হাসান আল জায়েদ
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:৪৬ পিএম
তথ্য-প্রযুক্তি বা ইনফরমেশন টেকনোলজিতে (আইটি) চাকরির সুযোগ বর্তমানে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে একাডেমিক যোগ্যতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কাজে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। আইটি পেশায় আসতে চাইলে কীভাবে তৈরি হবেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী দেখা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছেন হাসান আল জায়েদ।
এখন শুধু আইটিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানেই নয়, নন-আইটিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানেও আইটি অভিজ্ঞদের চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কারণ প্রায় প্রতিটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা এখন আইটিনির্ভর। তাই বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই থাকছে ‘আইটি বিভাগ’। আইটি সেক্টরে কাজের ক্ষেত্র বহুমুখী, যেমন : হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্কিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ডাটা বেইস ম্যানেজমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, অ্যানিমেশন, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদি।
কাজের সুযোগ
তথ্য-প্রযুক্তিতে ডিপ্লোমা কিংবা স্নাতক শেষ করার পর শুরুতে হেল্প ডেস্ক টেকনিশিয়ান হিসেবে চাকরির সুযোগ থাকে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবেও প্রাথমিকভাবে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর বড়সংখ্যক নিয়োগ হয় ‘সিস্টেম অ্যানালিস্ট’ পদে। আইটি সিকিউরিটি বা সাইবার সিকিউরিটি হিসেবেও কাজের সুযোগ আছে করপোরেট অফিসগুলোতে। এ ছাড়া নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, ডাটা বেইস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, আইটি কনসালট্যান্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজার, ক্লাউড আর্কিটেক্ট, কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্সসহ বিভিন্ন পদে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয় দেশের প্রথম সারির আইটি প্রতিষ্ঠান টগি সার্ভিসেসের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আবু তৈয়ব বলেন, আইটি সেক্টরে কাজ মানেই শুধু আইটিনির্ভর প্রতিষ্ঠানে কাজ করা বুঝায় না, বর্তমানে ব্যাংক, করপোরেট হাউস, গণমাধ্যমসহ প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই আইটি সেক্টরে কাজের সুযোগ রয়েছে। একটা সময় হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংকে অনেক বড় কিছু মনে করা হতো। এখন হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ‘টেকনিশিয়ান’ লেভেলের চাকরিতে রূপান্তরিত হয়েছে। আর হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জায়গাটি দখল করে নিয়েছে ‘নেটওয়ার্কিং’। নেটওয়ার্কিংয়ের মধ্যেও ভাগ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ফিজিক্যাল নেটওয়ার্কিং। এটি মূলত কেবল বা ওয়াই-ফাই দিয়ে তৈরি করা হয়। প্রতিটি অফিসেই নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারের কদর রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সময়ে ‘নেটওয়ার্কিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’, ‘নেটওয়ার্কিং সিকিউরিটি’ বেশ চাহিদাসম্পন্ন চাকরি।
ড্রিম টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের (ডিটিআই) পরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মোবাইল সেট কম্পানি মোবাইল উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। এসব কম্পানিতে আইটি এক্সপার্টদের জন্য নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে।
বিজিনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান টাসকিয়েটরের সিনিয়র ডাটা অ্যানালিস্ট সাজোয়ার হোসেন বলেন, দিনকে দিন আইটি খাতের পরিসর বড় হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে, কাজের দক্ষতা না থাকা। তাই এ পেশায় আসার আগে নিজেকে দক্ষতা ও উপযুক্ত হিসেবে তৈরি করে নিতে হবে।
কেমন যোগ্যতা থাকা চাই
কম্পিউটার সায়েন্স কিংবা আইটির ওপর ডিপ্লোমা কিংবা স্নাতক ডিগ্রি থাকার পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের ওপর ভেন্ডর সার্টিফিকেশন থাকলে ভালো হয়। সবচেয়ে বড় কথা বাস্তব বা ব্যাবহারিক কাজে দক্ষ হতে হবে। প্রতিনিয়তই তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন বা পরিবর্তন হচ্ছে, তাই প্রার্থীকেও সেসব বিষয়ে আপডেট ও জানাশোনা থাকতে হবে। সব ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের ওপর ধারণা থাকতে হবে।
আইটি সেক্টরে প্রার্থীর একাডেমিক ডিগ্রির চেয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে বেশি কদর করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর নিজের কোনো প্রজেক্ট থাকলে চাকরি পাওয়াটা সহজ হবে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরিপ পরিচালনা করা, বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মানসিকতা, সফটওয়্যার তৈরির ধারণা, সিস্টেম অ্যানালিস্ট করার যোগ্যতা থাকা জরুরি। ডাটা বেইসের খুঁটিনাটি, এসকিউএল ও তথ্য জমা করার পদ্ধতিও জানতে হবে।
সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ইঞ্জিনিয়ার পদে কাজ করতে হলে ব্যাক-অ্যান্ড, ফ্রন্ট-অ্যান্ড, ডেভঅপ্স, সিস্টেম অ্যাডমিন ও কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্সের ওপর ধারণা থাকতে হবে; প্রোগ্রামিং স্কিল বাড়াতে হবে।
যেভাবে নিয়োগ
একেক প্রতিষ্ঠান একেকভাবে কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। ব্যাংক বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইটি সেক্টরে লোকবল নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে আইটি ফার্ম ও করপোরেট হাউসগুলোতে সাধারণত মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হয়।
আইটি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীদের কমিউনিকেশন স্কিলটা পরখ করে দেখা হয়। একজন ফ্রেশার যখন চাকরির জন্য আসে, আমরা ধরেই নিই সে যা শিখে আসছে তার নব্বই ভাগই আমাদের কাজে লাগবে না। তাকে নতুনভাবে শেখাতে হবে। এটাই বাস্তব। তাই মৌখিক পরীক্ষায় একজন প্রার্থীর মধ্যে শেখার আগ্রহ আছে কি না সেটা খোঁজার চেষ্টা করি আমরা।
কেমন বেতন
এ খাতে বেতন ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে একজন ফ্রেশার বা এন্ট্রি লেভেলে মাসিক বেতন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো হতে পারে। এক-দুই বছরের অভিজ্ঞদের জন্য মাসিক ৫৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তিন-পাঁচ বছরের অভিজ্ঞদের মাসিক বেতন এক লাখ টাকার ওপরে হতে পারে। ৮-১০ বছরের অভিজ্ঞদের প্রতিষ্ঠানভেদে মাসিক বেতন দুই লাখ টাকা হতে পারে।