এডিসের লার্ভা নিধনে নতুন কৌশল রাবি অধ্যাপকের

প্রতিনিধি, রাবি

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:১৭ পিএম | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:১৮ পিএম

এডিসের লার্ভা নিধনে নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছেন রাবি অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

এডিসের লার্ভা নিধনে নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছেন রাবি অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম। এ পদ্ধতিতে ড্রেনের পানির মধ্যে খাঁচায় আটকে রাখলে ক্ষুধার্ত তেলাপিয়া মাছ লার্ভা পেলেই খাবে। 

লার্ভা নিধনে নিজের পদ্ধতির বিষয়ে অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তেলাপিয়া মাছ খাঁচায় বন্দী রেখে ড্রেনের পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়, যাতে তেলাপিয়া মাছকে কোনো সাপ, ব্যাঙে না খেয়ে ফেলতে পারে। এছাড়া মাছকে কম খাবার দিতে হবে, যাতে মাছ ক্ষুধার্ত থাকে ও মশার লার্ভা খেয়ে ফেলতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী এই ফাঁদ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সারানো যাবে। 

তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে যুগে যুগে ভয়াবহ রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাবের ঘটনা পৃথিবীতে একাধিকবার ঘটেছে। বাংলাদেশে ইদানিং যে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ অবস্থা বিরাজমান, আমার মতে এ দেশে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বা এর হুমকির মুখে পরাটাই তার অন্যতম কারণ। কয়েক বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে শহরের ড্রেন, ডোবা যখন পানিতে ভরে যেত, তখন সেই পানিতে ছোটবড় অনেক ধরণের মাছের বিচরণ ছিল লক্ষণীয়। মশার ডিম ফুটে বেরোনো লার্ভা ছোট মাছের অত্যন্ত প্রিয় একটি খাবার।’

গবেষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নাইলোটিকা জাতীয় মাছ তো মশার লার্ভা পেলে অন্য খাবারের ধারে-কাছেই যেতে চায় না। অন্যদিকে শহরের ড্রেন, ডোবা, কনস্ট্রাকশন সাইটের ইট ভেজানোর চৌবাচ্চা হচ্ছে সকল প্রকার মশার জন্য নিরাপদ ও উন্নতমানের প্রসব কক্ষের মতো। যেহেতু বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে ছুটে চলেছে, কাজেই চৌবাচ্চায় ইট ভেজানোর কাজ বন্ধ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তবে কীটনাশক দিয়ে চৌবাচ্চার পানি, ড্রেনের পানি থেকে মশার ডিমকে ধ্বংস করা যায়। তবে কীটনাশক অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করলে ড্রেন, ডোবার মাঝে বেঁচে থাকা পরিবেশবান্ধব অন্যান্য কীটপতঙ্গ ও ছোটমাছও একই সঙ্গে মারা যাবার সম্ভবনা আছে, যা প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে অধিকতর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রকৃতি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠলে আমরা আবার নুতন ধরণের কোনো মহামারী রোগে আক্রান্ত হতে পারি। বুদ্ধিমানের কাজ হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ঠিক রেখে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণের দিকে মনোনিবেশ করা।

তাঁর পর্যবেক্ষণ মতে, যেহেতু নাইলোটিকা জাতীয় মাছ মশার লার্ভা খেয়ে ফেলার খুব চমৎকার ক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং এই জাতীয় মাছকে এডিস মশাসহ সকল জাতীয় মশার লার্ভা নিধনে শিকারি মাছ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যায়ে একটা প্রকল্পে এই বিষয় নিয়ে গবেষণা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ড্রেনের মধ্যে থাকা মশার লার্ভা খেয়ে ফেলছে নাইলোটিকা জাতীয় মাছ। এভাবেই খাঁচায় আটকে রেখে মশার লার্ভা ধ্বংস করা সম্ভব। লার্ভা শিকারের জন্য নাইলোটিকা মাছকে খাঁচার ভিতরে আটকে রাখার বেনিফিটস একাধিক। প্রথমত অন্যান্য রাক্ষস জাতীয় মাছের হাত থেকে নাইলোটিকা মাছকে রক্ষা করা; দ্বিতীয়ত, লার্ভা শিকারে অধিকতর দক্ষ হয়ে উঠা এই নাইলোটিকা মাছকে প্রয়োজনে এক ড্রেন থেকে অন্য ড্রেনে স্থানান্তর করে সীমিত সময়ে অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখা যায়।

আনোয়ারুল ইসলাম মনে করেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখন ইমারত নির্মাণের কাজ চলছে। ইট ভেজানোর জন্য যে চৌবাচ্চা করা হয়, সেগুলো হতে পারে এডিস মশা বংশ বিস্তারের অন্যতম জায়গা। তবে এর সমাধান আছে। আমি দেখেছি নাইলোটিকা বা এরকমের কোনো মাছ মশার লার্ভা খেয়ে ফেলার খুব চমৎকার ক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং এসব চৌবাচ্চা মাছ চাষের জন্য ব্যবহার করলে এডিস মশার বংশবিস্তার অনেকাংশে লাঘব হবে। আর এডিস মশা যে শুধুমাত্র পরিষ্কার পানিতে জন্মায় এ ধারনাও সত্য নয়। ড্রেনের বা খালের আবদ্ধ নোংরা পানিতেও এ মশা জন্মাতে সক্ষম। তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বাড়ির আশেপাশের নোংরা পানিও মশামুক্ত রাখতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের পরামর্শে ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার সহায়তায় গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া মসজিদের সামনের ড্রেনে এ্যান-ওয়্যার লার্ভাসিডাল ট্রেপ নামক নতুন পদ্ধতির লার্ভা নিধন ফাঁদ স্থাপন করা হয়। 

এই পদ্ধতি ব্যবহার সম্পর্কে উপ-উপাচার্য জাকারিয়া বলেন, দেশের শহরগুলোতে দিন দিন যে হারে ড্রেনে ময়লা আর্বজনা ফেলা হচ্ছে তাতে এডিস মশার লার্ভা বেড়েই চলেছে। এই নতুন পদ্ধতি শহরের ড্রেনে ব্যবহারের ফলে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি কমিয়ে আনা সম্ভব। 

এই সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর, রবিউল ইসলাম রবি, শাহ মখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ ড.আরিফুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh