গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে। তুমুল গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এতে দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যায়। নতুন করে অন্তর্বতীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর এই সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তবে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পরদিন থেকে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিয়মিত ভিডিও বার্তায় নানা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এর মধ্যে আজ শনিবার (১০ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি।’
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হতে চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, ‘এই মেয়াদের পর আমার মা অবসর নিতে চেয়েছিলেন। দল যদি আমাকে চায়, হয়তো রাজি হব। বিষয়টি আমি অবশ্যই বিবেচনা করব।’
সজীব ওয়াজেদ আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। যদি তা না হয়, আমরা বিরোধী দল হব। দুটির যে কোনোটিই ভালো।’
ওয়াশিংটন থেকে রয়টার্সকে সজীব ওয়াজেদ আরও বলেন, ‘আমার মা আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই পদত্যাগ করেননি। তিনি সময় পাননি। তিনি একটি বক্তব্য দেওয়া ও পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করে। তাই সময় ছিল না। আমার মা নিজের ব্যাগ পর্যন্ত গোছাতে পারেননি। সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’
শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করতে চাননি বলে উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী দেশে শেখ হাসিনা বিচারের মুখোমুখি হতে রাজি ছিলেন। আটক করার হুমকি আমার মাকে কখনো বিচলিত করেনি। আমার মা কোনো ভুল করেননি। তার সরকারের কর্মকর্তাদের অবৈধ কাজের অর্থ এই নয় যে এসব করতে আমার মা নির্দেশ দিয়েছিলেন, এর অর্থ এই নয় যে এসবের জন্য আমার মা দায়ী।’
জয় আরও বলেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানান জয়। তিনি বলেন, তিন মাসের মধ্যে এই নির্বাচন হতে হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্যকে উৎসাহব্যঞ্জক বলেছেন জয়। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে অতীতকে না টানার কথা বলেছেন। এটা শুনে আমি খুব খুশি হয়েছি। আসুন, আমরা অতীতকে ভুলে যাই। প্রতিশোধের রাজনীতি পরিহার করি। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছি—তা (জাতীয়) ঐক্য সরকার হোক, বা অন্য কিছু হোক।’
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার মতো আমাদের শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে বলে উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে তিনি (জয়) বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক ছিলেন। সামনে এগিয়ে যেতে তিনি তাদের (বিএনপি) সঙ্গে কাজ করতে চান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতি ও সমঝোতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তর্ক করতে পারি। আমরা কোনো বিষয়ে অসম্মত হওয়ার বিষয়ে একমত হতে পারি। আমরা সব সময় সমঝোতার পথ খুঁজতে পারি।’
বিক্ষোভ চলার সময় মানুষকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য সরকারের মধ্যে কে দায়ী সে বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য না দিলেও জয় বলেন, ‘সরকার অনেক বড় কার্যক্রম। যারা দায়ী তাদের অবশ্য বিচারের আওতায় আনা হবে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা করতে আমার মা একেবারেই কাউকে কোনো নির্দেশ দেননি। পুলিশ সহিংসতা বন্ধ করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছিলেন।’
জয় আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার এবং আমি এসব আলোচনার অংশ হয়েছিলাম। আমি মাকে বলেছিলাম, আমাদের দ্রুত (আমাদের ছাত্র শাখাকে) হামলা না চালাতে, সহিংসতা বন্ধ করতে বলা দরকার। আমরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো পুলিশ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছি। আমাদের পক্ষে যা সম্ভব ছিল, আমরা সব করেছিলাম।’
যখন ইচ্ছা হবে তখন তিনি দেশে ফিরবেন বলে উল্লেখ করে রয়টার্সকে তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনো অবৈধ কিছু করিনি। সুতরাং (দেশে ফিরতে) কে কীভাবে আমাকে বাধা দেবে? রাজনৈতিক দলগুলো কোথাও যাচ্ছে না। কেউ আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। আমাদের সহায়তা ছাড়া, আমাদের সমর্থকদের ছাড়া কেউ বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারবে না।’
এর আগে গত বুধবার (৭ আগস্ট) ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার একদিন আগে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তবে তা তখন ঘোষণা করা হয়নি।’
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী সজীব ওয়াজেদ জয় পদত্যাগ
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh