এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ আজ, আসামে উৎকণ্ঠা ও বিশেষ সতর্কতা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০১৯, ১০:৩১ এএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০১৯, ১১:২৮ এএম

এনআরসির ফরম হাতে আসামের নারীরা। ছবি: বিবিসি

এনআরসির ফরম হাতে আসামের নারীরা। ছবি: বিবিসি

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের প্রকৃত নাগরিকদের নামের তালিকা জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) আজ শনিবার প্রকাশিত হচ্ছে।  সকাল ১০টায় অনলাইনে প্রকাশিত হবে এটি।

আর সেদিকেই তাকিয়ে আসামের ৪১ লাখ মানুষ, যাঁদের নাম এনআরসির শেষ প্রকাশিত খসড়ায় নেই। এ নিয়ে পুরো রাজ্যে একদিকে যেমন সাজ সাজ ব্যস্ততা, অন্যদিকে তেমনই ঘনীভূত আশঙ্কা ও অশান্তির মেঘ।
তাই কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা রাজ্য। মোতায়েন করা হয়েছে ১০ হাজার আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই তালিকায় নাম না থাকলেই তিনি 'বিদেশি' বলে গণ্য হবেন না। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল, তারপর হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর সুযোগ থাকছে। আর তাই অকারণ আতঙ্ক বা গুজব ছড়ানো থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে আসাম প্রশাসন। 
কিন্তু তাতেও যে উত্তেজনার আশঙ্কা পুরোপুরি এড়ানো যাচ্ছে না, তা বুঝেই ২০ হাজার অতিরিক্ত আধাসামরিক বাহিনী আসামে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। গুয়াহাটিসহ একাধিক স্পর্শকাতর এলাকায় বড় কোনো জমায়েত রুখতে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। 
আশঙ্কা ১৪টি জেলা নিয়ে। রাজ্যের মোট ৩৩টি জেলার মধ্যে ১৪টিকে রাজ্য সরকার স্পর্শকাতর বলে ঘোষণা করেছে। মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দিসহ স্পর্শকাতর ১৪ জেলার ওপর বিশেষ নজর রেখেছে প্রশাসন। এনআরসি ঘিরে গোটা রাজ্যের পরিবেশ থমথমে। বিজেপি শাসিত এই রাজ্যের পুলিশ জানিয়েছে, এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর কোনো রকম প্রতিবাদ বরদাশত করা হবে না। 
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশ থেকে বেআইনিভাবে যারা আসমে ঢুকেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করতে ১৯৫১ সালের আসাম নাগরিক পঞ্জীকরণের পুনর্নবীকরণ করা হচ্ছে। গত বছর ৩০ জুলাই এনআরসির খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায়, ৪০ লাখ ৭০ হাজার আবেদনকারীর নাম বাদ গেছে। আর তা নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। অধিকাংশেরই দাবি, যথাযথ তথ্যপ্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও তাঁদের নাম বাদ গেছে। 
আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেছেন, 'কারও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সরকার সকলের কথা ভাববে। যাদের নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ যাবে, তাঁরাও নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ পাবেন। এনআরসিতে নাম না থাকলেই তিনি বিদেশি বলে গণ্য হবেন না। কাউকে বিদেশি ঘোষণার অধিকার একমাত্র ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রয়েছে। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কাউকে বিদেশি তকমা দিলেও তিনি উচ্চতর আদালতে যেতে পারবেন। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদনের সময়সীমা ইতোমধ্যেই ৬০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে। আশা করি, এনআরসির শান্তিপূর্ণ রূপায়ণে সকলে সহযোগিতা করবেন।'
তালিকায় নাম না থাকলে ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকছে ঠিকই, কিন্তু সেই আর্থিক সঙ্গতি কি সবার রয়েছে? 
সোনোয়ালের আশ্বাস, মামলা লড়তে গরিবদের আর্থিক সাহায্য করবে সরকার। 
কিন্তু স্থানীয়দের বক্তব্য, 'শুনানিতে হাজিরা দিতে গিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই সর্বস্বান্ত। এরপর ট্রাইব্যুনালে যেতে হলে জমি-বাড়ি বেচতে হবে।' এমন অবস্থা অনেকেরই। বড়ো সম্প্রদায় ও চা বাগানের আদিবাসী মানুষরা অবশ্য বলছেন, 'আমরা এই মাটির মানুষ। আমাদের নাম যদি এনআরসিতে না থাকে, কাদের নাম থাকবে?' 
আসামে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রণজিৎ দাস বলেছেন, এনআরসি কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা মাত্র দুই-তিনটা সংগঠনের সহযোগিতায় এনআরসি তালিকা তৈরি করছেন। এই পরিস্থিতিতে ত্রুটিহীন তালিকা তৈরি মুশকিল। 
কংগ্রেসের রাজ্য প্রধান রিপুন বোরার আবার অভিযোগ, বিজেপি সরকার সত্যিকারের ভারতীয় নাগরিকদের স্বার্থরক্ষায় আগ্রহী নয়। 
নাগরিকপঞ্জিতে নাম তোলার জন্য মোট আবেদন জমা পড়ে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৪। চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় স্থান হয় ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭ জনের। বাতিলের তালিকায় ঠাঁই হয় ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জনের। পরে বাদ দেওয়া হয় আরো ১ লাখ ২ হাজার ৪৬৫ জনকে। নাগরিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়া ৪১ লাখ ১০ হাজার ১৭২ জন নারী–পুরুষের অধিকাংশই হিন্দু ও মুসলমান বাঙালি। -এই সময়

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh