বাসস
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:২৪ এএম | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০১:৩৫ পিএম
গণভবনে জাতির পিতার ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যদি নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হয় তাহলে সত্যিকারভাবে তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করে তাঁর মতো ত্যাগী কর্মী হিসেবে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতির পিতার ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা জনগণকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন। আমাদের কথা কিন্তু বলেননি। বলেছেন বাংলার সাধারণ মানুষের কথা। কাজেই তিনি যাদের ভালবাসতেন তাঁদের কল্যাণ করা সন্তান হিসেবে আমি এটাকে দায়িত্ব বলে মনে করি। জাতির পিতা তাঁর সারাটি জীবন কষ্ট সহ্য করেছেন, এমনকি তাঁর জীবনটি পর্যন্ত মানুষের জন্য দিয়ে গেছেন।’
এ বিষয়টি মুজিব আদর্শের সৈনিক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী প্রত্যেকেরও দায়িত্ব বলে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আজকে আমাদের এটাই প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, জাতির পিতা এ দেশের মানুষের কল্যাণে তাঁর সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন সেই মানুষের কল্যাণে কতটুকু আমরা কাজ করতে পারলাম, সেই হিসেবটাই আমাদের করতে হবে। কতটুকু আমরা দিতে পারলাম-সেটাই হবে একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য সবচেয়ে বড় সার্থকতা।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ আমার বাবার হাতে গড়া। আমিও একদিন ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম। সেই ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। সেখান থেকেই আমার যাত্রা। কাজেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এইটুকুই বলব চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে আদর্শের সাথে নিজেকে গড়ে তুলবে। দেশের মানুষকে কিছু দিয়ে যাবে, যেন জাতির পিতার আত্মা শান্তি পায়।’
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের নিয়মিত প্রকাশনা ’মাতৃভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করেন এবং ছাত্রলীগের মাসিক পত্রিকা ’জয় বাংলা’রও মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে জাতিগঠনে ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে একটি তিন মিনিটের ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ১০টি বছরের মধ্যে আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। একাত্তরের পরাজিত শক্তির পদলেহনকারীরা ’৭৫ পরবর্তী সময়ে দেশের ক্ষমতায় ছিল বলে তারা দেশের কোনো উন্নয়ন না করে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল।’
বর্তমানে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মনোভাবের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশ নাম শুনলেই তাঁদেরকে অনেক কথা শোনানো হতো, আর আজকে বাংলাদেশের কথা শুনলে গর্বে তাঁদের বুক ভরে যায়। কারণ বাংলাদেশ উন্নয়নের একটা মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বলতে গেলে বাংলাদেশ আজ এক নম্বরে চলে এসেছে।’
দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়েই আজকের এই অর্জন এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন, ’৭৫-এর পর জাতির পিতার হত্যার প্রতিবাদকারী ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও অনেক সাথীদের আমরা হারিয়েছি। যে তালিকায় ছাত্রলীগের বহু নেতা-কর্মীর আত্মত্যাগ রয়েছে। আর বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনের ইতিহাসের সঙ্গে ছাত্রলীগের নাম জড়িত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এইটুকুই বলবো, সেই শোককে বুকে নিয়ে, সেই আদর্শকে বুকে নিয়ে, সব ব্যথা, বেদনাকে বুকে চেপে রেখে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নিজের জীবনে কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া রাখিনি। একটাই চাওয়া ছিল মানুষকে কি দিতে পারলাম, কতটুকু করতে পারলাম। যে জাতির জন্য আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন, এত কষ্ট করে গেছেন তাঁদের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি-সেটাই বিবেচনা করেছি। নিজে কি পাব না পাব বা ছেলে-মেয়ে কি পাবে না পাবে, সেই চিন্তা আমাদের ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রী কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, বাকশাল প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির পিতার প্রচেষ্টা তুলে ধরেও এর বিভিন্ন আঙ্গিকগত বিশ্লেষণ করেন।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত পেত। জাতির পিতা এই দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারতেন।’
শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাতীর পিতার আজন্ম লড়াই সংগ্রামের ইতিবৃত্ত আলোচনা করতে গিয়ে তাঁর মা ও বঙ্গবন্ধু সহধর্মিনী এবং সহযোদ্ধা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের ত্যাগ-তিতীক্ষার ইতিহাসও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জন্য স্মৃতিরোমন্থনে তুলে আনেন।