সাদেকের ছনের ঘর

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:২৯ এএম | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৪:০৯ পিএম

গাজীপুরের কালীগঞ্জে অবস্থিত বাঁশের তৈরি সাদেকের ছনের ঘর। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের কালীগঞ্জে অবস্থিত বাঁশের তৈরি সাদেকের ছনের ঘর। ছবি: সংগৃহীত

পরিবার ও আত্মীয় নিয়ে বেড়ানোর জন্য উপযুক্ত স্থান সাদেকের ছনের ঘর।  এটি শহরের খুব কাছে অবস্থিত। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পানজোড়া গ্রামে ছনের ঘর অবস্থিত। দিনে গিয়ে দিনে ঘুরে আসা আর খাওয়ার জন্য ‘ছনের ঘর’ হতে পারে আদর্শ স্থান। 

পানজোরা গ্রামেরই কৃষক, আব্দুস সামাদের ছেলে, মো. সাদেক মিয়া চলতি বছরের শুরুতে ৫ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন ছনের ঘর রেস্তোরাঁটি। কাঞ্চন-গাজীপুর বাইপাস থেকে কালীগঞ্জের দিকে এগোলেই পানজোড়ায় পেয়ে যাবেন ছনের ঘর। 

ছনের ঘর রেস্তোরায় বসার প্রতিটি ঘরে ব্যবহার করা হয়েছে ছনের ছাউনি। খাওয়ার টেবিল চেয়ারগুলো বানানো হয়েছে বাঁশ দিয়ে। গ্রামীণ ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে তৈজসপত্র হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে মাটির জিনিস। খাওয়া শেষ করে ছনের ঘরের ছাউনির নিচেই বাঁশের চেয়ার টেবিলে বসে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। মোটকথা গ্রামীণ আদলে ঘেরা ছনের ঘরে আপনি মাধুর্য ও সতেজতা খুঁজে পাবেন। 

ঢাকা থেকে সকালে বের হয়ে খেয়ে-দেয়ে সবুজ প্রকৃতি সাথে প্রেম নিবেদন আর গ্রামীণ স্বাদ উপভোগ করে বিকেল ৫-৬টার মধ্যে ফিরতে পারবেন ঢাকা শহরে। তবে ফেরার আগে ছনের ঘরে তৈরি এক কাপ লেবুপাতা আর লেবু চা খেয়ে নেবেন। কারণ এই চায়ের অসাধারণ স্বাদই আপনাকে পরের বার ছনের ঘরে যেতে আগ্রহী করবে।  

জানা যায়, ছোটবেলা থেকে সাদেক মিয়া ছিলেন খুব ডানপিটে। এসএসসির পর আর লেখাপড়া এগোয়নি তাঁর। ১৯৯৭ সালে চলে যান ভারতে। সেখানকার মুম্বাই শহরে গিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ নেন। বেশিদিন স্থায়ী হয়নি সেই চাকরি। পর্যায়ক্রমে বদল করেন ৪-৫টি রেস্টুরেন্ট। এভাবে কেটে যায় সাড়ে ৩ বছর। সাড়ে ৩ বছরে তিনি বুঝে যান রান্না আসলেই একটি শিল্প এবং তৃপ্তির বিষয়। তবে সেখানে রান্নার কাজে কিছুতেই তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না। ২০০০ সালের আগস্টে পারি জমান ওমানে। সেখানে চাকরি নেন শেরাটন হোটেলে। ৫ বছর শেখার পর ২০০৫ সালের মে মাসে চলে যান মিশরে। মিশরে শেখেন ১ বছর। সেখান থেকে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন। কিছুদিন দেশে অবস্থানের পর আবার চলে যান ওমানে। এবারও একটি ৫ তারকা হোটেলে কাজ নেন। সেখানে ৩ বছর অবস্থান করেন। পরে ওমানের নামিদামি কয়েকটি হোটেল ঘুরে অবস্থান নেন ওমান বিমানবন্দরের একটি ৫ তারকা হোটেলে। এত চাকরি বদল করেছেন শুধু শেখার জন্য।

মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ২৪ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসেন দেশে। দেশে এসেই রাজধানীর গুলশান-বারিধারার একটি নামকরা হোটেলে চাকরি নেন। সেই চাকরি ছেড়ে চলে আসেন গ্রামে। আর সেখানেই গড়ে তোলেন তার ছনের ঘর। 

সাদেক মিয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে রান্নায় হাত পাঁকিয়েছেন। দেশি, চাইনিজ, থাই, ইতালিয়ান, ফ্রেন্স ও ইন্ডিয়ান খাবার রান্না করতে পারেন। তাই ছনের ঘরে একবার যে অতিথি হয়েছেন, দ্বিতীয়বার তাকে আসতে হয়েছে শুধু রান্নার জাদুতে। এখানে প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন রান্না হয়। রান্নায় ব্যবহৃত সবকিছু স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। খাবারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে। প্রতিদিন সকাল ১০-১১টার মধ্যে খাবারের অর্ডার সম্পর্কে জানালে সে অনুযায়ী খাবারের আয়োজন করা হয়। তবে কয়েকজনের জন্য বাড়তি খাবারের ব্যবস্থা সবসময় থাকে। রাতে থাকার জন্য ছনের ঘরে কোন ব্যবস্থা নেই। তাই দিনে গিয় দিনেই ফিরতে হবে সেখান থেকে। 

যেভাবে যাবেন

ঢাকার কুড়িল-বিশ্বরোড থেকে ৩শ ফিট রাস্তার শেষ মাথায় পাবেন কাঞ্চন ব্রিজ। আর বাঁয়ে কাঞ্চন-গাজীপুর বাইপাস সড়ক। ওই সড়ক দিয়ে একটু এগোলেই কালীগঞ্জ শহরে যেতে পানজোড়া গ্রামে পেয়ে যাবেন ছনের ঘর। আবার উত্তরা-টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর থেকে বালু নদীর উপর দিয়ে তেরমুখ ব্রিজ হয়েও যাওয়া যায় ছনের ঘরে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh