ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:২২ এএম | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ১১:১২ এএম
গুলিয়াখালী সৈকতের নয়নাভিরাম রূপ।
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় অবস্থিত গুলিযাখালী সমুদ্রসৈকত। স্থানীয় মানুষের কাছে এই সৈকত ‘মুরাদপুর বিচ’ নামে পরিচিত। সীতাকুন্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালী সৈকতের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার।
প্রকৃতি ও গঠনগত দিক থেকে এটি অন্যান্য সমুদ্রসৈকত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অনিন্দ্য সুন্দর গুলিয়াখালী সৈকতকে সাজাতে প্রকৃতি যেন কোনো কার্পণ্য করেনি! একদিকে দিগন্তজোড়া সাগর জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন এ সৈকতকে করেছে অনন্য। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল লক্ষ্য করা যায়। এ বন সমুদ্রের অনেকটা ভেতর পর্যন্ত চলে গেছে। এর পরিবেশ সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মতো।
গুলিয়াখালী সৈকতকে ভিন্নতা দিয়েছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর নিশ্চিতভাবেই আপনার চোখ জুড়াবে। সৈকতের পাশে সবুজ ঘাসের এই মাঠে প্রাকৃতিকভাবেই জেগে উঠেছে আঁকাবাঁকা নালা। এসব নালায় জোয়ারের সময় পানি ভরে উঠে। চারপাশে সবুজ ঘাস আর তারই মধ্যে ছোট ছোট নালা সাগরের পানিতে পূর্ণ- এই দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। পাখি, ঢেউ আর বাতাসের মিতালীর অনন্য অবস্থান দেখা যায় এই সমুদ্রসৈকতে।
অল্প পরিচিত এই সৈকতে মানুষজনের আনাগোনা কম। সাগরের এত ঢেউ বা গর্জন না থাকলেও, এই নিরবিলি পরিবেশের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত আপনার কাছে ধরা দেবে ভিন্নভাবেই। চাইলে জেলেদের বোটে সমুদ্রে ঘুরে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে বোট ঠিক করতে দরদাম করে করে নিতে হবে, ২০০০ টাকা লাগতে পারে। সৈকতে অনেক সুন্দর প্রাকৃতিক মাঠ আছে, সঙ্গে ফুটবল নিলে টার্ফের অনুভূতি পাওয়া যাবে। ক্যাম্পিং করতে তাঁবু নিয়ে গেলে সৈকতের কাছেই থাকতে পারবেন।
সীতাকুন্ডের খুব কাছে হওয়ায়, গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ঘোরার পর হাতে সময় থাকলে আশপাশের আরও অনেক দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন। গুলিয়াখালীর আশপাশে ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্যে আছে- বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, সীতাকু- ইকোপার্ক, চন্দ্রনাথ মন্দির ও পাহাড়, ঝরঝরি ঝরনা, কমলদহ ঝরনা, কুমিরা সন্দীপ ঘাট, মহামায়া লেক, খৈয়াছড়া ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা, সহ¯্রধারা ঝরনা ইত্যাদি। আপনার সময় ও কি দেখার ইচ্ছে, সে অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা।
কিভাবে যাবেন
যেহেতু এ সৈকত সীতাকুন্ডে, তাই দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে আসতে হবে সীতাকুন্ডে। বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ডে আসতে পারবেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোনো বাসে করেই যেতে পারবেন সীতাকুন্ডে। এসি ও নন-এসি এসব বাসের ভাড়া ৪২০-১০০০ টাকা। প্রয়োজন হলে বাসের সুপারভাইজারকে আগেই বলে রাখবেন সীতাকু-ে নামিয়ে দিতে।
ঢাকা থেকে সীতাকু- মেইল ট্রেনে করে জনপ্রতি ১২০ টাকা ভাড়ায় সীতাকুন্ডে আসতে পারেন। ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে করে ফেনী যেতে পারবেন, শ্রেণি ভেদে ভাড়া ২৬৫-৮০০ টাকা। ফেনী থেকে লোকাল বাসে করে সীতাকুন্ডেযেতে পারেন, ৫০ থেকে ৭০ টাকা ভাড়া লাগবে।
চট্টগ্রামের অলঙ্কার মোড়, এ কে খান মোড়, কদমতলী থেকে সীতাকু- যাওয়ার বাস ও মেক্সি পাওয়া যায়। পছন্দ মতো জায়গা থেকে চলে আসতে পারবেন সীতাকু- বাজারে। সীতাকু-ের বাসস্ট্যান্ড ব্রিজের নিচ থেকে সরাসরি সিএনজি/অটো নিয়ে গুলিয়াখালী সৈকতের বাঁধ পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন, ভাড়া ৩০ টাকা। রিজার্ভ ভাড়া নিবে ১৫০-৩০০ টাকা। দরদাম করে নিতে হবে। সীতাকু- থেকে ফিরে আসার জন্য আগেই সিএনজি চালকের নম্বর নিয়ে রাখতে পারেন। অথবা যাওয়া আসাসহ রিজার্ভ করে নিতে পারেন। সন্ধ্যা হয়ে গেলে অনেক সময় ফিরে আসার সময় সিএনজি/অটো পাওয়া যায় না।
কোথায় থাকবেন
গুলিয়াখালী সৈকতে থাকা ও খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধু ছোট একটি দোকান আছে। তাই প্রয়োজনে সীতাকুন্ড বাজার থেকে সঙ্গে করে খাবার নিয়ে নিন। থাকতে চাইলে সীতাকু- বাজারে সাইমুন ও সৌদিয়া হোটেলে থাকতে পারবেন। সাইমুনে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় রুম পাবেন আর সৌদিয়ায় রুম পেতে আপনাকে গুনতে হবে ৬০০ থেকে ১৬০০ টাকা। আরও ভালো কোথাও থাকতে চাইলে আপনাকে চলে যেতে হবে চট্টগ্রামে।