‘মিছিল বড় হচ্ছে আওয়ামী লীগের’, সতর্ক করলেন হাসনাত

সাত সকালে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের মিছিল এবং তাতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ দেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি নেতা সতর্ক করে বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত দলটির মিছিল বড় হচ্ছে।

সোমবার নিজের ফেসবুক পাতায় এক পোস্টে তিনি আওয়ামী লীগকে নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাগিদও দেন।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক লেখেন, যেদিন থেকে আমাদের আওয়ামীবিরোধী অবস্থান এবং ‘কম্প্রোমাইজের’ রাজনীতির বিরোধিতাকেও ‘শিষ্টাচারবহির্ভূত’ বলা শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই আওয়ামী লীগের মিছিল বড় হতে শুরু করেছে।

এদিন সকালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি মিছিল বের হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট তুমুল গণ-আন্দোলনে সরকার পতনের পর রাজধানীতে এই মিছিলটির মতো জমায়েত আর করতে পারেনি ক্ষমতাচ্যুত দলটির নেতা-কর্মীরা।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আয়োজনে মিছিলকারীদের ব্যানারে লেখা ছিল ‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে।’

বাড্ডায় আওয়ামী লীগের মিছিলের পর এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ সতর্ক করে ফেসবুকে পোস্ট দেন।

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে হাসনাত ফেসবুকে লেখেন, “যারা কম্প্রোমাইজের রাজনীতি করছেন, তাদের সতর্ক করছি—অতি শীঘ্রই আওয়ামী লীগ নিয়ে সিদ্ধান্তে আসুন। না হলে আপনারা করবেন কম্প্রোমাইজের রাজনীতি, আর আমি করব শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ। আমি শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ শুরু করলে নিতে পারবেন না। সাবধান হয়ে যান।”

এনসিপি আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, তার সরকারের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই।

সরকার প্রধানের এমন বক্তব্যের পর রোজার মধ্যে রাজধানীর শাহবাগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে টানা অবস্থান কর্মসূচিও পালন করা হয়েছিল, একই দাবিতে মিছিল-সমাবেশও হয়েছে।

এনসিপি সমাবেশ করে বলেছে, ‘শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে’ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরতে দেওয়া হবে না। তবে সরকার এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

এর মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি দেশের বিভিন্ন থানায় থানায় ‘জরুরি বার্তা’ পাঠিয়ে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সতর্ক করেছে।

সেই বার্তায় বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ‘সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে’ ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে কমপক্ষে ২০০/২৫০ জন তৃণমূল নেতাকর্মীদেরকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় আসার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে মর্মে গোপন সূত্রে জানা যায়।”

চিঠিতে একটি ছকের নমুনা দিয়ে সে অনুযায়ী ইউনিটের নাম, মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা, চেকপোস্টের সংখ্যা ও তল্লাশি মাধ্যমে আটক সন্দেহভাজন ব্যক্তির সংখ্যা উল্লেখ করে মন্তব্যসহ তথ্য সরবরাহ করতেও বলা হয়।

পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের (বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি) সহযোগিতা নিয়ে ঢাকামুখী কার্যক্রম প্রতিহত করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

সরকার পতনের দিন থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে আছেন। সেদিন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে উড়ে যাওয়ার পরপর ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের কার্যালয়ে হামলা ও লুটপাট চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণহানির ঘটনায় শত শত মামলায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা আসামি হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাতেও তাদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে, দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এর মধ্যে একদিন ফেসবুকের ঘোষণায় হরতালের ডাক দেয় দলটি, কিন্তু এর সমর্থনে নেতাকর্মীদের সক্রিয় দেখা যায়নি।

গত ২১ মার্চ সন্ধ্যায় ইফতারের পর রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় মিছিল করেছেন ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল। মিছিলটি নিয়ে মূল সড়ক প্রদক্ষিণ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় সেখান থেকে তিন জনকে আটক করে পুলিশ।

এরপর ৬ এপ্রিল গুলিস্তানে ঝটিকা মিছিল করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা রায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইট থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ করে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh