গণঅভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ নিয়ে যা বললেন নাহিদ ইসলাম

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এই প্রতাবশালী স্বৈরাচারী সরকার পতনের মূল কারিগর ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আর এই সংগঠনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য মাহফুজ আলমকে বিশ্বমঞ্চে গণঅভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয় বিভিন্ন মাধ্যমে। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলছেন, কেউ কেউ হয়তো ভালোবাসার জায়গা থেকে বলছেন। কিন্তু তিনি (মাহফুজ) এবং আমরা (সমন্বয়করা) কেউই আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ শব্দটির সঙ্গে একমত নই।

নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সরাসরি সম্প্রচারিত ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ টকশোতে বিষয়টি স্পষ্ট করেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। যেখানে অতিথি হিসাবে আরও ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। উপস্থাপনা করেন ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খালেদ মুহিউদ্দীন।

যে আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, তাতে কোনো একক নেতৃত্ব ছিল না উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ একে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আন্দোলনটাকে কয়েকজন মিলে পরিচালনা করতে হয়েছে। নিতে হয়েছে নানাজনের বুদ্ধি-পরামর্শ। তবে আমরা একে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হিসেবেই দেখি।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের বাইরে গিয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। সেখানে গত এক দশকে একাধিকবার সরকার পতনের ডাক দিয়ে সফল হতে পারেনি বিএনপি। এ নিয়ে দলটির কোনো আত্মমূল্যায়ন আছে কী- খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চান একসময়ের ছাত্রদল প্রধান শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির কাছে।

জবাবে এ্যানি বলেন, আমরা এক সঙ্গে মিলেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিলাম। যুবকরা, ছাত্ররা নেতৃত্ব দেবে- এটিই স্বাভাবিক। একাত্তরে, নব্বইয়ে ছাত্ররাই ভূমিকা পালন করেছে। কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য আমরা আন্দোলন করিনি। তবে আমরা ত্যাগ স্বীকার করতে করতে পরিস্থিতি একটা জায়গায় নিয়ে এসেছিলাম। ছাত্ররা এই আন্দোলনে গতি বৃদ্ধি করেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা নেই। এখন কীভাবে দেশটিকে গড়ব, সেটিই আসল কথা।

এদিকে দেশ গড়ার বদলে বিএনপি নেতাকর্মীদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের জায়গায় দখলদারি শুরু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও আসছে। বিএনপি নেতাদের আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গী গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর সম্প্রতি একাধিক বক্তব্যে বিষয়টি সামনে এনেছেন। এ প্রসঙ্গে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা হচ্ছে, বিএনপির কেউ যদি চাঁদাবাজিতে যায়, প্রতিশোধ স্পৃহা নিয়ে কাউকে আঘাত করতে যায়- তাহলে পার্টি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এমন ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছে, মামলাও করা হয়েছে- দাবি করেন অ্যানি।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ও তথ্য উপদেষ্টা নাহিদকে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে চট্টগ্রামে একটি নালিশি মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে নিজের প্রভাব-বলয় বাড়াতে কেউ কেউ এমন মামলা করতেন। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি একই রকম থেকে যাচ্ছে কি-না শঙ্কার কথা বলেন, উপস্থাপক খালেদ। তবে আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, যিনি মামলা করেছেন, তাকে চিনিও না। আইন উপদেষ্টার সঙ্গে যোগ করেছি, এই মামলায় যেন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা না হয়, সেটি দেখতে অনুরোধ করেছি। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট আমরা সংশোধন করব। আমি এ মামলার বিরোধিতা করি।

বর্তমান অনুকূল সময় হলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসছেন না কেন, জানতে চাইলে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ টকশোতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, তিনি সেখান থেকেই মামলা মোকাবিলা করছেন। আইনি প্রক্রিয়ায় এগুলো সমাধান হলেই ফিরে দেশের জন্য নিজের ভূমিকা রাখবেন তারেক রহমান- বলছেন সাবেক ছাত্রদল সভাপতি অ্যানি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh