ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৬ এএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৪১ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসন করতে যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে অভিশংসন তদন্তকারী প্যানেল।
মার্কিন কংগ্রেসের আইনপ্রণেতাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে প্রেসিডেন্ট তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ইউক্রেনের কাছ থেকে বিদেশি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
হাউস পারমানেন্ট সিলেক্ট কমিটি অন ইনটেলিজেন্স গত মঙ্গলবার ‘ট্রাম্প-ইউক্রেন ইমপিচমেন্ট ইনকোয়ারি রিপোর্ট’ প্রকাশ করে। ট্রাম্পকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করার লক্ষ্যে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
তবে অন্যায় কোনো কিছু করার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে ট্রাম্প এই তদন্তকে 'উইচ-হান্ট' বা কাউকে জোর করে দোষী বানানোর চেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন।
এই খসড়া প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন এই তদন্তকে 'অত্যন্ত দেশপ্রেমহীন' বলেও আক্রমণ করেছেন।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি স্টেফানি গ্রিশাম বলেছেন, ডেমোক্র্যাটরা অন্যায়ের কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং এই প্রতিবেদনে তাদের হতাশার কথা ছাড়া আর কিছু নেই।
৩০০ পৃষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিবেদনটি এখন কংগ্রেসের বিচার বিভাগীয় কমিটিতে যাবে। গতকাল বুধবার সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে, ট্রাম্পকে অপসারণ করার জন্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হবে কিনা।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এতে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসিত হওয়া প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করা যাবে না। কারণ অভিশংসনের পর প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করার ক্ষমতা সিনেটের হাতে। কিন্তু বর্তমানে সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ২৫ জুলাই টেলিফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। এ সময় আগামী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট মনোনয়নপ্রত্যাশী জো বাইডেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য তার ছেলে হান্টার বাইডেনের অতীত ব্যবসার ব্যাপারে তদন্তের জন্য জেলেনস্কিকে চাপ দেন ট্রাম্প। বিনিময়ে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা তহবিল অনুমোদন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
ট্রাম্প-ইউক্রেন ইমপিচমেন্ট তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, ২০২০ সালের নির্বাচনে তার পক্ষে বিদেশি সহায়তা পাওয়ার জন্য কয়েকমাস ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দপ্তরকে ব্যবহার করেছেন। ইউক্রেনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ধ্বংস করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রেসিডেন্ট পদে পুন-নির্বাচনের প্রচারণায় সহায়ক হতো, এমন দুইটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত তদন্তের স্বার্থে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি করেছেন।
এতে আরো বলা হয়, প্রেসিডেন্ট দাবি করেছিলেন, নতুন নির্বাচিত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদামির জেলেনস্কি প্রকাশে তার (ডোনাল্ড ট্রাম্পের) রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করার ঘোষণা করবেন। সেই সঙ্গে লজ্জাজনক একটি বার্তা দেয়া হবে যে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়া নয়, ইউক্রেন হস্তক্ষেপ করেছিল।
ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গত ২৪ সেপ্টেম্বর অভিশংসন তদন্ত শুরু করে প্রতিনিধি পরিষদ। এ নিয়ে তদন্ত করছে প্রতিনিধি পরিষদের তিনটি কমিটি।
তদন্তের অংশ হিসেবে প্রথমে রুদ্ধদ্বার সাক্ষ্য নেয়া হয়। পরে সাক্ষীদের প্রকাশ্যে শুনানি হয়। -বিবিসি