের সঙ্গী যদি বলেন, জনগণের অগ্রবর্তী অংশ আমরা। সুতরাং সেই হিসেবে তাদের জোটের সঙ্গী লাগবে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়নি বলে জানান মেনন। আর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ থেকে সব আসনে মনোনয়ন দিলেও ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। ২০০৮ সালেও আমরা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছিলাম। তখনো কিন্তু প্রায় ৩০০ আসনে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। পরে মহাজোটের মধ্যে সমন্বয় করা হয়। গতবারও প্রায় সব আসনে নমিনেশন দিয়ে পরে জোটের সঙ্গে সমন্বয় হয়েছিল। এখনো ২৯৮ সিটে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। নমিনেশন দিলেও জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

শরিকের এক দলের শীর্ষ নেতা বলেছেন, জোটে ছিলাম। সেভাবে নির্বাচন হবে বলেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেছেন আমাদের। এখন দেখব তিনি কী করেন? নিজ থেকে এ ব্যাপারে কথা বলতে যাব না। শরিকদের একজন আমাকে বলেছেন, ‘আমি বলেছি যেচে কথা বলব না।’ 

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট ছোট দলের শক্তি, সামর্থ্য, জনপ্রিয়তা এবং গণভিত্তি একেবারে নেই বললেই চলে। শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। দুই বড় দলের সঙ্গে একটি বা দুটি আসন পাওয়ার আশায় জোট বাঁধে। অনেক রাজনৈতিক দল আছে শুধু এক নেতার নেতৃত্বে চলে। এখানে দলীয় নীতি বা আদর্শের চেয়ে শীর্ষ নেতার ব্যক্তিগত আদর্শ, নীতি এবং স্বার্থরক্ষার বিষয়টিই প্রাধান্য পায় বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই দলগুলো থেকে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সমর্থন ও প্রতীক ছাড়া এককভাবে কেউ নির্বাচিত হতে পারে না। এমনকি এদের সমর্থকের সংখ্যাও খুব বেশি থাকে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //