গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলে ৫৪ সদস্যের যে প্রথম কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে ১৫ জন নেতা আওয়ামী লীগ শাসনামলে দলটির ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগে সম্পৃক্ত ছিলেন।
সদ্য ঘোষিত কমিটি সভাপতি, সিনিয়র সভাপতি পদও পেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটির নেতারা।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গত ৫ আগস্টের আগে ছাত্রদলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল না। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন অনেকেই।
গত শুক্রবার রাতে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই আংশিক কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন।
কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কর্মীদের পদ পাওয়ার বিষয়ে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া আমিনুল বিদ্যুৎ সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “আমি কী বলব? আমার বলার মতো কিছু নেই। আমি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
একই প্রশ্নে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রিয়াজ বলেন, “গোপালগঞ্জ জেলা একটি আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকা। এখানে আওয়ামী লীগের আমলে কাজ করাই অসম্ভব ছিল। আর আমাদের কর্মীরা সবাই তো অর্থনৈতিকভাবে সামর্থ্যবান না। তাই তাদেরকে হলে থাকতে হয়েছে। তখন বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের মিছিলে যেতে হয়েছে।”
“এখানে প্রকাশ্যে কাজ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তারপরও অনেকেই চেষ্টা করেছে কাজ করার জন্য।"
সদস্যের ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভোট নেওয়ার সময় কেউ এমন অভিযোগ করেনি।
কে কোন পদ পেলেন?
কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন দুর্জয় শুভ, যিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিলেন।
এই পদ পাওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে দুর্জয়ের ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার বিভিন্ন ছবি প্রকাশ হয়েছে। একটি ছবিতে তাকে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মিছিলের প্রথম সারিতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে দুর্জয় শুভর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন না ধরায় সাম্প্রতিক দেশকাল তার বক্তব্য জানতে পারেনি।
সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে পদ পাওয়া মাহমুদুল হাসান রাকিবকেও এক ভিডিওতে ছাত্রলীগের ব্যানার ধরে মিছিলে দেখা গেছে। তিনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচির নিয়মিত মুখ ছিলেন।
তবে এখন ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করছেন রাকিব। তিনি বলেন, “আমি তো নতুন ছাত্রদল করি না। আমি আওয়ামী লীগের আমল থেকে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত আছি।"
“আমি যদি আসলে ছাত্রলীগ করতাম তাহলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোপালগঞ্জের মতো জায়গায় আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্রদল করতাম?”, পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।
সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া শাহরিয়ার গালিব ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে দল ও সরকারের পক্ষে নিয়মিত ফেসবুকে লেখালেখি করতেন। ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলেও তিনি ফেসবুকে পোস্ট করতেন।
ছাত্রদলের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়ান মো. ফারুক খন্দকারকেও ছাত্রলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে দেখা গেছে।
কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া শফিকুল ইসলামও ছাত্রলীগের মিছিল ও কর্মসূচির পরিচিত মুখ ছিলেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি আসিফ ইনান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া সফরে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটির দাবি নিয়ে তাদের সঙ্গে দেখাও করতে যান শফিকুল।
তবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে শফিকুল সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “সামাজিক মাধ্যম মিথ্যা লেখালেখি হচ্ছে।"
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া মো. শাহজাহানকে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাকেও নিয়মিত দেখা গেছে।
সহসভাপতি পদ পাওয়া জহিরুল ইসলাম জহির, শেখ মেহেদী হাসান সাকিব এবং আনোয়ার হোসেনও ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়া মো. সাইফুল্লাহ, মো. তৌফিক রহমান আকাশ, মো. সাব্বির আহম্মেদ শুভ, কৌশিক মো. রাজেল প্রামাণিক, সজীব ঘোষ, অপি সরকারও তাই ছিলেন।
ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা নাহিদুর রহমান সাকিব পেয়েছেন ছাত্রদলের কমিটির প্রচার সম্পাদকের পদ।
ছাত্রলীগ নেতা চন্দ্রনাথ মজুমদারের ডান হাত হিসেবে পরিচিত মো. জুয়েল হোসেনও এখন ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন মিছিল সমাবেশে অংশগ্রহণ করছেন, দেখা করেছেন ছাত্রদল ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ছাত্রলীগ ১৫ জনই ‘ছাত্রলীগ মাসুদ রানা রিয়াজ
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh