মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের আহ্বান বিএনপির

দেশবাসীকে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, “এই হরতাল এক দফা দাবি আদায়ের হরতাল। এই দাবি হচ্ছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ, এই দাবি হচ্ছে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। এই দাবি হচ্ছে অবৈধ তফসিল বাতিল, এই দাবি হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ, বিএনপি মহাসচিবসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর মুক্তি… এসব দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হরতাল হবে।”

আজ সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ সব কথা বলেন।

অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, “এই হরতাল সফল করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি, দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আমাদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এই হরতালে সাহসের সাথে রাজপথে বেরিয়ে এসে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করবেন। সকলের প্রতি আহ্বান আগামীকাল সর্বাত্মকভাবে হরতাল পালন করুন।”

রিজভী বলেন, “গতকাল একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন…সিট ভাগাভাগি……নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন কণ্টকমুক্ত করার জন্যই বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা হয়েছে। বিএনপিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তারা নির্বাচনে এলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে…. এমনকি একরাতে সব নেতাকে জেল থেকে মুক্তির প্রস্তাবও তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি রাজি হয়নি।”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, “এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে….আমরা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যের থেকে একটি কবিতা পড়তাম। আমাদের পাঠ্য কবিতার প্রথম লাইনটি ছিল…এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে। কিন্তু এখানে আমরা একটু পরিবর্তন করে বলতে চাই, এতক্ষণে ড. আব্দুর রাজ্জাক কহিলেন হরষে, অত্যন্ত আনন্দের সাথে। এই হরষের স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড করে পুলিশ তাণ্ডব-হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে চলমান যত সহিংসতা-মিথ্যা মামলা-গ্রেপ্তার-হুলিয়া-হত্যা-বিএনপিসহ বিরোধী দলের বাড়ি-ঘরে হামলা-তল্লাশি-ভাঙচুর-গৃহছাড়া-আটক-বাণিজ্য সব কিছু শেখ হাসিনার পূর্বপরিকল্পিত।”

রিজভী বলেন, “শেষ পর্যন্ত এই প্রভাবশালী মন্ত্রী হাটে হাঁড়ি ভেঙে স্বীকার করলেন যে, দেশের আইন-আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী-প্রশাসন, কোর্ট-কাছারি, বিচার-আচার সব কিছুই আওয়ামী মাফিয়া সরকারের হাতে বন্দি। বিচার ব্যবস্থা আর আওয়ামী লীগ একাকার হয়ে গেছে। পৃথক কোনো সত্তা নেই, দেশে কোনো আইন নেই… সব কিছু শেখ হাসিনার ইশারায় চলছে।”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লাখ মামলা দায়ের আর অর্ধ কোটি আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনার নির্দেশে। কারাগারে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে সরকারের ব্লুপ্রিন্টে। বিনা কারণে বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার, নির্বিচারে বিএনপিসহ আন্দোলনরত দলগুলোর নেতাকর্মীদের কারাগারে আটক ও নির্যাতন, ইচ্ছামাফিক জেল ও জামিন বিচার বিভাগের অস্তিত্বকেই বিলীন করে দিয়েছে।”

রিজভী বলেন, “বিচার বিভাগ আইনের গতিতে নয়, চলছে গণভবনের গতিতে, শেখ হাসিনার নির্দেশ মতো, তিনি এর মোমেন্টামটা ধরে রেখেছেন…গণভবন যে গতিতে যাবে, যেভাবে বলবে, বিচার বিভাগের গতি তাই থাকবে। অমুককে কারাদণ্ড দিন, অমুককে এতো বছরের জেল দিন…এগুলো সবই যেভাবে গণভবন থেকে যাচ্ছে…সেভাবেই হচ্ছে। গতকাল আবদুর রাজ্জাক তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নিজেই তা প্রমাণ করলেন…হ্যাঁ তারাই সব কিছু করে…। পরীক্ষিত আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে বেছে বেছে বিচার বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে গত ১৫ বছর ধরে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনের আওয়ামী নমুনা কৃষিমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট হয়েছে।”

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //